নাম পরিবর্তন হওয়া যত দেশ

প্রকাশিত: ১:৩৩ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৩

নাম পরিবর্তন হওয়া যত দেশ
Spread the love

১০ Views

লন্ডন বাংলা ডেস্কঃঃ

শোনা যাচ্ছে দেশের নাম ‘ইন্ডিয়া’ থেকে পরিবর্তন করে ‘ভারত’ করা হতে পারে। চলতি মাসের শেষে বিশেষ অধিবেশনও ডেকেছে কেন্দ্রীয় সরকার। ধারণা করা হচ্ছে, তখনই আনা হতে পারে নাম বদলের প্রস্তাব। ইন্ডিয়াই যে এই প্রথম নাম বদল করছেন বিষয়টি এমন নয়। এর আগেও বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ নাম বদল করেছে। এর পেছনে রয়েছে নানা কারণ। কেউ ভাবমূর্তি বদলের জন্য, কেউ আবার সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে বদলেছে নিজ দেশের নাম। নাম পরিবর্তন হওয়া দেশগুলো নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন। ইন্টারনেট থেকে তথ্য নিয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন আজহারুল ইসলাম অভি

ইরান

মহান কুরুশের প্রতিষ্ঠিত হাখমানেশি সাম্রাজ্য (৫৫০-৩৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) হলো প্রথম পারস্য সাম্রাজ্য। এই সাম্রাজ্যের ব্যাপ্তি ছিল বলকান থেকে উত্তর আফ্রিকা ও মধ্য এশিয়া। তা তিনটি মহাদেশে বিস্তৃত ছিল এবং এর ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু ছিল পার্সা। এটি এখন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত সর্ববৃহৎ সাম্রাজ্য এবং প্রথম বৈশ্বিক সাম্রাজ্য। এ পারস্য সাম্রাজ্যই নাম পরিবর্তন করে এখন ইরান নামে পরিচিত। নাম পরিবর্তনের তালিকায় প্রথম দেশ ইরান। ২১ মার্চ ১৯৩৫ সালের ফার্সি নববর্ষে রেজা শাহ এ ঘোষণা দিয়েছিলেন। আনুষ্ঠানিকভাবে তার দেশের নাম ‘পারস্য’ থেকে ‘ইরান’ রাখা হয়। তিনি অনুভব করেছিলেনÑ পারস্য নামটি খুবই ঔপনিবেশিক, প্রাচ্য ও সেকেলে। ‘পারস্য’ নামটি যেন অতীতের কথা বলেছিল, ভবিষ্যতের কথা নয়।

তুর্কিয়ে

পশ্চিম এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের একটি রাষ্ট্র তুরস্ক। প্রাচ্যে ‘তুরস্ক’ নামে পরিচিত হলেও দেশটির মূল নাম ছিল টার্কি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তুরস্কের রাজধানী আনকারার পক্ষ থেকে করা হয় নাম পরিবর্তনের আবেদন। ওই দেশের নামও বদলানো হয়। ২০২২ সালের জুনে জাতিসংঘকে এই দেশ জানায়, তাদের যেন ‘তুর্কিয়ে’ নামে ডাকা হয়। বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, গত বছরের ডিসেম্বরে রিসেপ তাইয়্যেব এরদোগান এক ভাষণে বলেছিলেনÑ তুরস্কের সংস্কৃতি, সভ্যতা ও মূল্যবোধের বেশি প্রতিনিধিত্ব হয় ‘তুর্কিয়ে’ শব্দ দিয়ে। প্রেসিডেন্ট এরদোগানের এ ঘোষণার পর পরই দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম টিআরটি বিভিন্ন সময় নাম পরিবর্তনের যৌক্তিক কারণ ব্যাখ্যা করেছে। সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, তুরস্ককে ‘বিশ্বের সামনে নতুন করে পরিচিত’ করানোর পাশাপাশি নাম পরিবর্তন বেশ কয়েকটি কারণে জরুরি। এর মধ্যে একটি হলো পশ্চিমা বিশ্বে ক্রিসমাস, নববর্ষ ও থ্যাংকসগিভিং উৎসবের সময় ঐতিহ্যগতভাবে টার্কি মুরগির মাংস খাওয়া হয়। ওই জায়গা থেকেও টার্কির নাম পরিবর্তন জরুরি। শুধু তা-ই নয়, ক্যামব্রিজ ডিকশনারিতে টার্কি বলতে ‘ব্যর্থ’ ‘নির্বোধ’ বা ‘বেকুব ব্যক্তি’কে বোঝানো হয়। নতুন নাম পরিচিত করার ক্যাম্পেইনের আওতায় তুরস্কে উৎপাদিত সব পণ্যে এখন ‘মেড ইন তুর্কিয়ে’ লেখা থাকবে। দেশটির পর্যটন খাতে সেøাগান হিসেবে ব্যবহার করা হবে ‘হ্যালো তুর্কিয়ে’।

দ্য নেদারল্যান্ডস

নেদারল্যান্ডস ইউরোপ মহাদেশের একটি রাষ্ট্র। এর রাজধানীর নাম আমস্টারডাম। পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি পানির শহর দ্য নেদারল্যান্ডস। এর চার ভাগের এক ভাগ নদী-নালা, খাল-বিলে ভরা। ক্যানেল বা নৌপথ এ শহরের সবচেয়ে বড়। আমস্টারডামে ১০০ কিলোমিটারের বেশি ক্যানাল এবং দেড় হাজারের মতো ব্রিজ আছে। পানির শহর নেদারল্যান্ডসের পূর্ব নাম ছিল হল্যান্ড। কিন্তু হল্যান্ড নাম শুনলেই বিশ্ববাসীর কাছে যে দৃশ্য ভেসে ওঠে, তা হলো নানা অপকর্মের দেশ হল্যান্ড। মাদকের আস্তানা যেন দেশটি। তাই দেশের ভাবমূর্তি রক্ষার লক্ষ্যে দেশটির নামই পাল্টে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয় দেশটির সরকার। নেদারল্যান্ডস সরকারের একটি সূত্র জানিয়েছেÑ মাদকের রমরমা, দেহ ব্যবসার কারণে ইউরোপের এই দেশের বেশ বদনাম হয়েছিল ও নেতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে উঠেছিল। ওই ভাবমূর্তি পরিবর্তনের কারণেই নাম বদলের ভাবনা। ২০২০ সাল থেকে পুরো ব্যবসায়ী সমাজ, পর্যটন বোর্ড ও কেন্দ্রীয় সরকারের সর্বত্র এ নাম চালু হয়। তবে কোথাও কোথাও এখনো হল্যান্ড নামটি রয়েছে।

কম্বোডিয়া

দেশটির আগে নাম ছিল কাম্পুচিয়া। এর ইংরেজি ‘অনুকরণ’ হলো কম্বোডিয়া। ১৯৭৬ সালে ওই দেশের কমিউনিস্ট শাসকরা দেশকে কাম্পুচিয়া বলে অভিহিত করতেন। কমিউনিস্ট শাসনের অবসান হওয়ার পর দেশের নাম বদলে সরকারিভাবে ‘কম্বোডিয়া’ রাখা হয়।

কঙ্গো

১৯৯৭ সালে বেশকিছু রাজনৈতিক উত্থান-পতন ও সংঘর্ষের পর জায়ারের নাম পরিবর্তন করে ডেমোক্র্যাটিক ‘রিপাবলিক অব কঙ্গো’ রাখা হয়। পরিবর্তনটি দেশটিকে মোবুতু সেসে সেকোর কর্তৃত্ববাদী শাসন থেকে দূরে রাখতে চেয়েছিল। তিনি তিন দশকেরও বেশি স্বৈরশাসক হিসেবে দেশটিকে শাসন করেছিলেন। নতুন নামটি গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় প্রত্যাবর্তনের ওপর জোর দিয়েছে।

কাবো ভের্দে

আফ্রিকা মহাদেশের পশ্চিম উপকূলের কাছে অবস্থিত একটি দ্বীপরাষ্ট্র কাবো ভের্দে। আটলান্টিক মহাসাগরের দ্বীপ দেশটির অ্যাংলো নাম ‘কেপ ভের্দে’। দেশটির সরকার ২০১৩ সালে তাদের মূল পর্তুগিজ নাম ‘কাবো ভের্দে’তে ফেরত যাওয়ার জন্য আবেদন করে। এই নামের অর্থ হলো ‘সবুজ অন্তরীপ। ১৪৬০ সালে পর্তুগিজদের আগমনের আগে কাবো ভের্দেতে কোনো মানব বসতি ছিল না। তারা ১৪৬০ সালে এ দ্বীপটিকে তাদের সাম্রাজ্যের অধীন আনে। অবস্থানগত দিক থেকে আফ্রিকার উপকূলে হওয়ার কারণে কাবো ভের্দে প্রথমে একটি গুরুত্বপূর্ণ পানি সরবরাহ কেন্দ্র, চিনি উৎপাদন কেন্দ্র এবং পরবর্তীকালে দাস ব্যবসায়ের প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হয়।

মিয়ানমার

বর্মি সম্প্রদায়ের মানুষ ছিল দেশে সংখ্যাগুরু। এ কারণে ভারতের পূর্বের দেশটির নামও ছিল বার্মা। তৎকালীন বার্মার গণতান্ত্রিক সরকারের উৎখাতের পর ১৯৮৯ সালে সেখানকার সামরিক সরকার বার্মার নতুন নামকরণ করে ‘মিয়ানমার’ এবং প্রধান শহর ও তৎকালীন রাজধানী রেঙ্গুনের নতুন নাম হয় ‘ইয়াঙ্গুন’।

রিপাবলিক অব নর্থ মেসিডোনিয়া

দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপে বলকান উপদ্বীপে অবস্থিত একটি রাষ্ট্র নর্থ মেসিডোনিয়া। এটি আগে যুগোসøাভিয়ার অন্তর্গত ছিল। ১৯৯১ সালের নভেম্বর মাসে দেশটি স্বাধীনতা ঘোষণা করে। স্বাধীনতার পর রাষ্ট্রের নামকরণ নিয়ে এটি গ্রিসের মেসিডোনিয়া অঞ্চলের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। তাই প্রজাতন্ত্রী মেসিডোনিয়া যখন জাতিসংঘের অন্তর্গত সদস্য রাষ্ট্র হয়, তখন থেকে সাবেক ইউগোসøাভ মেসিডোনিয়া প্রজাতন্ত্র নামেও পরিচিত হয়। শেষ পর্যন্ত ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে রিপাবলিক অব নর্থ মেসিডোনিয়া নামটি চূড়ান্ত করা হয়।

থাইল্যান্ড

থাইল্যান্ড ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত ‘সিয়াম’ নামে পরিচিত ছিল। এই পরিবর্তনের লক্ষ্য ছিল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ক্রমবর্ধমান পশ্চিমা ঔপনিবেশিক প্রভাবের মুখে জাতির ঐক্য ও পরিচয় নিশ্চিত করা। ‘থাইল্যান্ড’ শব্দের অর্থ ‘স্বাধীনতার দেশ’। স্বাধীন দেশ নিয়ে থাই জনগণের গর্ববোধের ওপর জোর দেওয়ার জন্য এ নামটি বেছে নেওয়া হয়েছিল।

কিংডম এসওয়াতিনি

২০১৮ সালের এপ্রিলে আফ্রিকার দক্ষিণের দেশ কিংডম অব সোয়াজিল্যান্ডের নাম হয় কিংডম এসওয়াতিনি। দেশটির রাজা সোয়াতি দ্য থার্ড দেশটির নাম বদল করেন। দেশটির পক্ষ থেকে নাম পরিবর্তনের কারণ হিসেবে জানানো হয়েছিল, সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে তার দেশের নামের মিল থাকাটা পছন্দ করছিলেন না ওই দেশের রাজা। তাই তিনি দেশটির প্রাক-ঔপনিবেশিক আমলের নামে ফেরত যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

চেকিয়া

১৯৯৩ সালের জানুয়ারিতে হয় ‘ভেলভেট ডিভোর্স’। এর মাধ্যমে চেকোসেøাভাকিয়া ভেঙে জন্ম হয় স্বাধীন রাষ্ট্র চেক প্রজাতন্ত্রের। প্রায় ৪০ বছরের সমাজতান্ত্রিক শাসনের পর ১৯৯০ সালে উত্থান হয় দেশটির। ইউরোপের পূর্বাঞ্চলীয় দেশগুলোর মধ্যে প্রথম দেশ হিসেবে উন্নত অর্থনৈতিক অবস্থা অর্জন করে দেশটি। ২০০৪ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদান করে চেক প্রজাতন্ত্র। নিছক ব্র্যান্ডিংয়ের সুবিধার জন্য ২০১৬ সালে চেক প্রজাতন্ত্রকে ‘চেকিয়া’ নামে ডাকার সিদ্ধান্ত নেয় দেশটির সরকার। দেশের সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, খেলোয়াড়দের জার্সিতে এত বড় নাম লিখতে সমস্যা দেখা দিত। এই দেশে তৈরি পণ্যের গায়েও এত বড় নাম লিখতে অসুবিধা হচ্ছিল সংস্থাগুলোর। এ কারণে নাম বদল।

শ্রীলংকা

এশিয়ার দেশ শ্রীলংকা। এসওয়াতিনির মতো ঔপনিবেশিক যোগসূত্র মুছতে শ্রীলংকাও তাদের নাম বদলেছে। ব্রিটিশ শাসনমুক্ত হওয়ার আগে দেশটির নাম ছিল সিলোন। ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তির পর ব্রিটিশ শাসকদের চিহ্ন মুছে ফেলতে ১৯৭২ সালে দেশটির নাম সিলোন থেকে পরিবর্তন করে শ্রীলংকা করা হয়। তবে ২০১১ সাল পর্যন্ত নানা সরকারি নথিতে সিলোন নামটি রয়ে গিয়েছিল। পরে সব জায়গায় বদলালেও ‘সিলোন চা’ এখনো পাওয়া যায়।


Spread the love

Follow us

আর্কাইভ

September 2023
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930