বালাগঞ্জ-ওসমানীনগর: থেমে নেই এনজিওদের বৈঠক করে ঋণের কিস্তি উত্তোলন

প্রকাশিত: ৫:৫৮ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৩, ২০২০

বালাগঞ্জ-ওসমানীনগর: থেমে নেই এনজিওদের বৈঠক করে ঋণের কিস্তি উত্তোলন

শিপন আহমদ/অন্তরা চক্রবর্তীঃঃ

করোনাভারাসের প্রভাবে সারা দেশব্যাপি যাবতীয় কাযক্রমে স্থবিরতা চলে আসলেও সিলেটের বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগরে এনজি সংস্থার গুলোর ঋণ উত্তোলন কার্যক্রমে নেই স্থবিরতা। একাধিক বেসরকারী ব্যাংক ও এনজিও স্থাগুলো ঋণ উত্তোলণ অব্যাহত রাখায় বিপাকে পড়েছেন দুই উপজেলার অধিকাংশ মানুষজন।

 

দুই উপজেলার অনেকে বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) ও সমিতির ঋণের সপ্তাহিক বা মাসিক কিস্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা কাজ বন্ধের কথা মনে হলে সপ্তাহে ঋণের কিস্তি শোধের চিন্তায় কপালে ভাজ পড়ছে সাধারণ লোকজনের। তবে বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে এনজিও সংস্থাগুলোকে ঋণ উত্তোলণ বন্ধ রাখার জন্য বলা হলেও তাও মানছে নারাজ এনজিও সংস্থাগুলোর মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা।

 

সংস্থাগুলোতে উপজেলা পর্যায়ে কর্মরতদের দাবি তাদের উর্ধ্ধতণ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এখনও এ সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা না পাওয়ায় চাকুরী রক্ষায় মাঠ পর্যায়ে কাজ চালিয়ে যেতে হচ্ছে। ফলে স্ংস্থা গুলোর মাঠ কর্মীরা প্রতিদিন গ্রামে গ্রামে গিয়ে মহিলাদের সঙ্গবদ্ধ করে বৈঠকের সাপ্তাহিক ও মাসিক ঋণ উত্তোলন কার্যক্রম চালিয়ে যেতে দেখা যাচ্ছে।

 

জানা যায়, গত এক সপ্তাহ পূর্ব পর্যন্ত বালাগঞ্জ-ওসমানীনগর উপজেলার এনজিও সংস্থা গুলো থেকে ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহিতারা তাদের সপ্তাহিক কিস্তি পরিশোধ করে ব্যবসা চালাচ্ছিলেন। হঠাৎ করোনাভাইরাসের প্রভাবে সারাদেশের মতো দুই উপজেলার ব্যবসা-বনিজ্যসহ কাজ কর্মে নিম্নমুখী অবস্থা বিরাজ করছে। ইতিমধ্যে দুই উপজেলায় সন্ধ্যার পর থেকে ঔষধ ও নিত্য প্রয়োজনীয় দব্যের দোকান ব্যাতিত ব্যবসা প্রতিষ্টান বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

 

ছোট ছোট ব্যবসা প্রতিষ্টানের মালিকরা বিভিন্ন এনজিও সংস্থার নিকট থেকে কিস্তি নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছেন করলেও করোনা আতঙ্কে এখন তাদারে চলছে সঙ্কটকালীন সময়। মাঠকর্মীরা ঋণ গ্রহিতাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে অথবা গ্রামে গ্রামে বৈঠক করে কিস্তির টাকার জন্য চাপ সৃষ্টি করেছে। এনজিও কর্মীরা কিস্তির টাকা আদায় করতে গিয়ে অবাধে মানুষজনের সাথে মিশছেন। দেখে মনে হচ্ছে করোনা নিয়ে তাদের মধ্যে কোনো সচেতনতা নেই।

 

দুই উপজেলা জুড়ে প্রায় ১০/১৫ টি এনজিও সংস্থার প্রায় শতাধিক কর্মকর্তা ও মাঠ কমীরা দুই উপজেলার ১৪ ইউনিয়নের গ্রামে গ্রামে গিয়ে সাপ্তাহিক (কিস্তি) ক্ষুদ্র ঋণ সংগ্রহ করেছেন। ঋণ গ্রহিতাদের তথ্য মতে দুই উপজেলায় গ্রামীন ব্যাংক, আশা, ইসলামী ব্যাংক, ব্রাক, টিএম এসএস, আরডিআরএস, ব্যুরো বাংলাদেশসহ এবং ১০/১৫ টি ব্যাংকের শাখার প্রায় অর্ধ শতাধিক মাঠ কর্মী গ্রামে গ্রামে গিয়ে সভা সমাবেশ করে ঋণ সংগ্রহ কার্যক্রম অব্যাহত রাখছেন।

 

করোনা ভাইরাস বিস্তার রোধে সভা সমাবেশ না করার নির্দেশ দিলেও অবাদে সভা সমাবেশ করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ঋণ সংগ্রহ করেছেন এনজিও সংস্থার মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা।অন্যদিকে, বাজার এলাকায় গড়ে উঠা সমিতিগুলোর লোকজন তাদের কিস্ত আদায়ের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে এখন মরার ওপর খাঁরার গাঁর উপক্রম হয়েছে।

 

ওসমানীনগরের গোয়ারাবাজার এলাকার তেরহাতি গ্রামের বাস চালক বিষ্ণু দেব বলেন, করোনা আতঙ্কে বেকার হয়ে বাসায় বসে দিন কাটাচ্ছি। তবুও প্রতি সাপ্তাহে এনজিও থেকে নেয়া ঋণের কিস্তি চালিয়ে যেতে হচ্ছে। এতে করে আমরা নিন্মাবিত্তরা বেশ অসহায় হয়ে পরেছি।

বালাগঞ্জের সদরের বাসিন্দা শ্রমিক লেবু মিয়া, পূর্ব পৈলনপুর এলাকার দিনমজুর সালাম মিয়া বলেন, কাজ ছাড়া আমাদের পেঠে ভাত জোটে না। আমরা কীভাবে ঘরে থাকবো? এর ওপর কমবেশি এনজিওর কিস্তি সবার আছে। একদিকে করোনার আতঙ্ক অন্যদিকে এনজিও ব্যাংকের কিস্তির চাপে রেঅকজন দিশেহারা। আমাদের জন্য একটু লিখুন।

 

গৃহীনী হেপি বেগম বলেন, করোনা ভাইরাসের কারনে স্বামীর ব্যবসায় লোকশান দেখা দিয়েছে। প্রতি সাপ্তাহে কিস্তি পরিশোধ করতে পারছি না। এখন যে ভাবে জিনিস পত্রের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে এখন তো না খেয়ে মরতে হবে কিস্তি দেবো কিভাবে।

 

উপজেলার উমরপুর এলাকার ফজলু মিয়া বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল সভা সামাবেশ বন্ধ ঘোষনা করা হলেও সেটি মানতে নারাজ এনজিও সংস্থাগুলোর দ্বায়িত্বপ্রাপ্তরা। তারা কিস্তির টাকা দ্রুত উত্তোলণ করার স্বার্থে গ্রামে গ্রামে গিয়ে মহিলাদের নিয়ে বৈঠক করে ঋণ আদায়ের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বৈঠক করার কারণে শিশুসহ গ্রাম্য লোকজনের মধ্যে আরও বেশি করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

 

ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা: তাহমিনা আক্তার বলেন, উপজেলা পর্যায়ে ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম পরিচালনাকারী সংস্থাগুলোকে উত্তোলন কার্যক্রম বন্ধ রাখার আদেশ দেয়া হয়েছে। এরপর কোনো সংস্থা সভা বা উঠান বৈঠকের মাধ্যমে টাকা আদায়ের জন্য চাপ প্রয়োগ করলেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

বালাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবাংশু কুমার সিংহ বলেন, করোনা প্রতিরোধে ঋণ কার্যক্রমসহ সভা ও বৈঠক বন্ধ রাখার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে। এরপর কোন ব্যাংক বা সংস্থর লোকজন যদি তা না মানেন তাহলে উর্ধ্ধতন কর্তৃপক্ষে সাথে আলোচনা পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Spread the love

আর্কাইভ

November 2025
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930