সিলেট ৬ই জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ২৩শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৩:৩১ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২০
অন্তরা চক্রবর্তীঃঃ
আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু মুসলমান মিলিয়া বাউলা গান আর ঘাটু গান গাইতাম হিন্দু বাড়িনত যাত্রা গান হইত নিমন্ত্রন দিতো আমরা যাইতাম, বর্ষা যখন হইতো গাজির গাইন আইতো রং ঢংয়ে গাইত, আনন্দ পাইতাম, কে হবে মেম্বার, কে গ্রাম সরকার আমরা কি তার খবর নিতাম দিন হতে দিন আসিতেছে কঠিন ……
এরকম অসংখ্য গানের স্রষ্টা ভাটি বাংলার বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম ১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার তারল ইউনিয়নের উজানধল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। আজ ২ ফাল্গুন (১৫ ফেব্রুয়ারি) অসংখ্য জনপ্রিয় গানের স্রষ্টা বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের ১০৪ তম জন্মবার্ষিকী।
বিভিন্ন গ্রন্থ থেকে জানা গেছে, ভাটি বাংলার বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের পিতার নাম ইব্রাহীম আলী ও মাতার নাম নাইওরজান। অভাবের সংসারে জন্ম তাঁর; নুন আনতে যেন পান্তা ফুরায়। পরিবারের ছয় সন্তানের মধ্যে শাহ আব্দুল করিম ছিলেন একমাত্র ছেলে; বাকিরা মেয়ে। দিনমজুর বাবার একমাত্র ছেলে সন্তান হওয়ায় শাহ আব্দুল করিমের ছেলেবেলা কেটেছে চরম দারিদ্র্য ও দুঃখ-কষ্টের মধ্যে। ফলে কোনো স্কুল-কলেজে ভর্তি হয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জনের সুযোগ পাননি তিনি। যে বয়সে তাঁর স্কুলে থাকার কথা, সে বয়স তাঁকে কাটাতে হয়েছে গরু রাখার কাজে। একটা সময় তাঁকে বাধ্য হয়ে গরু রাখার চাকরিও নিতে হয়েছিল। কিন্তু ছোটবেলা থেকে সংগীতের প্রতি একটি ঝোঁক তাঁকে সব সময় আচ্ছন্ন করে রাখত। মাঠে গরু চরানোর সময় তাঁর হাতে থাকত একতারা। এই একতারাতেই সুর তুলে আপন মনে গেয়ে যেতেন। কিন্তু কেউ কি জানত গ্রামের সেই রাখাল ছেলে একদিন দেশের বাউলসম্রাট উপাধি পেয়ে দেশে-বিদেশে এতটা খ্যাতি অর্জন করবে। শাহ আব্দুল করিমের ছোটবেলায় পাড়া গাঁয়ে লেখাপড়ার কোনো পরিবেশ ছিল না। গ্রামে ছিল না স্কুল-কলেজ। আর দরিদ্র হলে তো কথাই নেই। লেখাপড়া ছিল একেবারেই অসম্ভব।
তিনি ১৫ বছর বয়সে লেখাপড়ার উদ্দেশ্যে যে নৈশ বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন, সেটিও বন্ধ হয়ে যায় তাঁর ভর্তির আট দিনের মাথায়। অন্য কোনো স্কুলে ভর্তি হবেন সে সুযোগও হয়নি। ফলে এই অক্ষরজ্ঞানই ছিল তাঁর একমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। তবে তিনি ছোটবেলাতেই গানের তামিল নিতে ভুল করেননি। তাঁর গানের ওস্তাদ ছিলেন করম উদ্দিন, সাধক রশিদ উদ্দিন ও শাহ ইব্রাহিম মাস্তান। মাত্র আট দিনের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নিয়ে বেড়ে ওঠা এ বাউল শিল্পী তাঁর তিরানব্বই বছরের জীবনে দেড় হাজারেরও বেশি গান রচনা করেছেন; করেছেন সুরারোপ। তাঁর গানগুলো প্রথম দিকে শুধু ভাটি বাংলায় জনপ্রিয়তা পেলেও কালক্রমে তা ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে।
এদিকে বাউল শাহ্ আব্দুল করিমের জন্মদিন উপলক্ষে উজান ধলের বাড়িতে মিলাদ মাহ্ফিল, শিরনি বিতরণ এবং সন্ধ্যার পর থেকে বসবে বাউল আসর।