সিলেট ২রা অক্টোবর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৭:২৮ অপরাহ্ণ, জুলাই ৬, ২০২৩
সাজুৃ আহমদঃঃ
গত জুন মাসে ছিল রেকর্ড গরম । পৃথিবীর ৭২ টা দেশে গত জুন মাস সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড সংরক্ষনের পর থেকে উল্লেখযোগ্য হারে নদীতে মারা যাচ্ছে মাছ। গ্রীষ্মকাল অনেকের কাছে পছন্দের হতে পারে, কিন্তু তাপপ্রবাহ আমাদের শরীরের জন্য অনেক সময় ক্ষতির কারণও হতে পারে। তবে গরমের সঙ্গে সঙ্গে এই সময় নানা ধরণের রোগব্যাধিও বাড়তে দেখা যায়। কোন কোন রোগ গরমের শুরুতে দেখা যায়। আবার কোন কোনটি তীব্র গরমের সময় প্রকট হয়ে ওঠে।
অতিরিক্ত গরমের জন্য দায়ী করা হচ্ছে মানব সৃষ্ট জলবায়ুর পরিবর্তনকে। গত বছর হারিয়ে গেছে সুইজারল্যান্ড এর মতো সমপরিমাণ বনভূমি বিশ্ব থেকে। গত জুন মাসকে রেকর্ড গরম মাস হিসাবে ঘোষণা করেছে ব্রিটেনের আবহাওয়া অফিস. দিনে ও রাতে গড়ে তাপমাত্রা ছিল ১৫.৮ ডিগ্রি যা ১৯৪০ সালের গড় তাপমাত্রা ১৪.৯ ডিগ্ৰী কে ছাড়িয়ে যায়।
এ ব্যাপারে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে লন্ডনের মেট্রো পত্রিকা। এই অতিরিক্ত গরমের কারণে নদীর পানির তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় উল্লেখযোগ্য হারে মারা যাচ্ছে মাছ কারণ পানিতে অক্সিজেনের পরিমান কমে যাচ্ছে। অতিরিক্ত গরমের কারণে শুধু মাছ নয়, অন্যান্য ছোট ছোট জলজ প্রাণী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে ক্যানেল ও রিভার ট্রাস্টের মুখপাত্র জন এলিস জানিয়েছেন।
গরমের কারণ মানব সৃষ্ট জলবায়ুর পরিবর্তনকে দায়ী করেছেন ক্লাইমেট এক্সট্রিম সংগঠনের পল্ ডেভিস। এই মানবসৃষ্ট জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে শুধু ইউকে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে না। পৃথিবীর ৭২ টা দেশে গত জুনে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পরিলক্ষিত হয় যেটা ১৮৮৪ সালে রেকর্ড লিপিবদ্ধ করার পর থেকে সর্বোচ্চ বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়।
এই তাপমাত্রা সর্বোচ্চ, সর্বনিম্ন ও গড় তাপমাত্রাতে ও সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে বলে ব্রিটেনের আবহাওয়া অফিসের মুখপাত্র মার্ক জানিয়েছেন।
ওয়াইল্ডলাইফ ট্রাস্টের আলি মরস এর মতে – যদি একবারের জন্য পরিবেশ দূষণ হতো অথবা দাবানলের কারণে আবহাওয়ার পরিবর্তন হতো তাহলে প্রকৃতি নিজে থেকে বিশুদ্ধ হওয়ার সুযোগ পেতো কিন্তূ প্রতিনিয়ত আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়া বিধ্বংসী রূপ নিচ্ছে। পৃথিবীর সকল রাষ্ট্রের প্রধানরা জলবায়ু পরিবর্তন বন্ধে কার্বন নিস্সরণ ও প্রকৃতি সংরক্ষণের জন্য প্রতিজ্ঞা করলে ও এক রিপোর্টে দেখা গেছে, সুইজারল্যান্ড এর মতো সমপরিমাণ জায়গার বনভূমি উধাও হয়েছে। বিশ্ব থেকে গত বছরে পরিবেশ দূষণ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের প্রথম পুর ও পরিবেশ প্রকৌশল বিভাগের ছাত্র বর্তমানে পুর ও পরিবেশ প্রকৌশলী ও সাংবাদিক সাজু আহমদ জানান- পরিবেশ দূষণ বলতে সাধারণত পানি দূষণ, বায়ু দূষণ ও মাটি দূষণ কে বলা হয়। যুক্তরাজ্যে পানি ও মাটি দূষণ মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে থাকলে ও বায়ু দূষণ এদেশে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে. এতে ধ্বংস হচ্ছে বিলেতের স্বাস্থ খাত ও অর্থনীতি এবং বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনে রাখছে চরম নেতিবাচক ভূমিকা।
তিনি বলেন, সরকারি হিসাব মতে সারা যুক্তরাজ্যে প্রতি বছর বায়ু দূষণের কারণে প্রতি বছর মারা যাচ্ছে ২৮ হাজার থেকে ৩৬ হাজার মানুষ এবং শুধু লন্ডনে মারা যাচ্ছে ৪ হাজার মানুষ। এতে প্রতি বছর এনএইচএস সহ অন্যান্য খাতে প্রতি বছর খরচ হচ্ছে ১.৬ বিলিয়ন পাউন্ড. বায়ু দূষণের প্রধান কারণ যানবাহন। এদেশে প্রায় প্রতিটা ঘরে দেখা যায় ২ টা থেকে ৪ টা গাড়ি, জার্মান সহ ইউরোপের অন্যান্য দেশে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট নামমাত্র মূল্যে অথবা ফ্রি থাকলে ও বিলেতে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট অত্যন্ত ব্যায়বহুল।
এতে মানুষ বাধ্য হয়ে চড়ছে নিজেদের গাড়ি। বাতাসের মধ্যে ছড়িয়ে যাচ্ছে কার্বন ডাই অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, জিঙ্ক , লিড, নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড সহ বিভিন্ন ধরণের বিষ. যা মানুষের স্বাস্থ ও জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য অন্যতম দায়ী। সরকার এ ব্যাপারে অত্যন্ত উদাসীন।
যুক্তরাজ্যে রেকর্ডভাঙা তাপপ্রবাহের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে আগুন। দেশটির রাজধানী লন্ডনে প্রথমবারের মতো তাপমাত্রা ছাড়িয়েছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০ জুলাই এ ঘটনায় লন্ডনের দমকল কর্তৃপক্ষ রাজধানীতে ‘জরুরি অবস্থা’ জারি করেছিলো। লন্ডন ফায়ার ব্রিগেড বলেছে, ৪০০-এর বেশি দমকলকর্মী মঙ্গলবার বিকাল থেকে শুরু হওয়া অন্তত ৯টি দাবানলের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। শহরের বিভিন্ন স্থানে কয়েক ডজন অগ্নিনির্বাপক ইঞ্জিন মোতায়েন করা হয়েছে। পূর্ব লন্ডনের গাছপালায় লাগা আগুন নেভাতে অন্তত ৩০টি ইঞ্জিন কাজ করেছে।
বিশেষ করে লন্ডনে পিক, অফপিক এর বেড়াজাল ও বিভিন্ন এলাকাতে বৈষম্যমূলক টিকেটের দাম রাখাতে মানুষ বাধ্য হয়ে ব্যবহার করছে নিজেদের গাড়ি পাবলিক ট্রান্সপোর্ট থাকার পরও. আর লন্ডনের আশেপাশের ও জনপ্রিয় শহরগুলোতে রয়েছে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট এর স্বল্পতা ও অত্যধিক টিকেটের দাম۔ এর ফলে ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ এবং ঘটছে জলবায়ুর পরিবর্তন. এ ব্যাপারে মানুষের সচেতনতা ও সরকারের আশু পদক্ষেপ জরুরি বলে তিনি মনে করেন।