সিলেট ১৯শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৫:৩৬ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৯, ২০২০
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃঃ
মহামারি করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) মতো দূর্যোগে স্থানীয় নাগরিকদের পাশাপাশি অনিয়মিত অভিবাসীদের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে দেশটির সরকার। নিজেদের নাগরিকদের পাশাপাশি করোনাসহ দুর্যোগকালীন পরিস্থিতিতে অনিয়মিত অভিবাসীদের নিয়মিত সেবা দেবে পর্তুগিজ সরকার।
গত শুক্রবার রাতে পর্তুগাল সরকার এ ঘোষণা দেয়। এক বিবৃতিতে বলা হয়, করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) মতো দূর্যোগে যে সকল অভিবাসী বৈধ কাগজ না থাকায় সরকারি বিভিন্ন সেবা, জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা, স্যোশাল সিকিউরিটি থেকে বঞ্চিত হতেন, এখন থেকে তাদের সেবা দেবে সরকার। দেশের সাধারণ নাগরিকদের মতো তাদেরও এসব সেবা নিশ্চিত করতে সরকার সকল অনিয়মিত অভিবাসীদের নিয়মিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অ্যাসাইলামের মাধ্যমে আশ্রয় প্রার্থীরাও এর আওতাধীন থাকবেন।
পর্তুগালের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আপাতত চলতি বছরের জুলাই মাসের ১ তারিখ পর্যন্ত এটি জারি থাকতে পারে। যারা গত ১৮ মার্চ দেশে বর্তমান জরুরি ইমিগ্রেশন সেন্টারে নিয়মিত হওয়ার জন্য আবেদন করেছেন, তারাও এর আওতাধীন থাকবেন। ইমিগ্রেশন আর্টিকেল ৮৮ ও ৮৯, ৯০ অনুচ্ছেদের অধীনে যারা আবেদন করেছেন তাদের জন্যও এই নিয়ম বলবৎ থাকবে। এছাড়া সাধারণ নাগরিকদের যাদের ডকুমেন্টের মেয়াদ শেষ, আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত তাদের সবার কাগজপত্র নিয়মিত থাকবে বলেও জানানো হয়।
অনিয়মিত প্রবাসী বা অভিবাসীরা এখন থেকে পর্তুগালে অবস্থানরত অবস্থায় যেসব সেবা পাবেন- সরকারি সেবা, জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা, স্যোশাল সিকিউরিটি থেকে সহায়তা, কাজের কন্ট্রাক্ট সই, নতুন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলাসহ সব ধরনের সরকারি কাজে নিবন্ধন। তাদের কাছে থাকা স্টে পারমিশন বা ওয়ার্ক পারমিটও বৈধ বলে গণ্য হবে। দূর্যোগকালীন সময় এসব কাগজই তাদের বৈধতার প্রমাণ।
পর্তুগিজ সরকারের জাতীয় সংবাদমাধ্যম ‘দিয়ারা দ্য রিপাবলিকা’য় এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে দেশটির আইনের ৬২/২০২০ উল্লেখ করা হয়- ‘পর্তুগালে বসবাসরত সকল অভিবাসীদের সমান অধিকার নিশ্চিতের দ্বিধাহীন গ্যারান্টি প্রদান করা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, দেশটিতে বসবাসরত কোনো অভিবাসীর ডকুমেন্ট হারিয়ে গেলেও জরুরি প্রয়োজনে কোথাও যেতে হলে উপযুক্ত প্রমাণ দেখাতে হবে। দুর্যোগকালীন সময়ে অভিবাসীদের প্রতি সদয় হয়ে প্রমাণের শর্তে যাতায়াতের অনুমতি প্রদান করতে বলা হয়েছে ইমিগ্রেশন সেন্টারের আঞ্চলিক পরিচালকদের।
গত সপ্তাহে অভিবাসীদের ২০টি অ্যাসোসিয়েশন সরকারের কাছে তাদের নিবন্ধনে থাকা সদস্যদের নিয়ে শঙ্কার কথা তুলে ধরে সরকারের কাছে। দুর্যোগকালীন সময়ে একজন সাধারণ নাগরিক যেমন সেবা গ্রহণের অধিকার রাখে, তেমনি অনিয়মিত অভিবাসীরাও সরকারের এসব সুবিধা পাওয়ার অধিকার রাখে মর্মে লিখিত দেওয়া হয়। তাদের দাবি ছিল, সরকার যেন এটি বাস্তবায়ন করে।
পর্তুগিজ সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রী ক্লাউদিয়া ভেলোসো বলেছেন, অভিবাসীরা স্বাস্থ্য সেবা ও সরকারি বিভিন্ন সেবা থেকে দূরে থাকতে পারে না কেবল তারা অনিয়মিত এই কারণে। দেশের এমন দূর্যোগ মুহূর্তে তাদের অধিকার নিশ্চিত করা জরুরি ছিল। সরকার তা করেছে।
পর্তুগিজ সরকারের ঘোষণা বাংলাদেশিদের জন্যি এটি সুসংবাদ। পতুর্গাল সরকারের এমন ঘোষণা সুসংবাদ বয়ে এনেছে সেখানকার বৈধ-অবৈধ বাংলাদেশিদের জন্য। ২০১৮ সালে মোট ৬৬৫ জন এবং ২০১৯ সালে মোট ১৮৫১ জন অনিয়মিত অভিবাসী দূতাবাসে নিবন্ধন করেছিলেন। ভিসাবিহীন ও ভিসাসহ তিন থেকে চার হাজার বাংলাদেশি এই মুহূর্তে পর্তুগালে অবস্থান করছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সরকারের ঘোষণার পর বিষয়টি নিয়ে আনন্দ প্রকাশ করেন দেশটিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত মো. রুহুল আলম সিদ্দিকী । আমাদের সময়কে দেওয়া সংক্ষিপ্ত বার্তায় তিনি বলেন, ‘এমন একটি খবর খুবই আনন্দের। বিশেষ করে অনিয়মিত বাংলাদেশি যারা রয়েছেন তাদের অনেকেই উদ্বিগ্ন ছিলেন। আমি মানবিক পর্তুগিজ সরকারকে অভিনন্দন জানাই।
অভিবাসীরা পর্তুগালের স্যোশাল সিকিউরিটিতে বছরে প্রায় ৬৫১ মিলিয়ন ইউরো অবদান রাখে। তাই তাদের সকল অধিকার নিশ্চিত করা দাবিটি যথার্থ বলেই মনে করা হচ্ছে।