তামিমুল করিম হৃদয়ঃঃ
আপনারা সকলেই জানেন সিলেট বিভাগীয় শহরে প্রতিদিন প্রচুর পরিমান রক্তের প্রয়োজন হয়। এই বিশাল প্রয়োজন মেটানো হয় একমাত্র স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের কাছ থেকে। আপনারা এগিয়ে আসেন বলেই খারাপ সময়ে আটকে থাকতে হয়না, কেউ না কেউ কোন না কোন ভাবে মিলে যায়। এই করোনাকালে এক বিশাল সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
রিতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন গুলোকে, যারা সব সময় রক্ত জোগাড় করে দেয়ার চেষ্টা করতো। অক্সিজেন ছাড়া যেমন মানুষ বাঁচতে পারে না, ঠিক তেমনি রক্ত ছাড়া থ্যালাসেমিয়া রোগীগুলো বাঁচতে পারে না। রক্তের গুরুত্ব আমরা সকলেই বুঝি। কিন্তুু আমাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো থ্যালাসেমিয়া কি সেটাই জানি না।থ্যালাসেমিয়া (ইংরেজি: Thalassemia) একটি অটোজোমাল মিউট্যান্ট প্রচ্ছন্ন জিনঘটিত বংশগত রক্তের রোগ।থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের শরীরে রক্ত উৎপাদন হয় না।
একজন সুস্থ মানুষের সাধারণ ভাবেই বোন ম্যারো প্রতিনিয়ত রক্ত উৎপাদিত হয়, কিন্তু থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত বাচ্চাদের বোন ম্যারো রক্ত উৎপাদিত হয় না। ফলে প্রতিনিয়ত ওদের রক্তের প্রয়োজন হয়। কিছু থ্যালাসেমিয়া বাচ্চার ২০ দিন পর পর আবার কিছু থ্যালাসেমিয়া বাচ্চার প্রতি একমাস পর পর রক্ত প্রয়োজন। রক্তই একমাত্র ওদের বেঁচে থাকার সম্বল!! শুধুমাত্র সিলেট মুজিব জাহান রেডক্রিসেন্ট রক্ত কেন্দ্রে তিন’শতাধিক থ্যালাসেমিয়া রোগী আছে যাদের প্রতি মাসে রক্তের প্রয়োজন৷ জানেন তো? রক্ত কৃত্রিমভাবে তৈরি করা যায় না আর রক্ত তৈরি করার মেশিন ও বিজ্ঞানীরা আজ পর্যন্ত আবিষ্কার করতে পারেন নি।
আপনার,আমার,আমাদের সকলের দানকৃত রক্তেই থ্যালাসেমিয়া বাচ্চাগুলো বেঁচে আছে। দেশের এই কঠিন পরিস্থিতির চারিদিকে করোনা ভাইরাসের আতংকে বিভাগীয় সিলেট শহর এখন ফাঁকা। বেশীর ভাগ রক্তদাতারাই এখন বাড়িতে অবস্থান করছেন । অনেকেই ভয়ে ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। এমনটা হওয়াই উচিত, কিন্তুু রক্ত তো আর করোনার প্রভাব বা লকডাউন কি তা বুঝে না। থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত বাচ্চাগুলোর কষ্ট তো আর বুঝে না।
চিন্তা আরো বেড়ে যায় কিভাবে জানেন? এমাসের শেষ সপ্তাহ থেকেই পবিত্র রমজান মাসের শুরু। এই সময় অনেকেই রক্তদান করতে চাননা। মনে ভুল ধারণা কাজ করে যে, রক্ত দিলে রোজা ভেঙ্গে যায়। কিন্তুু প্রকৃত সত্য হলো- পবিত্র রমজান মাসে রোজা রেখে ও রক্তদান করা যায়। এতে রোজাদার ব্যক্তির অযু ভাঙ্গে, রোজা ভাঙ্গে না। তবে খুব বেশী জরুরি না হলে সন্ধ্যার পর রক্তদান করা উত্তম।
এই সকল পরিস্থিতিতে রক্তদাতা যোগাড় করা খুবই কষ্ট হচ্ছে, এবং আপনারাও বিষয়টা অনুভব করতে পারছেন আশাকরি। আপনাদের সকলের প্রতি অনুরোধ করতেই হচ্ছে – এই কঠিন সময়ে স্বেচ্ছায় রক্তদানের মতো মহৎ কাজে এগিয়ে আসুন। ক্রান্তিকালে এটাও একটা যুদ্ধ, নিজে নিরাপদ থেকে অন্যকে নিরাপদ রাখার চেষ্টা করায় আছে কল্যাণ । সৃষ্টিকর্তা নিশ্চয়ই সাহায্য করবেন।