শিক্ষার্থীদের মাঝেই বাঁচতে চান শিক্ষাবিদ রাবেয়া খাতুন বিনা

প্রকাশিত: ৪:২২ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২২

জেলা প্রতিনিধি/আরিফ আহমেদঃঃ

একজন শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন জন্মসূত্রে ফরিদপুর জেলার বাসিন্দা রাবেয়া খাতুন বিনা। পুলিশ বাবার চাকুরীর সুবাদ প্রথমে বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের স্কুলে পরে বরিশাল বিএম কলেজে পড়াশুনা তার। কর্মজীবনের শুরুটাও এখানেই। বরিশাল দিয়ে শুরু এবং বরিশাল দিয়েই শিক্ষকতা পেশার অবসান হয় তার। তাই বলে কিন্তু তিনি মোটেই থেমে য়াননি। চাকুরী জীবন থেকে অবসর হয়ে তার কাজের পরিধি ও ব্যস্ততা আরো বেড়েছে বলে জানান তিনি।

 

রাবেয়া খাতুন বিনা বলেন, আমাদের মূলবাড়ি বা বাবার বাড়ি কিন্তু বিক্রমপুরে।আমার বাবা প্রয়াত আজিজুল হক পুলিশের চাকুরীর কারণে বিভিন্ন জেলায় ঘুরে বেড়াতে হতো। ফলে আমার জন্মের সময় মা মাজেদা খাতুন নানাবাড়ি ফরিদপুরে ছিলেন। এরপর বাবা বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জে বদলী হয়ে আসলে আমরাও চলে আছি সাথে। কলেজে পড়ার সময়ই আমার বিয়ে হয় বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার আব্দুল গফুর এর সাথে। তিনিও শিক্ষক ছিলেন। ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও রাজনীতিবিদ। ২০০২ সালে তিনি পরলোকগমন করেন।

 

নিঃসন্তান রাবেয়া খাতুন বিনার কাছে তার শিক্ষার্থীরা সবাই সন্তান। যে কারণে তিনি বলেন, ওরাইতো আমার সবকিছু। ওদের ভালো শিক্ষা দিতে পারার আনন্দ নিয়েই বাকীটা জীবন কেটে যাবে আমার। অবসরে আসার পর ব্যস্ততা আরো বেড়েছে। দূর্নীতি দমন কমিশন, গার্লস গাইড এসোসিয়েশন এগুলোর নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয় আমাকে।

 

সেই যে ১৯৬৫ সালে ময়মনসিংহ টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে বিএড পাস করেই বরিশাল সদর‌ গার্লস স্কুলে শিক্ষকতা পেশায় যোগ দেন। এরপর এই পেশাকে ঘীরেই আটকে যান বরিশালে। ১৯৭৬ সালে নীলফামারী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদোন্নতি পান তিনি। একই বছর মাদারীপুর ডনোভান স্কুলে এবং ১৯৮১ তে বরিশাল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব গ্রহণ করে বরিশালে ফিরে আসেন তিনি। সদাহাস্যময়ী এবং ছাত্রীদের অত্যন্ত প্রীয় শিক্ষক রাবেয়া খাতুন ১৯৯৪ সালে বরিশাল বিভাগের স্কুল পরিদর্শক এবং ১৯৯৯ এ বরিশাল শিক্ষা বিভাগীয় উপ-পরিচালকের পদে বহাল ছিলেন। ১৯৯৯ এর ৫ সেপ্টেম্বর রাবেয়া খাতুন অবসরে যান।

 

একনজরে রাবেয়া খাতুন:-

গবেষক ও কবি অধ্যাপক ফয়জুল নাহার শেলী সংগ্রহীত তথ্য ঘেটে জানা যায়, বরিশালের পুত্রবধূ বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সমাজসেবী রাবেয়া খাতুন ১৯৪২ সালের ৬ সেপ্টেম্বর পিতার কর্মস্থল ফরিদপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মাতার নাম আজিজুল হক ও মাজিদা বেগম। মুন্সীগঞ্জ জেলার টঙ্গীবাড়ী থানা সোনারঙ গ্রামে পৈতৃক বাড়ি হলেও তার কর্মময় জীবন বরিশালে কেটেছে।

 

ফরিদপুর হালিমা খাতুন জুনিয়র মাদ্রাসায় প্রাথমিক পাঠ শুরু হলেও মেহেন্দিগঞ্জের হাইস্কুল থেকে তাঁর শিক্ষা জীবনের শুরু। ৭ম থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত মেহেন্দিগঞ্জেই তার পড়াশুনা এবং ১৯৫৭ সালে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ম্যাট্রিক পাস করে বরিশাল ব্রজমোহন কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট ও স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ছাত্রজীবনে অর্থাৎ ১৯৫৭ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত তিনি ছাত্র ইউনিয়নের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন সামাজিক ও জনকল্যাণমূলক কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন এবং এখনও রয়েছেন।

 

উল্লেখ্য, রাবেয়া খাতুন বাবুগঞ্জ উপজেলার সায়র( কুলচর) গ্রামের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ, মুক্তিযোদ্ধা এম আবদুল গফুরের সহধর্মিণী। স্বামী মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার অপরাধে পাকসেনারা তাকে স্কুল থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে তার স্বামী সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দিলেও নজরবন্দি করে রাখে। এ সময় ১৯৬৫ সালে শিক্ষকতা পেশায় যোগদানের সাথে সাথে তিনি কন্যাশিশুর মানসিক উন্নয়নের জন্য দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রচলিত সহশিক্ষা কার্যক্রম বাংলাদেশ গার্ল গাইডস এসোসিয়েশনের সদস্য হন এবং বর্তমানে তিনি এই আন্দোলনের বরিশাল বিভাগের আঞ্চলিক কমিশনার পদে রয়েছেন।

 

 

১৯৭১ সালে তিনি মহিলা পরিষদ জেলা শাখায় যোগ দেন। ২০০৭ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত তিনি এই শাখার সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি তাঁর স্বামীর প্রতিষ্ঠিত পূর্ব চাঁদপাশা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কার্যনির্বাহী কমিটির দীর্ঘ ১৮ বছর এবং বরিশাল জগদীশ সারস্বত বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের কার্যনির্বাহী কমিটির পরপর দু’ বার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

 

এছাড়া বরিশাল কারাগারের পরিদর্শক কমিটির সদস্য, দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি সহ বরিশালের বিভিন্ন শিশু- কিশোর সংগঠনের সাথে জড়িত রয়েছেন। ‘৭০ এর বন্যায তিনি মনোরমা বসু ” মাসিমা’র সাথে ভোলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে বন্যাদুর্গতদের সেবা ও ত্রাণ প্রদান করেন। বর্তমানেও দেশের যে কোন সংকটে সিনিয়র সিটিজেন রাবেয়া খাতুন সম্মুখসারিতে থাকেন।

Spread the love