ছাতক সিমেন্ট কারখানার কর্মকর্তাসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশীট

প্রকাশিত: ৫:৪৬ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৯, ২০২০

ছাতক সিমেন্ট কারখানার কর্মকর্তাসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশীট
৬৬ Views

প্রতিনিধি/ছাতকঃঃ

দেশের প্রাচীনতম শিল্প প্রতিষ্ঠান ছাতক সিমেন্ট কারখানায় ভয়াবহ সিমেন্ট জালিয়াতির ঘটনায় কারখানার ৪ কর্মকর্তা ও ১জন ডিলারের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। অভিযোগপত্রে সাবেক দু’ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ৪ কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করে সিলেট দুর্নীতি দমন কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয় এ অভিযোগপত্র দাখিল করেন। সম্প্রতি সুনামগঞ্জ স্পেশাল আদালতে দাখিল করা অভিযোগ পত্রে একজন ডিলার ও ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরির ৪ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সিমেন্ট জালিয়াতির মাধ্যমে ১ কোটি ৬০ লক্ষ ৯৫ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযুক্তরা হলেন, কারখানার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক নেপাল কৃষ্ণ হাওলাদার ও কাজী রুহুল আমীন, উপ মহাব্যবস্থাপক আব্দুল বারী ও উপ

 

প্রধান হিসাব রক্ষক সিরাজুল ইসলাম ও কারখানার নিবন্ধিত ডিলার রুবেল মিয়া। জানা যায়, ছাতক সিমেন্ট কারখানার সিমেন্ট জালিয়াতির অভিযোগ এনে এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহনে ২০১৮ সালের ৩ জানুয়ারী প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা আতিকুল হক, হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা রেজাউল করিম, হিসাব রক্ষণ বিভাগের কম্পিউটার অপারেটর ইছতিয়ার এং সম্পা ও হানিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক, শহরের ফকিরটিলা এলাকার মৃত কালা মিয়ার পুত্র সিমেন্ট ডিলার রুবেল মিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতিদমন কমিশন ঢাকা, পুলিশ মহাপরিচালক, শিল্প মন্ত্রনালয়ের সচিব, বিসিআইসি কেন্দ্রিয় কার্যালয়, দুর্নীতিদমন কমিশন সিলেট ও সুনাগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবরে পৃথক লিখিত অভিযোগ দেন শহরের ফকিরটিলা এলাকার শাহ তেরা মিয়ার পুত্র শাহ আরজ মিয়া।

 

মেসার্স সম্পা এন্ড সন্স এবং হানিফ এন্টাপ্রাইজ নামক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধীকারী রুবেল মিয়া ২০১৭ সালের ২ নভেম্বর থেকে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত পূবালী ব্যাংক ছাতক সিমেন্ট কারখানা শাখার কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করে ৮টি ভূয়া ক্রেডিট ভাউচারের মাধ্যমে সিমেন্ট উত্তোলনের জন্য কারখানার সংশ্লিষ্ট শাখায় জমা দিয়ে ৯২ লাখ ৫০ হাজার টাকার সিমেন্ট উত্তোলন করে নেয়। এ ছাড়া রূপালী ব্যাংক কাপ্তান বাজার শাখার সাবেক ম্যানেজার মাসুদুর রহমান ও কর্মকর্তা বিকাশ দত্তের যোগসাজসে ২ কোটি টাকার ভূয়া ব্যাংক গ্যারান্টি সনদ-জালিয়াতির মাধ্যমে আরো ১ কোটি ৬০ লাখ ৯৫ হাজার টাকার সিমেন্ট উত্তোলন করেছেন বলে মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। ১৩ ডিসেম্বর ছাতক পূবালী ব্যাংকের দেয়া মাসিক হিসাব বিবরনীতে এ ভয়াবহ জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়ায় কারখানার হিসাবরক্ষন কর্মকর্তা রেজাউল আলম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। এটি ছিল ছাতক সিমেন্ট কারখানার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ও ভয়াবহ সিমেন্ট জালিয়াতির ঘটনা। ব্যাংক গ্যারান্টি ও ক্রেডিট ভাউচার জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়লে অভিযুক্ত সিমেন্ট ডিলার রুবেল মিয়া, কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে টাকা আতœসাতের দায়

 

 

স্বীকার করে ৩শ’ টাকার নন-জুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্পে একটি অঙ্গির নামায় স্বাক্ষর করেন এবং জালিয়াতির মাধ্যমে আতœসাৎ হওয়া ২ কোটি ৫৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ফেরত দেয়ার জন্য ডিলার রুবেল মিয়া তিনটি ব্যাংকের নিজ একাউন্টের ২৭টি চেক স্বাক্ষর করে কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেন। এসময় সম্পা ও হানিফ এন্টারপ্রাইজের নামে ভূঁয়া ৮টি ভাউচারে ৯২ লাখ টাকা আত্মসাতে জড়িত থাকার অভিযোগ এনে কর্তৃপক্ষ কারখানার সহকারী প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা আতিকুল হক, হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা রেজাউল করিম ও হিসাব রক্ষণ বিভাগের কম্পিউটার অপারেটর ইছতিয়ার আলমকে অফিসিয়াল নোটিশ প্রদান করেন। এসময় জালিয়াতির বিষয়ে ২০১৭ সালের ২৫ ডিসেম্বর ছাতক সিমেন্ট কারখানা থেকে বিসিআইসি বোর্ড চেয়ারম্যান বরাবরে লিখিতভাবে জানানো হয়। ২০১৮ সালের ৩ জানুয়ারী ৩৭৭ তম সিসিসিএল এন্টারপ্রাইজ বোর্ড সভায় অর্থ আতœসাৎ ও জালিয়াতির বিষয়টি উপস্থাপন করেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ওই সভায় শিল্প মন্ত্রনালয়ের একজন উপ-সচিব ও বিসিআইসি প্রধান

 

কার্যালয়ের দু’জন কর্মকর্তা সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়। পরবর্তীতে ওই গঠিত তদন্ত কমিটির সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে জালিয়াতির বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ নেয়ার সুপারিশ করা হয়। জালিয়াতির ঘটনার প্রায় ৯ মাস পর কারখানার অতিরিক্ত ব্যবস্থাপক, বিভাগীয় প্রধান(প্রশাসন) রেজাউল করিম বাদী হয়ে ছাতক থানায় দুটি মামলা দায়ের করেন। ওই দু’মামলায় ডিলার রুবেল মিয়াকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। এ ছাড়া মামলা দুটির একটিতে রূপালী ব্যাংক ঢাকা কাপ্তান বাজার শাখার সাবেক ম্যানেজার মাসুদুর রহমান ও একই শাখার সাবেক সিনিয়র কর্মকর্তা বিকাশ দত্তকেও আসামী করা হয়। ব্যাংকের সাবেক ম্যানেজার মাসুদুর রহমান ও কর্মকর্তা বিকাশ দত্তের যোগসাজসে ২ কোটি টাকার ভূয়া ব্যাংক গ্যারান্টি সনদ জালিয়াতির মাধ্যমে ১ কোটি ৬০ লাখ ৯৫ হাজার টাকার সিমেন্ট উত্তোলন করেছেন বলে মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে।

 

এদিকে সিমেন্ট জালিয়াতির ঘটনায় বিসিআইসি কার্যালয় থেকে দায়িত্ব অবহেলা ও গাফিলতির কারনে ওই সময় ছাতক কারখানার সাবেক (ভারপ্রাপ্ত) ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী রুহুল আমিন, জিএম(ভারপ্রাপ্ত) প্রকৌশলী আবু সাঈদ, সাবেক জিএম(ভারপ্রাপ্ত), অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী নেপাল কৃষ্ণ হালাদার, উপ-মহাব্যবস্থাপক আব্দুল বারী, উপ-প্রধান হিসাব রক্ষক সিরাজুল ইসলাম, সহ-প্রধান হিসাব রক্ষক আতিকুল হক ও হিসাব কর্মকর্তা রেজাউল করিমকে নোটিশ প্রদান করে ১০দিনের মধ্যে কারণ দর্শাতে বলা হয়। ঘটনার প্রায় ৯ মাস পর কারখানা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ছাতক থানায় মামলা(নং ১৭/২০১৮) দায়ের করা হয় এবং প্রায় ২ বছর পর ডিলার রুবেল মিয়াসহ সিমেন্ট কারখানার ৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চার্জসিট প্রদান করে দুদক সিলেট।

Spread the love

Follow us

আর্কাইভ

December 2023
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031