বুলবুল আহমদ/নবীগঞ্জঃঃ
করোনা ভাইরাসের কারনে সরকারের পক্ষ থেকে দিনমজুর ও ক্ষুদে ব্যবসায়ীদের ত্রান সামগ্রী দেয় সরকার। কিন্তু সেই ত্রান বিরনের অভিযোগ সংবাদ প্রকাশের জের ধরে ৩ সাংবাদিকদের চেয়ারম্যান কর্তৃক মারধরের ঘটনায় নবীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। এতে ঐ দিন রাতেই নবীগঞ্জ থানা পুলিশ বিশেষ অভিযান চালিয়ে অরবিট হাসপাতালের ম্যানাজারকে আটক করে কোর্টে প্রেরন করেন।
সূত্রে জানাযায়, চাল, ডাল, পিয়াজ চুরি সহ বহু কু-কর্মের হুতা আউশকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমান হারুন ৩ সাংবাদিককে ক্রিকেট খেলার ব্যাট দিয়ে দিন দুপুরে হামলার ঘটনায় চেয়াম্যান হারুনকে প্রধান আসামী ১০ জনের নাম উল্লেখ আরোও কয়েক অজ্ঞাত রেখে নবীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মামলার সাথে সাথে নবীগঞ্জ থানার অপারেশ ওসি আমিনুল ইসলাম এর নেতৃত্বে আরো কয়েকজন অফিসারদের নিয়ে তাৎক্ষনিক অবস্থায় বিশেষ অভিযান চালায় চেয়ারম্যান হারুনের বাড়ি সহ মিনাজপুর পুরো গ্রামে। কিন্তু সু- চতুর চেয়ারম্যান, তার ভাই ও ভাতিজা পালিয়ে যায়। পরে গ্রামের বিভিন্ন আসামীদের ঘরে তল্লাশি চালিয়ে অরবিট হাসপাতালের ম্যানাজারকে আটক করতে সক্ষম হয়। এরপর থেকে হারুন সহ অপরাপর আসামীরা পালিয়ে থাকে। এ থেকে বাচঁতে চেয়ারম্যান ও তার সন্ত্রাসী লোকজন ভিন্ন পথ খুজতে থাকে।
সন্ত্রাসী হামলার শিকার গুরুতর আহত সাংবাদিক শাহ সুলতান আহমদকে ডাক্তার বলেন, বাসায় রেষ্ট নেওয়ার জন্য। এতে তিনি বাসায় চলে আসেন। পরদিন তিনি বাসায় আসার খবর পেয়ে আত্মীয় স্বজন সহ সাংবাদিকরা একেএকে তাকে দেখতে বাসায় আসেন। এসময় দুপুর বেলা সাংবাদিক শাহ সুলতান আহমদ তার মেয়েকে সাথে নিয়ে ঔষধ আনতে গেলে পূর্ব থেকে ওৎপেতে থাকা বহু কু কর্মের হুতা বিতর্কিত নারী ফরজুন আক্তার মনি দাড়িয়ে থাকে। শাহ সুলতান কে দেখা মাত্রই ঐ মহিলা বলে, আমি আমি সিআইডির লোক। আমার আপনার সাথে
দরকার আছে। এ কথা বলা মাত্রই সুলতান আহমদ উত্তেজিত হয়ে তার পরিচিত দেখতে চান। সে এতে অপারগতা প্রকাশ করলে তার গলায় জুলানো কার্ড দেখার জন্য হাত বাড়ান। এ ক্লিকটি ভিডিও করে প্রতিপক্ষের লোকজন ফেইসবুকে ছাড়ে যে ঐ মহিলার উপর হামলা করা হয়েছে।
সম্প্রতি সাংবাদিক নির্যাতনকারী নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহিবুর রহমান হারুন এর মালিকানাধীন অরবিট হসপিটাল দেখানো হয়েছে ঘটনাস্থল। সাংবাদিকদের ভাষ্য- এই মামলায় অনেকটা স্পষ্টভাবেই বুঝা যায় ঘটনার মাস্টার প্লানকারী কারা? এদিকে ফের অভিযোগ উঠেছে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘদিন কারাভোগ করে জামিনে এসে নানা অপকর্ম শুরু করেছে মনি নামের এই প্রতারক নারী। নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের বর্তমান সাধারণ সম্পাদকসহ ৫ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা দায়েরের ঘটনায় ক্ষোভ বিরাজ করছে সাংবাদিক মহল সহ উপজেলার সর্বত্র।
মামলার আসামী সাংবাদিকরা হলেন- সম্প্রতি ইউপি চেয়ারম্যান কর্তৃক নির্যাতনের শিকার (চিকিৎসাধীন) দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদের প্রতিনিধি, নবীগঞ্জ সাংবাদিক ফোরামের সাবেক সভাপতি ও নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের নির্বাহী সদস্য শাহ সুলতান আহমেদ, নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক সমকালের প্রতিনিধি এম এ আহমদ আজাদ, দৈনিক আমার সংবাদের প্রতিনিধি এম মুজিবুর রহমান, চ্যানেল এস এর প্রতিনিধি বুলবুল আহমেদ, নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক কালের কন্ঠের প্রতিনিধি মোঃ আলমগীর মিয়া। ৫জন সাংবাদিক ছাড়াও সাকির আহমেদ নামের স্থানীয় এক যুবককে আসামী করা হয়েছে।
জানা যায়, গত ৩০ মার্চ সরকারি ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগে সংবাদ প্রকাশ করায় আউশকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও আউশকান্দি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির আহবায়ক মহিবুর রহমান হারুন সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে গত ১ এপ্রিল বিকেলে সাংবাদিক শাহ সুলতান আহমেদ উপর দিনদুপুরে অতর্কিত হামলা চালান। এসময় চেয়ারম্যান হারুন নিজেই ক্রিকেট খেলার ব্যাট দিয়ে পেটান সাংবাদিককে। খবর পেয়ে তাকে উদ্ধার করতে গিয়ে আহত হন দৈনিক আমার সংবাদ প্রতিনিধি এম মুজিবুর রহমান ও সাংবাদিক বুলবুল আহমেদ। এ ঘটনায় সাংবাদিক এম মুজিবুর রহমান বাদি হয়ে পরের দিন ইউপি চেয়ারম্যান হারুনকে প্রধান আসামী করে ১০ জনের বিরুদ্ধে নবীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন।
এ মামলায় অভিযান চালিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে এক আসামীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এসময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায় চেয়ারম্যান হারুন। এরপর থেকেই কিভাবে সাংবাদিকদের সায়েস্থা করা যায় এমন নিল নকশা তৈরী করেন চেয়ারম্যান হারুন ও তার বাহিনী। এক পর্যায়ে চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের ফাঁদ পাতেন, খুঁজে আনেন বহু অপকর্মের হুতা নারী প্রতারক ফরজুন আক্তার মনিকে।
অসুস্থ শাহ সুলতান ওইদিন আউশকান্দি বাজারে অবস্থিত তার ভাড়াটিয়া বাসা থেকে তার মেয়েকে নিয়ে ঔষধ কিনতে নিচে নেমে ফার্মেসিতে যাওয়ার সময় দেখেন বহুরূপী মনি ও চেয়ারম্যানের সন্ত্রাসী বাহিনী তার পথরোদ্ধ করে। ওই মনি নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে শাহ সুলতানকে নানান ভাবে অপদস্ত করে। কিন্তু ওই ঘটনাটিকে এখন সাজানো হয়েছে অন্যভাবে। বিতর্কিত নারী মনিকে দিয়ে সাংবাদিকদের উপর ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা দায়ের করেন। মামলায় সাংবাদিকদের উপর যৌন হয়রানী, ও চুরির অভিযোগ তোলা হয়। নবীগঞ্জ থানায় কোন তদন্ত ছাড়াই সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ষড়যন্ত্র নারী নির্যাতন মামলাটি গত ৬ এপ্রিল রাতে নবীগঞ্জ থানায় রেকর্ড হয়। এ ঘটনায় সাংবাদিকদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আজিজুর রহমান,রহস্য জনক মামলাটি থানায় কিভাবে রেকর্ডভুক্ত হলো তিনি এর কোন সঠিক উত্তর দিতে পারেননি। থানার ওসির রহস্যজনক ভুমিকা নিয়েও সাংবাদিক সহ সচেতন মহলে নানা প্রশ্ন ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। সাংবাদিক আজাদের দায়েরী মামলায় দীর্ঘদিন কারাভোগ শেষে জামিনে আসা কে এই মনি?
অভিযোগ রয়েছে- বহু রূপের অধিকারী মনি বিশেষ করে নিজেকে সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার আত্মীয় এবং স্থানীয় সংসদ সদস্যের মেয়ে আবার অনেককে ভাতিজি পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করতো। নবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন সরকারী কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও সিনিয়র সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে মানহানীকর মিথ্যা স্ট্যাটাস এবং বিভিন্ন ভূয়া একাউন্ট খোলে প্রতারণা করে আসছিল। অভিযোগ উঠে- প্রতি রাতেই নারীদের বিভিন্ন অশালীন ম্যাসেজ দিতো মনি। তার টার্গেট ছিল- নারী জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন দপ্তরের নারী কর্মকর্তা ও স্কুল-কলেজের ছাত্রী।
এদেরকে ম্যাসেজ দিয়ে ব্ল্যাক-মেইল করতো। এসব ম্যাসেজের স্ক্রীণশর্ট প্রকাশ হওয়ায় মনি নারী না পুরুষ এনিয়েও প্রশ্ন উঠে। প্রতারক মনির এই প্রতারণার ফাঁদে পড়ে কেউ প্রতিবাদ করলেই মনি তার ফেইসবুক আইডিতে বিভিন্ন রকম হুমকি ধামকিমূলক ও মানহানীকর স্ট্যাটাস পোস্ট দিয়ে অপদস্ত করতো। ওই নারী দীর্ঘদিন যাবত নিজেকে সাংবাদিক ও মানবাধীকার কর্মী পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার লোকজনের সাথে প্রতারণা করে আসছিল।
এমনকি তার অপকর্মের প্রতিবাদ করায় সাংবাদিক এম এ আহমদ আজাদ ও এম মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ও আদালতে মামলা দায়ের করে। এর পর প্রায় ৬-৭ মাস পূর্বে নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সমকাল প্রতিনিধি এম এ আহমদ আজাদ ও সাংবাদিক এম মুজিবুর রহমান এর বিরুদ্ধে তার ফেইসবুক আইডিতে একাধিক মানহানীকর স্ট্যাটাস দিলে সংবাদিক আজাদ বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা ও তথ্য প্রযুক্তি আইনে নবীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, প্রতারক ফরজুন আক্তার মনি পুরুষ সেজে নবীগঞ্জের উপজেলার নারী জনপ্রতিনিধি ও সাবেক মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা, বিভিন্ন নারী ইউপি সদস্য সহ আরও অনেককেই অশ্লীল ম্যাসেজ পাঠিয়ে যৌন হয়রানি করে আসছিল। সে নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে সংখ্যতা গড়ে তোলে। পরবর্তীতে তাদেরকে যৌন হয়রানী করতো। বিশেষ করে প্রবাসীদের বিভিন্ন ম্যাসেজ দিয়ে নানান উপহার সামগ্রী হাতিয়ে নিতো।
অনেকেই জানান- ফরজুন আক্তার মনি বিভিন্ন স্থানে ভিন্ন ভিন্ন নাম ব্যবহার করে প্রতারণা করতো এবং ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের শীর্ষ নেতা ও প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের আত্মীয় পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করছিল। দাদন ব্যবসার সাথে জড়িত থাকারও তথ্য রয়েছে। এর ফলে অল্প সময়ে সে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছে পরিনত হয়। ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ইং তারিখে পুলিশ শহরতলীর জে.কে উচ্চ বিদ্যালয় পয়েন্ট থেকে নবীগঞ্জ থানার একদল পুলিশ ডিজিটাল নিরাপত্তা ও তথ্য প্রযুক্তি আইনের মামলায় আলোচিত নারী মনিকে গ্রেফতার করে।
এ সময় তার কাছ থেকে ২টি এনআইডি কার্ড, বেশ কিছু ভূয়া আইডি কার্ড, ৩টি মোবাইল ফোন, ১০ টি সিম কার্ড, একটি কলম ক্যামেরাসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করেন। এ ছাড়াও তার মোবাইলে লগইন করা একাধীক ভূয়া ফেসবুক আইডি এবং শতাধিক পর্নো ভিডিও উদ্ধার করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এস আই সমীরণ দাশ।
তাকে গ্রেফতারের পর নবীগঞ্জ উপজেলা আইন শৃংখলা কমিটির সভায় স্থানীয় সংসদ সদস্য গাজী মোঃ শাহনওয়াজ মিলাদ, উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল হক চৌধুরী সেলিম এর উপস্থিতিতে উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাজমা বেগম বহুরূপী ফারজানা আক্তার ফরজুন ওরফে মনির বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব উপস্থাপন করলে। মনির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সর্ব সম্মতিতে সিন্ধান্ত গৃহিত হয় এবং প্রতারক মনি কর্তৃক নবীগঞ্জের সিনিয়র সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি ও সরকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ফেসবুকের মাধ্যমে মানহানিকর স্ট্যাটাস দেয়ার জন্য নিন্দা প্রস্তাব গৃহিত হয়।
অপরদিকে, প্রধান আসামী হারুন সহ অন্যান্যদের না ধরে সব কিছু জেনে, শুনে ও বুঝে কি ভাবে এই প্রতারক মহিলার সাজানো মিথ্যা মামলা আমলে নিল তা নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তবে, পুলিশ বলছে চেয়ারম্যান সহ অপরাপর আসামীদের ধরতে তাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সে যত বড়ই ক্ষমতাধর হোক না কেন আইনের আওতায় আনা হবে।