ক্যাসিনো ব্রাদার্সের ১৩০ ফ্ল্যাটের খোঁজ

প্রকাশিত: ৮:৫৯ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৩, ২০২০

ক্যাসিনো ব্রাদার্সের ১৩০ ফ্ল্যাটের খোঁজ

ক্যাসিনো ব্রাদার্স এনামুল হক এনু ও রূপন ভূঁইয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আরও ১৩০ ফ্ল্যাটের খোঁজ পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। রিমান্ডে তারা ২০০০ সালের পর থেকে ১০০ ফ্ল্যাট এবং ২২টি বাড়ির মালিক হওয়ার কথা স্বীকার করেছে। ঢাকাতেই তাদের ছোট ছোট মাপের ৭০টি জায়গা পাওয়া গেছে। এ ছাড়াও ঢাকার বাইরে তাদের ৪ বিঘা জমিরও সন্ধান মিলেছে। এসবের সিংহভাগ ৩-৪ বছর আগে কেনা। তবে এখন তাদের পাঁচটি বিলাসবহুল গাড়ি ও ব্যাংকে থাকা কোটি টাকার বেশি জব্দ রয়েছে।

 

সিআইডির তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, জিজ্ঞাসাবাদে তাদের দেওয়া তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করে দেখছেন তারা। এমনকি মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তারা দুই ভাই গেন্ডারিয়া আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ বাগিয়ে নেন। স্থানীয় ইউনিট কমিটির কয়েকটি পদও নিজ পরিবারের সদস্যদের জন্য তারা কিনে নিয়েছিল। আর ক্যাসিনোর টাকাতেই বাড়ি, ফ্ল্যাট, গাড়ি ও স্বর্ণালঙ্কার কিনে রাখত। তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির ইকোনমিক ক্রাইম স্কোয়াডের পরিদর্শক মেহেদী মাসুদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৪ জানুয়ারি সূত্রাপুর থানার অর্থ পাচার মামলার আসামি গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রূপন ভূঁইয়া এবং গেন্ডারিয়া থানার অর্থ পাচারের আরেক মামলায় গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এনামুল হক এনুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।

 

একই সঙ্গে তাদের সহযোগী শেখ সানি মোস্তফাকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়ারও অনুমতি দেন ঢাকা মহানগর হাকিম রাজেশ চৌধুরী। এর আগে ১৩ জানুয়ারি ভোরে ঢাকার কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যায় শ্যামল ছায়া কমপ্লেক্স নামে ১০ তলা একটি ভবনের ৫ তলা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। সিআইডি সূত্র জানায়, পুরান ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ডাকাত শহীদ এক সময় যেসব খাত থেকে চাঁদা তুলত, সেসব খাত এই দুই ভাই নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন। গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর গেন্ডারিয়ায় এনু-রূপনের বাসায় অভিযান চালিয়ে বিপুল অর্থ ও স্বর্ণ জব্দ করেছিল র‌্যাব। র‌্যাবের এ অভিযানের পরপরই গা-ঢাকা দেন দুই ভাই। প্রথম তিন দিন ঢাকাতেই পালিয়ে ছিলেন তারা। সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার ফারুক হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, তাদের সম্পদ দেখাশোনার জন্য একজন নির্দিষ্ট উপদেষ্টা ছিল। জায়গা-জমির দলিলপত্র দেখভালের জন্য একজন ভেন্ডর নিয়োগ করা ছিল। তাদের গ্রেফতারের জোর চেষ্টা চলছে। তারা গ্রেফতার হলে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে। সিআইডি সূত্র জানায়, ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের পর বিদেশ পালানোর জন্য এক দালালের সঙ্গে তাদের ৩০ হাজার টাকার চুক্তি হয়েছিল। শামীম পরিচয়ে পাসপোর্ট বানাতে চেয়েছিলেন রূপন।

 

তবে এনু তার নকল নাম ঠিক করেননি। যে দালালের সঙ্গে তারা চুক্তি করেছিলেন সেই দালালকে শনাক্ত করা গেছে। এ ছাড়া কেরানীগঞ্জে পালিয়ে থাকাবস্থায় বিশ্বস্ত কর্মচারী মোস্তফা ছাড়াও আরও দুই ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি তাদের মোবাইলে কথা বলতেন। তাদের মাধ্যমে অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন দুই ভাই। ওই দুই সহযোগীকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। জানা যায়, এনু-রূপন সাত ভাই ও এক বোন। তার বাবা একসময় আজাদ ক্লাবে নিয়মিত জুয়া খেলতে যেতেন। দুজনে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। আগে তারা পুরান ঢাকায় লেদ মেশিনের দোকানে কাজ করতেন। এরপর শুরু করেন লোহার শিটের ব্যবসা। তারা দুই ভাই বাবার সঙ্গে প্রায়ই আজাদ ক্লাবে যেতেন। পরে ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সঙ্গে তারা জড়ান। প্রথমে ওই ক্লাব ভাড়া নিয়ে ওয়ান-টেন খেলার ব্যবস্থা করেন এনু-রূপন। এরপর তারা ক্যাসিনো কারবারে নামেন। বছর তিনেক আগে পরিচয় হয় নেপালি নাগরিক হ্যারির সঙ্গে। হ্যারি তাদের হয়ে ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে ক্যাসিনো গেমের আসর বসান।

 

ক্যাসিনোর সরঞ্জাম হ্যারির মাধ্যমে ক্লাবে ঢোকে। লাভের নির্দিষ্ট অঙ্ক তারা পেতেন। প্রতিদিন রাত ১০টার দিকে দুই ভাই ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে যেতেন। ওই সময় হ্যারির কাছ থেকে লাভ-লোকসানের হিসাব নিতেন তারা। ক্যাসিনো চালানো শুরু করার পর প্রতিদিন তাদের বড় অঙ্কের টাকা লাভ থাকত। মূলত বাবার হাত ধরে বড় ধরনের জুয়াড়ি হয়ে ওঠেন তারা। এ জুয়ার মাধ্যমে বদলে ফেলেন নিজেদের জীবন। ক্যাসিনোর টাকায় বাড়ি কেনাটা দুই ভাইয়ের নেশা ছিল।

Spread the love

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

আর্কাইভ

February 2025
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
2425262728