সিলেট ৭ই ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:৫০ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২০
অন্তরা চক্রবর্তীঃ
দাই মা,(দন্নি মহিলা)এক সময় ছিলেন গ্রাম-অঞ্চলের গর্ভবর্তী মহিলাদের চিকিৎসক। কোন এক সময় গ্রামের কোন বউ গর্ভবর্তী হওয়ার সাথে সাথে পাশ্ববর্তী দাই মা‘(দন্নি মহিলা) দের কদর বেড়ে যেত। তখন দাই মা‘রা সে বাড়িতে গেলে মুরগী জবাই করে খাওয়ানো হত। রাত বিরাতে দাই মা‘দের ডাক পড়তো। আর দাই মা‘রা, ছুটে বেড়াতেন এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রাম পর্যন্ত। দাই মা‘রা ছিলেন গ্রামে সবার কাছে সবচেয়ে পরিচিত মুখ। তাদের কদর ছিল খুব বেশি।
কোন কোন ক্ষেত্রে গ্রাম্য ধনিদের বাড়িতে দাই মা‘দের তিন/চার দিন থাকতে হত।তাদের কে সবাই সম্মান করত ।কাজ শেষ করে আসার সময় দাই মা‘দের নতুন শাড়িসহ বিভিন্ন উপকৌঢন দেওয়া হত।সে সময় যে মহিলার সন্তান হয়েছে সে মহিলার বাপের বাড়ি থেকেও সংশ্লিষ্ট দাই মা‘দের জন্য আলাদা জিনিস পত্র দিতেন। মমতা ভরা হৃদয় দিয়ে তাদের ডাকা হত দাই মা‘ বা ধন্নী মা। কালের বিবর্তনে দাই মা‘দের সেই কদর শেষ হয়ে গেছে। এখন দাই মা‘দের সে কদর আর নেই। সব শ্রেনীর মানুষে সাথে তাদের পরিচয় তাকলেও প্রয়োজন নেই। প্রসুতি মেয়েরাও তাদের কে আর কাছে টানেন না। দাই মা‘রা ্এখন খুব কষ্টে জীবন-যাপন করছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ এখন আর এসব কাজ করেন না। তাদের জায়গায় এখন অবস্থান নিয়েছে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান। যার ফলে এখন তারা গ্রামের গর্ভবর্তী মহিলাদের শক্রু বলে গন্য হয়েছেন। অথচ এক সময় সিলেট অঞ্চলের প্রায় সকল গ্রামেই দাই মা‘দের বিচরন ছিল। গড়ে তিন /চার জন দাই মা‘ সকল গ্রামেই বাস করতেন।
গর্ভবর্তী মেয়েদের চিকিৎসার জন্য তাদের ডাক পড়ার সাথে সাথেই তারা সে বাড়িতে ছুটে যেতেন।সফল ভাবে সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পর পরিবারের অন্যদের মত তাদেরও আনন্দের সীমা থাকত না। তখন সেই পরিবারের গৃহকর্তা খুশি হয়ে দাই মা‘দের অনেক মূল্যবান জিনিস পত্র উপহার দিতেন। আর সেই প্রসবকৃত সন্তান বড় হওয়ার পর তাদের উপার্জনকৃত টাকা হতে মাঝে মাঝে সংশ্লিষ্ট দাই মা‘দেরও দিতেন নানা উপহার। তারা মায়ের মত দাই মা‘দেরকে শ্রদ্ধা করত। সে সময় গর্ভবর্তী মা কে সকল চিকিৎসা সেবা প্রদান করতেন দাই মা‘রা। এক সময় বালাগঞ্জ –ওসমানীনগর উপজেলায় প্রায় সহস্রাধিক দাই মা‘ ছিলেন তাদের মধ্যে প্রায় তিন শতাধিকের উপরে এখন বেঁচে আছেন বাকিরা আর বেঁচে নেই। অতিতে এক দাই মা‘ অন্য দাই মা‘দের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। একে অপরকে তাদের নতুন নতুন অভিজ্ঞতার কথা বলতেন।কিন্তুুুুুুুুুুুুুুুু এখন সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে সব কিছু হারিয়ে গেছে।
তারা আর একে অপরের সাথে যোগাযোগ রাখছেন না সবাই যার যার সংসার কর্ম নিয়ে ব্যস্ত। দাই মা‘দের মধ্যে অধিকাংশই অত্যান্ত কষ্টের মধ্যে জীবন-যাপন করছেন। কখন কখন কোন দাই মা‘র অন্য দাই মা‘দের সাথে দেখা হলে তারা শুধু মাত্র তদের নিজ নিজ সংসার কর্ম নিয়ে আলোচনা করেন। আগের মত তাদের আর গ্রামের প্রসুতি মেয়েদের নিয়ে আলোচনা করতে হয় না। কারন গ্রাম-অঞ্চলে দাই মা‘দের কদর ফুরিয়ে গেছে। এখন সবই কেবল স্থৃতি এবং অতীত। স্থানীয় একাধিক দাইমা রা বলেন,আধুনিক বিজ্ঞানের যোগে আমরা আজ হারিয়ে গেছি। আমাদের কদর আর নেই।
এক সময় আমরাই ছিলাম প্রসুতি মেয়েদের এক মাত্র ভরসা। আমাদের কদর ছিল খুব বেশি। দাই মা‘ জানান, এখন আমরা বড় অভাবের মধ্যে দিন যাপন করতেছি। আমার হাতে এই এলাকার প্রায় শত শত সন্তাান জন্ম কিন্তুু সেই সন্তানরা এখন আর আমার সাথে কথা বলে না । আর তাদের বাবা মাও আমাদের দেখলে অন্য দিখে তাকায়। আধুনিক যুগের ডাক্তারা আমাদের কদর কমিয়েছেন। কিন্তুু আজ যারা বড় বড় ডাক্তার হয়েছেন, তাদের মধ্যে অনেকেই হয়ত আমাদের মত কোন না কোন দাইমা‘ হাতে জন্ম নিয়েছিলেন, এখন তারা ডাক্তার হয়ে আমাদের কে ঘৃনা করে দূরে তাড়িয়ে দিচেছন।আমাদের সম্পর্কে সাধারন লোকের কাছে নিন্দা করেন। দাই,মা দের দাবি আধুনিক যুগের চিকিৎসকরা দাই মা‘দের ঘৃনা না করে ,উন্নত প্রশিক্ষনের মাধ্যমে দাই মা‘দের প্রসুতি কাজে আরো পারর্দশী করে তোলার ব্যাপারে উদ্যেগি হ্ওয়ার।
এলবিএন/০৯/এফ/অ/০৫-১