সিলেট ১৯শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৬:২৭ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৭, ২০২০
লন্ডন বাংলা ডেস্কঃঃ
কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে গত বছর বড় ধরনের সংকট তৈরি হয়েছিল। সরকারি নির্ধারিত মূল্যে কোরবানির পশুর চামড়া কেনেননি অনেকে। গরিব ও এতিমদের হক চামড়ার দাম নিয়ে গত বছরের কারসাজি অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। বাংলাদেশের ইতিহাসে কোরবানির ঈদে চামড়ার দরে সবচেয়ে বেশি বিপর্যয় নেমে আসে। দাম না পেয়ে অনেকেই ক্ষোভে লাখ লাখ চামড়া নদীতে ফেলে দেন।
গত বছরের চেয়েও এ বছর চামড়ার মূল্য কমিয়ে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে এ বছরও বঞ্চিত হবেন গরিব-এতিমরা। এ বছর ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। আর ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দর ২৮ থেকে ৩২ টাকা।
গত বছর ঢাকায় এ দাম ছিল ৪৫-৫০ টাকা, এ বছর দাম কমানো হয়েছে গত বছরের তুলনায় প্রায় ২৯ শতাংশ কম। ঢাকার বাইরে গত বছর গরুর চামড়ার দাম ছিল ৩৫-৪০ টাকা, যা এবারে প্রায় ২০ শতাংশ কমানো হয়েছে। ২০১৪ সালে ঢাকায় প্রতি বর্গফুট চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ৭০-৭৫ টাকা। সেখান থেকে এ বছর তা সরাসরি অর্ধেক কমিয়ে ৩৫-৪০ টাকা। ২০১৪ সালে ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট চামড়ার মূল্য ধরা হয়েছিল ৬০-৬৫ টাকা।
জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরেই চামড়ার দাম নিয়ে একটা নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি হয়ে আসছে। ট্যানারি মালিক ও আড়তদারদের কারসাজির কারণে দামে এই ধস নামে। দেশের অনেক এলাকায় ক্রেতা খুঁজে না পাওয়ায় সরকার নির্ধারিত দর তো দূরের কথা, চামড়া বিক্রিই করা যায়নি। দাম না পেয়ে প্রতিবাদস্বরূপ অনেকে চামড়া নদীতে ফেলে দিয়েছেন, মাটিতে পুঁতে ফেলেছেন। চামড়া নিয়ে সারাদেশে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা গেছে। বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে ট্যানারি মালিক ও আড়তদাররা একে অপরকে দুষছেন। লোকসানে পড়া ক্ষুদ্র ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, ট্যানারি মালিক ও আড়তদাররা অতি মুনাফার লোভে চামড়ার দামে ধস নামানোর নেপথ্যে কাজ করেছেন। এমনকি গতবার তাদের প্রতিনিধিরা মাঠে নামেননি। ঈদে দিনভর চামড়া নিয়ে অস্থিরতার মধ্যে লোকসান এড়াতে যে যেমন দাম পেয়েছেন, সে দামের কমেও বিক্রি করতে হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, কোরবানিদাতারা সাধারণত মসজিদ-মাদ্রাসা ও এতিমখানায় এবং দরিদ্র আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের চামড়া বিক্রির অর্থ দান করেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরাসরি চামড়া দান করেন। এবার নামমাত্র মূল্যে বিক্রি হওয়ায় সমাজের দরিদ্র শ্রেণিই বঞ্চিত হয়েছে। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অনেক ক্ষুদ্র ও মৌসুমি ব্যবসায়ী। তারা যে দামে চামড়া কিনেছেন, আড়ত থেকে তার চেয়ে কম দাম পেয়েছেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার মূল্য এবং চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের চাহিদা, কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে সেই চাহিদা সঙ্কোচনের পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা, বাংলাদেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের গুণগত মান, দেশে বর্তমানে চামড়ার মজুদের মতো নানা বিষয়। বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে কোনো পণ্যের দাম নির্ধারণ করা না হলেও চামড়া ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সব পক্ষই যেন লাভবান হন সেই লক্ষ্যে গত কয়েক বছর ধরে চামড়ার দাম নির্ধারণ করে আসছে সরকার।
তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৩ সালে ঢাকার ভেতরে গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল প্রতি বর্গফুট ৮৫ থেকে ৯০ টাকা, ঢাকার বাইরে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। পরের বছর ২০১৪ সালে প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করা ছিল ঢাকার ভেতরে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা, ঢাকার বাইরে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। ২০১৫ সালে আরও কমে এই দাম। ওই বছর প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় ঢাকার ভেতরে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, ঢাকার বাইরে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। এর পরের বছর ২০১৬ সালে অবশ্য ব্যবসায়ীরা চামড়ার দাম নির্ধারণ করেন। ওই বছর গরুর চামড়ার দাম নির্ধারিত হয়েছিল প্রতি বর্গফুট ঢাকার ভেতরে ৫০ ঢাকা, ঢাকার বাইরে ৪০ টাকা। এক বছর বিরতি দিয়ে ফের চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকার। ২০১৭ সালে প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় ঢাকার ভেতরে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, ঢাকার বাইরে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। এখন এই দাম ঢাকার ভেতরে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, ঢাকার বাইরে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়। খাসি ও বকরির চামড়ার দামের অবস্থা আরও বেহাল।
২০১৩ সালে সারাদেশে খাসি ও বকরির চামড়ার দাম ছিল প্রতি বর্গফুট ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। পরের বছর তা একধাপে নেমে যায় ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। ২০১৫ সালে এসে এর দাম নির্ধারণ করা হয় আরও ১৫ টাকা কমিয়ে। ওই বছর খাসির চামড়ার দাম ছিল প্রতি বর্গফুট ২০ থেকে ২২ টাকা। ২০১৬ সালে ব্যবসায়ীরা প্রতি বর্গফুট খাসির চামড়ার দাম নির্ধারণ করেন ২০ টাকা। পরের বছর সরকার ঢাকার মধ্যে খাসির চামড়ার দাম খানিকটা বাড়ালেও কমিয়ে দেয় ঢাকার বাইরের দাম। ঢাকার ভেতরে দাম ছিল ২০ ২২ টাকা, ঢাকার বাইরে ১৫ থেকে ১৭ টাকা। এখন তা এসে ঠেকেছে ঢাকার ভেতরে ১৮ থেকে ২০ টাকায়, ঢাকার বাইরে ১৩ থেকে ১৫ টাকায়।