সিলেট ২০শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ২:২৪ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৯, ২০২০
প্রতিনিধি/সুনামগঞ্জঃঃ
অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলের পানিতে সদর, ছাতক, ধর্মপাশা,দোয়ারাবাজার, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, জামালগঞ্জসহ সাত উপজেলার২৫টি সড়ক ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানেদু’বার বন্যার কারণে এসব এলাকার ৬০০ কিলোমিটার সড়ক ভেঙেপড়েছে। অর্ধশতাধিক সেতু ও কালর্ভাটের সংযোগ সড়ক বিচ্ছিন্নহয়ে পড়েছে।
জেলার ২২টি সড়কের বিভিন্ন অংশ ভেঙে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফলে জেলা সদর ও অন্যান্য এলাকায় যাতায়াতকারী হাজার হাজারমানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন।সুনামগঞ্জ ছাতক সড়কের কাটাখালী এলাকায় প্রথম দফার বন্যায় ভাঙনদেখা দেয়। পরে দ্বিতীয় দফা বন্যার পানি প্রবল তোড়ে সড়কের ভাঙা অংশ দিয়ে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। ঢলের পানির চাপে ব্যাপক আকারে সড়ক ভেঙে গেছে।
স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদফতর জানায়, ৩০টি সড়ক বন্যায়ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ৩০টি গ্রাম প্রতিরক্ষা দেয়াল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলার সড়ক অবকাঠামোতে সাড়ে ৩০০ কোটি টাকার ওপরেক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।দুর্গতরা জানান, সড়কে ঢলের পানি যাওয়ায় ও বিভিন্ন অংশ ভেঙে যাওয়ায় চলাচলে মারাত্মক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। উজানের ঢলের পানি কাটাখালীসড়কে ভাঙা অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ করে দুই ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কামারগাঁও গ্রামের আব্দুল বাছিত বলেন, প্রথম বন্যার চেয়ে দ্বিতীয় দফার বন্যার পানি বেশি
হয়েছে।
সেজন্য মানুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।আব্দুর রহমান বলেন, দ্বিতীয়বারের বন্যায় এমন কোনও জায়গা নেই যেখানে পানি ওঠে নাই। সড়ক কালভার্ট উপচে প্রবল বেগে আমাদের ঘরবাড়িতে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে।নুরুল ইসলাম বলেন, এখনও মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। গবাদি পশুনিয়ে উচু সড়ক ও আশ্রয় কেন্দ্রে ওঠেছেন।স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহাবুব আলম বলেন, ‘পরপর দুই দফা বন্যায় জেলার সড়ক অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতিহয়েছে।
পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে দ্বিতীয় পর্যায়ের বন্যার ক্ষতচিহ্ন ব্যাপক আকারে দেখা দিয়েছে। প্রথম পর্যায়ের বন্যায় ৬০০ কিলোমিটারের বেশি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে তারাআরওকয়েকশো কিলোমিটার বাড়তে পারে। অর্ধশতাধিক সেতু ও কালর্ভাটের সংযোগ সড়ক বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। জেলার ২২ সড়কের বিভিন্ন অংশ ভেঙে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ৩০টি ভিলেজ প্রটেকশন ওয়াল ভেঙে গেছে। টাকার অংকে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আজ পর্যন্ত সাড়ে তিনশ’ কোটি টাকা। তবে পানি সম্পূর্ণ নেমে গেলে ক্ষতির পরিমাণআরও বাড়তে পারে। ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে পানি নেমে গেলে সংস্কার কার্যক্রম শুরু করা হবে।’
প্রশাসনের বন্যা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সূত্রে জানা যায়, জেলার ৮৪ ইউনিয়ন ও ৪পৌরসভার ৩৩৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৩ হাজার ১০৩টি পরিবারের ১২ হাজার ৬৭ জন আশ্রয় নিয়েছেন। জেলায় ১ লাখ ৮ হাজার ২২৯ টি পরিবার বন্যায়ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ৮৬৫ মেট্রিকটন চাল, ৫১ লাখ৭০ হাজার টাকা, ২ হাজার ৪০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সবিবুর রহমান বলেন,সুরমা নদীর পানি এখন বিপদ সীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।সুনামগঞ্জ জেলার প্রধান নদীসমূহের পানি সমতল বর্তমানে হ্রাসপাচ্ছে। পানি হ্রাস পাওয়ার এই প্রবণতা আগামী ১৯ জুলাই পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে এবং এই সময় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহতথাকতে পারে। তবে উজানে ভারতের আসাম, মেঘালয় অঞ্চলে পুনরায় সক্রিয় মৌসুমী বায়ু বিস্তারের সম্ভাবনার পরিপ্রেক্ষিতে ২০-২১ জুলাই হতেপুনরায় জেলার প্রধান নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে।
বৃষ্টিপাত পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে বৃদ্ধির এই প্রবণতা ৪-৫ দিনস্থায়ী হতে পারে এবং সে সময়ে জেলার সুরমা, কুশিয়ারা, যাদুকাটা নদীর পানি সমতল কোথাও কোথাও বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। এর ফলে সুনামগঞ্জ জেলার নিম্নাঞ্চলের কোথাও কোথাও আবারও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে এবং কোথাও কোথাও নতুন করে বন্যা পরিস্থিতির
সৃষ্টি হতে পারে।