সিলেট ২১শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৪:৩৫ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৮, ২০২০
লন্ডন বাংলা ডেস্কঃঃ
সিলেটকে বলা হয় দ্বিতীয় লন্ডন। কারণ যুক্তরাজ্যে রাজধানী লন্ডনসহ বিভিন্ন শহরে বসবাস করেন প্রায় ৪ লাখ সিলেটী। বৃহত্তর সিলেটের প্রায় ৩৫ লাখ লোক বসবাস করেন লন্ডন ছাড়াও ইউরোপের দেশ ফ্রান্স, স্পেন, ইটালি, পর্তুগাল, জার্মানি, বেলজিয়াম, অষ্ট্রিয়া, নেদারল্যান্ডসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি দেশে। আমেরিকা, কানাডা কিংবা অস্ট্রেলিয়াতেও কম নয় সিলেটের লোকজন।
সিলেটীদের স্বপ্নের ইউরোপ, আমেরিকায় এখন করোনাভাইরাস কেড়ে নিচ্ছে অসংখ্য প্রাণ। মহামারী এ ভাইরাসে এসব দেশে এই পর্যন্ত মারা গেছেন সিলেটের ৬জন। আর আক্রান্ত রয়েছেন সিলেটের প্রায় শতাধিক লোক।
সিলেটের লোকজন বলতে সহজেই বুঝে লন্ডন, কিংবা ইউরোপের উন্নত কোন দেশ। এছাড়া আমেরিকায়ও সিলেটের লোকদের সংখ্যা কম নয়। চীন থেকে করোনাভাইরাসের উৎপত্তি হলে এটি এখন ছড়িয়ে পড়েছে গোটা বিশ্বে। মহামারী এ ভাইরাস চীনে উৎপত্তির পর দেখা দেয় ইরানে। এরপর শুরু হয় ইটালিতে। ইটালির পর স্পেন, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, আমেরিকাসহ পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে বানের পানির মত। বর্তমানে বাংলাদেশেও এ ভাইরাস ছড়াচ্ছে দ্রুততার সাথে।
বিশ্বজুড়ে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা এখন ৫ লাখ ৪৯ হাজার ৭০ জনে পৌঁছেছে। এছাড়া মারা গেছেন ২৪ হাজার ৮৬২ জন। তবে বিশ্বজুড়ে করোনার চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন ১ লাখ ২৮ হাজার ৬২০জন।
সিলেটীদের স্বপ্নের এ দেশগুলো এখন পরিণত হচ্ছে মৃত্যুপরিতে। করোনাভাইরাসের কারণে সেখানে মারা যাচ্ছে বৃহত্তর সিলেটের অনেকেই। এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন শতাধিক সিলেটের লোক। এসব দেশে অবস্থানরত কমিউনিটির লোকজনদের কাছ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। এদিকে ইউরোপ আমেরিকায় এ রোগের ভয়াবহতার কারনে দেশে অবস্থারত এসব প্রবাসীদের পরিবারগুলোতে চলছে বড় ধরণের আতংক।
স্পেনে এই পর্যন্ত ৫ জন সিলেটী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। একজন বাংলাদেশি ইতিমধ্যে মারাও গেছেন।
গত ২৪ ঘণ্টায় স্পেনে করোনায় রেকর্ড আরও ৭৬৯ জন মারা গেছেন। এনিয়ে দেশটিতে করোনায় মোট প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৮৫৮ জনে। এছাড়া দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৭ হাজার ৮৭১ জন করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন।
স্পেনে বসবাস করছেন সিলেটীদের বড় একটি অংশ। সেখানে মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ায় সিলেটিসহ সকল মানুষের মাঝে বিরাজ করছে বড় আতংক।
এছাড়া ব্রিটেনে এখন পর্যন্ত ১১ হাজার ৬৫৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে মারা গেছেন ৫৭৮ জন। বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে প্রাণ হারিয়েছেন সিলেটের পাঁচজন। এর মধ্যে গত এক সপ্তাহে মারা গেছেন চারজন। চিকিৎসাধীন আছেন আরও অন্তত অর্ধশত।
প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষের বসবাস যুক্তরাজ্যে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণে যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী সিলেটের প্রবাসীদের প্রাণহানির ঘটনা বাড়ছে। যুক্তরাজ্যে এক সপ্তাহ আগেও প্রাণহানির ঘটনা ছিল কম। কিন্তু বর্তমানে ইটালি, স্পেনের পরেই মৃতের সংখ্যা বাড়ছে যুক্তরাজ্যে। এতে চরম উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় দিন পার করছে সেখানে বসবাসরত সিলেটীরা।
গত বুধবার যুক্তরাজ্যে করোনায় নিহত ৮৫ বছর বয়সী পংকি মিয়ার বাড়ি দক্ষিণ সুরমার মোল্লারগাঁও ইউনিয়নের সনুপাড়ায়। এর আগে মঙ্গলবার করোনাভাইরাসে মারা যায় খসরু মিয়া (৪৯)। তিনি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার সাহারপাড়ার বাসিন্দা। আর সোমবার রয়েল লন্ডন হাসপাতালে মারা যান সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার ছনগ্রামের হাজী জমসেদ আলী (৮০)।
এ ছাড়া লন্ডন ভ্রমণে গিয়ে ২০ মার্চ মারা যান মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ মাহমুদুর রহমান (৭০)। আর ১৩ মার্চ বাঙালি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটসে করোনায় মারা যান গোলাপগঞ্জের বাগিরগাট গ্রামের ৬৬ বছর বয়সী আফরোজ মিয়া।
এদিকে, যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাস মহামারীতে রূপ নেওয়ায় সিলেটের প্রবাসী পরিবারগুলোতে বেড়েছে উদ্বেগ। যুক্তরাজ্যে থাকা আত্মীয়স্বজন নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে যারা ইতিমধ্যে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তাদের নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছেন দেশে থাকা পরিবারের সদস্যরা।
ফ্রান্সেও ইতিমধ্যে কয়েকজন সিলেটী এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে। জকিগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এজিএম জয়নাল ফ্রান্সে করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
ফ্রান্সের মন্টিরাল শহরে বসবাস করছেন বিয়ানীবাজারের জাহেদ আহমদ। তিনি জানান, অনেকে জ্বর নিয়ে ঘরে অবস্থান করছেন। কিন্তু ভয়ের কারণে হাসপাতালে যাচ্ছেন না।
বর্তমানে সবচেয়ে আক্রান্ত হচ্ছেন আমেরিকায়। করোনা ভাইরাসে মারা গেছেন ১৩শ ৭জন। আর আক্রান্ত রয়েছেন ৮৫ হাজার ৯শ ৬১জন। ইতিমধ্যে আমেরিকার রাজধানী নিউইয়র্কে ৯ বাংলাদেশী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। গত ২৪ মার্চ মৌলভীবাজারের ১জন নারী মারা গেছেন। এছাড়া জকিগঞ্জের জুয়েল আন্মের এক যুবক করোনার সাথে যুদ্ধ করে এখন সুস্থতার পথে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
নিউইয়র্কের অজন পার্কে বসবাস করেন জকিগঞ্জের বায়জিদ সুলতান মঞ্জু। তিনি জানান, যেভাবে আমেরিকায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে এতে প্রবাসী সিলেটীসহ সকল মানুষ রয়েছেন এক অজানা আতংকে। তিনি সবার কাছে দোয়া কামনা করেছেন।