সিলেট ১০ই জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ২৭শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৭:২৭ অপরাহ্ণ, মে ১৬, ২০২৩
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃঃ
থাইল্যান্ডের ভোটাররা দেশটির সেনা-সমর্থিত সরকারকে প্রত্যাখ্যান করেছে। এবারে থাইল্যান্ডের নির্বাচনে ভূমিধস জয় পেয়েছে পিটা লিমজারাট-এর দল ‘মুভ ফরওয়ার্ড’। যেকোনো দলের তুলনায় ‘মুভ ফরওয়ার্ড’ পার্টি আসন এবং ভোট দুটোই বেশি পেয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ৪২ বছর বয়সী পিটা দেশটির পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন। খবর বিবিসির। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাথমিক ফলে সব প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি থাই পার্লামেন্টের নিম্ন-কক্ষের ৫০০ আসনের মধ্যে ১৫১টি আসনে জয়লাভ করেছে। পিটা লিমজারাটের মুভ ফরওয়ার্ড ব্যাংককেই ৩৩টি আসনের মধ্যে ৩২টি পেয়েছে।
দেশটির সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী পিটা লিমজারাট দেশটির এক ধনী পরিবারের সদস্য। তার পরিবারের সঙ্গে রাজনীতির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। পিটার বাবা ছিলেন থাইল্যান্ডের কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা। পাশাপাশি তার চাচা ছিলেন দেশটির ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াতের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। পিটা বলেছেন, রাজনীতিতে তিনি আগ্রহী হয়ে উঠেন নিউজিল্যান্ডে স্কুলে ছাত্র থাকাকালে। থাইল্যান্ডের থামাসাট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থশাস্ত্রে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন পিটা। এরপর হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাবলিক পলিসিতে মাস্টার্স করেন। ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি থেকে করেছেন এমবিএ। তবে সরাসরি রাজনীতিতে যোগদানের আগে পিটা তার বাবার ব্যবসায় যোগ দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন।
পরে তিনি রাইড শেয়ারিং কোম্পানি গ্র্যাবের নির্বাহী পরিচালকও ছিলেন। থাই অভিনেত্রী এবং মডেল চুটিমা টিনপানাটকে বিয়ে করেছিলেন পিটা। কিন্তু পরবর্তীতে তাদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। বর্তমানে সাত বছর বয়সী মেয়ে পিপিমকে নিয়ে একাই থাকেন পিটা লিমজারাট। পিটার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু হয় ২০১৯ সালে ‘ফিউচার ফরোয়ার্ড পার্টি’ থেকে এমপি নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে। এই দলটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন থাইল্যান্ডের বিলিওনিয়ার ও সেনাবাহিনীর কট্টর সমালোচক থানাথর্ন জুংরুংগ্রুয়াংকিট। থাইল্যান্ডের রাজনীতিতে পরিবর্তনের ডাক দিয়ে ‘ ফিউচার ফরোয়ার্ড পার্টি’ ২০১৯ সালের নির্বাচনে ভালো ফলাফল করে এবং দেশটির রাজনীতিতে নাড়া দেয়।
থাইল্যান্ডে ২০২০ সালে প্রায় মাস-খানেক ধরে ছাত্রদের নেতৃত্বে যে বিক্ষোভ হয়েছিল। সেখানে নেতৃত্ব দিয়েছিল ‘মুভ ফরোয়ার্ড’পার্টি। এবার নির্বাচনে ‘মুভ ফরোয়ার্ড’ প্রার্থীদের অনেকেই ছিলেন সেই আন্দোলনের নেতা। আর ২০২০ সালের সেই বিক্ষোভের মতো মুভ ফরোয়ার্ড পার্টির বিজয়েও বড় ভূমিকা রেখেছে তরুণ, নিবেদিতপ্রাণ ভোটাররা। থাইল্যান্ডের রাজতন্ত্রপন্থী সামরিক অফিসার, আমলা এবং বিচারকরা তখন রীতিমত জোট বেঁধে সাংবিধানিক আদালতের মাধ্যমে এই দলটিকে বিলুপ্ত করে। তখন এই দলের নেতাদের রাজনীতিতে নিষিদ্ধ করে। দলটির নেতা থানাথর্নকে সংসদ সদস্য পদে অযোগ্য করা হয়। এর পরপরই ‘মুভ ফরোয়ার্ড’ পার্টি গঠন করে পিটা লিমজারাটকে নতুন নেতা নির্বাচন করা হয়।
ফিউচার ফরোয়ার্ড পার্টিকে’ নিষিদ্ধ করার পরে থাইল্যান্ডে হাজার হাজার তরুণ রাস্তায় নেমে আসে বিক্ষোভ করতে। তাদের দাবি ছিল, সংবিধান সংস্কার, নতুন নির্বাচন এবং ভিন্ন মতাবলম্বী মানবাধিকার কর্মীদের হয়রানির প্রতিবাদে। পিটা লিমজরাটকে একসময় বলা হতো থাইল্যান্ড পার্লামেন্টের ‘উদীয়মান নেতা’ হিসেবে। বিরোধী এমপি হিসেবে পিটা লিমজারাট পার্লামেন্টে যেসব বক্তৃতা দেন, তা দ্রুত সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তিনি রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর ভূমিকা খর্ব করা এবং রাজতন্ত্র সম্পর্কিত আইনে সংস্কারের পক্ষে বলিষ্ঠ অবস্থান নিয়ে কথা বলছিলেন।