সিলেট ১৫ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩১শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১:২৪ পূর্বাহ্ণ, মে ৭, ২০২০
বুলবুল আহমদ/ নবীগঞ্জঃঃ
একের পর এক চাল চুরি ঘটনা ঘটছে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায়। সংবাদ প্রকাশ করতে গিয়ে অনেক সাংবাদিকারও মারপিট খাচ্ছে। মামলা হয়েছে কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন চেয়ারম্যান মেম্বার গ্রেফতার হয়নি! উল্লো ২দিন পর নাটকীয় ভাবে সাংবাদিকদের বিরোদ্ধে মামলা দায়ের করে চেয়ারম্যান প্রকাশ্যে ঘুরাফেরা করছে! এ নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন।
জানাযায়, নবীগঞ্জ উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলারের বিরুদ্ধে ১০ টাকা কেজি দরের চাল কার্ডধারী গ্রহীতাদের নামে ভুয়া টিপসই দিয়ে ১ মাসের চাল আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এমনকি এর কারণ জানতে চাইলে কার্ড ছিড়ে ফেলে কার্ডধারীদের লাঞ্ছিত করা হয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ১৫ জন কার্ডধারী ভোক্তভূগীরা ডিলার লিটন চন্দ্র দেবের বিরুদ্ধে প্রতিকার চেয়ে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে ও এলাকাবাসীর জানা যায়, নবীগঞ্জ উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির জন্য ১২শ জনের তালিকা তৈরি করেন ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যরা। এতে ঐ ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১ থেকে ৪ নম্বর ওয়ার্ড ও ৫ নং ওয়ার্ডের কয়েকজনের নামসহ তালিকায় ৩৫০ জন সুবিধাভোগীর নামে কার্ড রয়েছে। এ চাল বিক্রির দায়িত্ব পান ডিলার লিটন চন্দ্র দেব। বাকি ৮৫০ জন সুবিধাভোগী ইউপি চেয়ারম্যানের নিজ গ্রাম সহ আশপাশের কয়েক গ্রামের লোকজন।
চলতি (মে) মাসের চাল এখনো বিতরণ করা হয়নি! গত এপ্রিল মাসের শেষের দিকে চাল আনতে গিয়ে টিপ সই রেখে এপ্রিল মাসের চাল দেয়া হয় সুবিধাভোগী গ্রহীতাদের! তখন সময় পূর্বের মার্চ মাসের চাল না দিয়েই চাল প্রাপ্তি গ্রহীতাদের টিপসই দেয়ার স্থানে ডিলার নিয়ে ভুয়া মার্চ মাসের ভুয়া টিপ সই দিয়ে মার্চ মাসের চাল আত্মসাত করেছেন বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। এ ন্যাক্কারজনক ঘটনার প্রতিবাদ করায় অনেকেই লাঞ্চিত হয়েছেন।
ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমদাদুর রহমান মুকুল। তিনি নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি। এমন কর্মকান্ডে উপজেলা জুড়ে আলোচনা সমালোচনা ঝড় উঠেছে। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, গত ২৬ এপ্রিল চাল বিক্রি হচ্ছে এমন খবরে ওই ইউনিয়নের বনগাঁও গ্রামের এক কার্ডধারী দিনমজুর ব্যাক্তির কার্ড নিয়ে তার স্ত্রী চালের জন্য গিয়েছিলেন। স্বামী না গিয়ে সে কেন গেল? এ নিয়ে বাকবিতন্ড ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে তার কার্ডটি ছিড়ে ফেলেন চেয়ারম্যান। এমনকি তাকে আর কোন দিন চাল দেওয়া হবে বলে বিদায় করে দেন।
একই দিন আরেক ব্যাক্তির টিপসই রেখে চাল না দিয়েই বিদায় করে দেওয়া হয়। এমন অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে ওই এলাকার জনসাধারণের। ঐ এলাকার হত দরিদ্র লোকজনের ভিতরে নানা ক্ষোভ বিরাজ করলেও প্রকাশ্যে তা বলতে পারেন না- অদৃশ্য কারণে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে- জননী ভান্ডার নামক প্রতিষ্ঠানের প্রোপ্রাইটর ডিলার লিটন চন্দ্র দেব বলেন- ‘ওই মহিলা চেয়ারম্যানের সাথে বেয়াদবি করছে। তিনি ভূয়া টিপ সই দিয়ে চাল আত্মসাতের অভিযোগটি মিথ্যা বলে দাবী করেন। ডিলার বলেন- তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ্য থাকায় কিছু লোকজনের চাল রয়ে গেছে।
এদিকে, করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে বেকার মানুষের ঘরে খাবার নেই। এ অবস্থায় ভুক্তভোগীরা গত মঙ্গলবার দুপুরে গণ স্বাক্ষর দিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিত কুমার পাল এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন- অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত করা হচ্ছে, যদি চাল আত্মসাৎ বা আত্মসাতের চেষ্টাও করা হয় আর তার কোন প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে এই ডিলারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গজনাইপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের হত দরিদ্রদের ভাষ্য, করোনা পরিস্থিতিতে সরকার দফায় দফায় বিভিন্ন বরাদ্দ দিলেও তারা কিছুই পাচ্ছেন না। ফলে না খেয়েই দিন কাটছে অনেকেই। এই ইউনিয়নে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নজড়দারী বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করছেন এলাকার সচেতন মহলের লোকজন।