সিলেট ১৭ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৫:২৮ অপরাহ্ণ, মে ২০, ২০২৫
প্রতিনিধি/ওসমানীনগরঃঃ
সিলেটের ওসমানীনগরে পরকীয়া প্রেমের টানে আসক্ত স্ত্রীকে তালাক দিয়ে বিপাকে পড়েছেন এক ইতালী প্রবাসী। উল্টো তার বিরুদ্ধে প্রহসনমুলক রায়,হয়রানি ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের যোগসাজসে সংঘর্ষ ও জোড় পূর্বক প্রবাসীর সম্পত্তি দখলের অপচেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী প্রবাসী আব্দুল হাদীর পরিবার। আব্দুল হাদী উপজেলার বুরুঙ্গা ইউনিয়নের খয়েরপুর গ্রামের মৃত রজব আলীর পুত্র। এঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ ও সিলেট আমল গ্রহনকারী আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়।
মামলা ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বুরুঙ্গা বাজার ইউনিয়নের খয়েরপুর গ্রামের মৃত রজব আলীর পুত্র ইতালী প্রবাসী আব্দুল হাদী একই গ্রামের আব্দুর রহমানের মেয়ে শিল্পী বেগমকে পারিবারিকভাবে বিয়ে করেন ২০০৫ সালের ২০ মে। বিয়ের কয়েক মাস পর প্রবাসে গেলেও এরপর দুইবার তিনি দেশে আসা যাওয়া করেন। সংসার জীবনে তাদের একটি পুত্র সন্তান মারা গেলেও ১৪ বছর বয়সী একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। ইতালীতে স্থায়ী হওয়ার অপেক্ষায় দীর্ঘ ৯ বছর দেশে ফেরা হয়নি হাদীর। দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকার সুযোগে পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে পড়েন তার স্ত্রী। বিষয়টি আব্দুল হাদী জানতে পেরে তাকে সতর্ক করেন,কিন্তু স্ত্রী তার কথায় কোনো কর্ণপাত না করে পরকীয়া প্রেমিকের সঙ্গে ঘোরাফেরা করেন।
সর্বশেষ গত কয়েক মাস আগে একই ইউনিয়নের এক যুবকের সাথে উপজেলার গোয়ালাবাজারের একটি আবাসিক হোটেলে আপত্তিকর অবস্থায় ধরা পড়ারও অভিযোগ উঠে। এর আগে স্বামীর বিদেশ থেকে পাঠানো কয়েক লাখ টাকার স্বর্ণালংকারসহ সংসারের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় মালামাল আত্মসাৎ এছাড়াও আব্দুল হাদী বিদেশ থেকে বিভিন্ন সময় ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রায় বিপুল অংকের টাকা পাঠান। সেই টাকারও কোনো হদিস নেই। এই বিষয়ে ২১ মার্চ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ প্রদান করেন প্রবাসী।
স্ত্রী বোপরোয়া আচরণ ও পরকিয়া প্রেমিকের সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় ধরা পরার পর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দুরতের সৃষ্টি হয়। একমাত্র মেয়ের ভবিষ্যত চিন্তা করে পরকিয়ায় আসক্ত স্ত্রীকে পুনরায় সংসার জীবনে ফেরাতে ব্যর্থ হয়ে তালাক প্রদানের সিদ্ধান্ত নেন প্রবাসী। ইতালী থেকে একটি লিখিত পত্রে গত বছরের ৮ অক্টোবর হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে তালাক প্রদান করেন। তালাক প্রদানের পর তালাক প্রাপ্ত স্ত্রীর ন্যায্য অধিকার পরিশোধে ও অসুস্থ মায়ের চিকিসার জন্য দেশে আসেন তিনি।
পরিবার ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেও বুরুঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আখলাকুর রহমান প্রবাসীর কতিত স্ত্রীর পক্ষে প্রহসনমুলক রায় প্রদানের অভিযোগ করেন তিনি।
২৩ এপ্রিল রাতে নিজ বাড়িতে আখলাকুর রহমানের পক্ষপাতদুষ্ট আচরণে স্ত্রীর মোহরনার ২ লক্ষ টাকার পরিবর্তে ৮ লক্ষ টাকা,স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য ২ টি বেডরুম, মার্কেটে দুটি দোকান ঘর, ৬ একর জায়গা, সন্তানের ব্যায়ভার হিসেবে প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা এবং তালাক প্রাপ্ত স্ত্রীকে ইতালী পাঠনোর আগ পর্যন্ত প্রবাসীর ক্ষেতের জমিতে অংশগ্রহণ রাখার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত প্রদান করেন ইউপি চেয়ারম্যান।
মোহরনা ও সন্তানের ভরণপোষনের টাকা প্রদানে গ্রামের সালিশী ব্যক্তিগণের সাথে যোগাযোগ করে আব্দুল হাদী পুরণের ব্যপারে আশ্বাস দিলেও বিতর্কিত অন্য সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করেন আব্দুল হাদীর পক্ষের লোকজন।
এসম প্রবাসী পরিবারের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন ইউপি চেয়ারম্যান আখলাকুর রহমান। শালিস বৈঠকেই পরিকল্পিতভাবে চেয়ারম্যান ও তার লোকজন হামলা চালায় বিচার প্রার্থী পরিবারের ওপর। তাদের হামলায় আহত প্রবাসী আব্দুল হাদী ও তার পরিবারের অপর সদস্যদের উপর হামলা ও প্রহসনের রায়ের ঘটনায় চলতি মাসের ৫ মে চেয়ারম্যান আখলাকুর রহমানসহ ৫জনকে অভিযোক্ত করে সিলেট আমল গ্রহণকারী আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন প্রবাসীর ভাই মৌ: আব্দুল খালিক। মামলা নং ১৪১/২৫।
এর আগে ২৭ এপ্রিল নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে স্ত্রীকে পূনরায় তালাক প্রদান করেন হাদী। ৪ মে নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে সিলেট প্রেসক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলনে প্রাশনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন পরিবারটি।
প্রবাসী পরিবারের অভিযোগ, চেয়ারম্যান আখলাকুর রহমানের যোগসাজসে এবং তাদের সম্পত্তির দখলে নিতে তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী দিয়ে এসব কর্মকান্ড পরিচালনা করছেন। মহিলার এমন কর্মকান্ডে অতিষ্ট এলাকাবাসীও। বর্তমানে ইউপি চেয়ারম্যান আখলাকুর রহমানের প্রভাবে তালাক প্রাপ্ত স্ত্রী অবৈধভাবে স্বামীর বাড়ী দখল করে আছে। তাই দ্রুত বিষয়টি সামাধান ও হামলায় জড়িতদের গ্রেফতারে প্রশাসনের প্রতি আহবান জানান তারা।
এই বিষয়ে প্রবাসীর তালাক প্রাপ্ত স্ত্রী সঙ্গে অনেকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
বুরুঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আখলাকুর রহমান শালিস বৈঠকে সংগঠিত হামলা প্রহসনের রায়ের আংশিক বিষয়টি স্বীকার করে এ ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত নয় এমনটাই দাবি করেন।
ওসমানীনগর থানার অফিসার ইনচার্য মো: মোনায়েম মিয়া বলেন, আদালতে মামলার বিষয়টি জানা নেই। এ বিষয়ে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ রয়েছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে।