সিলেট ১৬ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৭:৩৫ অপরাহ্ণ, মে ১, ২০২০
জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া/সুনামগঞ্জঃঃ
প্রতি বছরেই হাওরাঞ্চলের কৃষকরা বোরো ধান চাষাবাদ করার জন্য মহাজনী ঋণ নিয়ে থাকে। আর বৈশাখ মাসের পুর্বে ধান কাটা ও মাড়াই করার জন্য ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে যে টাকা নিয়েছেন তা বর্তমানে ধান দিয়ে সে টাকা পরিশোধ করার জন্য অনেকেই কম দামে ধান বিক্রি করছে ফড়িয়াদের কাছে।
লটারি কিংবা আনুষ্ঠানিকতা মেটাতে গিয়ে জেলা ও উপজেলার ধান ক্রয় কমিটি এখনও ধান ক্রয় শুরুই করতে না পারায় সরকারী ভাবে ধান সংগ্রহ শুরু না হওয়ায় প্রতি বছরের মত এবার ধানের ন্যায মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কৃষক। ফলে সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলের কৃষকের কষ্টের ফলানো বোরো ধান ব্যবসায়ীর গুদামে দিতে বাধ্য হচ্ছে। এতে করে ধান কৃষকের গোলায় উঠার আগেই শুন্য হয়ে পড়ছে শুরুতেই বলে জানান,হাওর পাড়ের কৃষকগন।
আর খাদ্য গুদামে যখন ধান চাল সংগ্রহ হবে তখন প্রান্তিক কিংবা ক্ষুদ্র কৃষকের ঘরে ধান থাকবে না। আর এ সুযোগে খাদ্য গুদামে ধান দিবে ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা। ফলে অন্যান্য বছরের মত এ বছরও লাভের সুমিষ্ট গুরের স্বাদ পিঁপড়ায় খাবে। তাই কৃষকদের দাবী,এখন থেকেই কৃষকরা সরাসরি খাদ্য গুদামে ধান দিতে পারলে উপকার হবে। অন্তত কিছুটা লাভের মুখ দেখবে কৃষক।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়,সুনামগঞ্জে এবার ২লাখ ১৯হাজার ৩০০হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ইতি মধ্যে অনেক কৃষক ধান বিক্রি করে দিচ্ছেন। বর্তমানে স্থানীয় হাটে ধানের বাজার দর ৭’শ থেকে ৭’শ ৫০টাকা। আর যারা ধান কাটার আগে ব্যাবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন তারা ধান বিক্রি করেছেন ৫’শ টাকায়। ফলে কৃষক কোন ভাবে লাভের মুখ দেখছেন না। মহাজনী ঋনের টাকা মেটানোর জন্য কৃষক অনেকটা বাধ্য হয়ে এখনই ধান বিক্রি করছেন।
আরও জানাযায়,হাওড় অঞ্চলের প্রভাবশালী ও মধ্যস্বত্বভোগীরা নানা প্রলোভন দেখিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে কৃষি কার্ড নিয়ে নিচ্ছেন। তারা বেশি দামে ধান কিনে নেবেন,এমন প্রলোভন দেখাচ্ছেন। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সরকারি ক্রয়কেন্দ্রের অসৎ কর্মকর্তারা। কৃষকদের মধ্যে আস্থাহীনতাও তৈরি হচ্ছে সরকারের কাছে ধান দেয়া নিয়ে।
গত রোববার থেকে সুনামগঞ্জের ১১উপজেলায় ধান ক্রয় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সংশ্লিষ্টদের গাফিলতি এবং ফড়িয়া-মধ্যস্বত্বভোগীদের দাপট ও মিল মালিকদের কম দামে ধান কেনার সুযোগ দিতেই স্থানীয় কর্তৃপক্ষ তালিকা করতে বিলম্বে করছে বলে অভিযোগ করছেন কৃষকরা।
তাহিরপুর উপজেলা খাদ্য গোদাম সুত্রে জানাযায়,গত ২৮এপ্রিল সরকারী ভাবে ধান চাল ক্রয় উদ্বোধন করা হয়েছে তাহিরপুর খাদ্য গুদামে। উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র চাষীদের কাছ থেকে ২০৭০মেট্রিক টন ধান ক্রয় করা ২০৭০কৃষকের বিপরীতে। প্রতি কৃষক ধান দিতে পারবে ১মেট্রিক টন। প্রতি মন ধানের সরকারী দর নির্ধারণ করা হয়েছে ১হাজার ৪০টাকা। বর্তমানে উপজেলা কৃষি অফিস প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকদের একটি তালিকা করছে। আগামী ১০মে’র মধ্যে তালিকার কাজ শেষ হবে। সেই সাথে তালিকাকৃত কৃষকদের থেকে লটাারীর মাধ্যমে বিজয়ীদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করা হবে।
তাহিরপুর উপজেলার শনির হাওর পাড়ের উজান তাহিরপুর গ্রামের কৃষক জাক্কার মিয়া জানান,চলতি বছর হাওরে ১০(কেয়ার) জমিতে ইরি বোর ধান চাষাবাদ করেছেন। কিন্তু হাতে টাকা না থাকায় তিনি ধান কাটা মাড়াইর পূর্বেই ২০মন ধান ৫শ টাকা ধরে বিক্রি করে দিয়েছেন এক ব্যাবসায়ীর কাছে।
মধ্য তাহিরপুর গ্রামের কৃষক আল-আমিন জানান,প্রতি বছরই তিনি ২থেকে ৩শ মন ধান পান কিন্তু কখনোই খাদ্য গুদামে ধান দিতে পারেন নি। লটারীতে যাদের নাম ভাসে তাদের অধিকাংশের ঘরে খাদ্য গুদামে ধান দেয়ার মত ধান থাকেনা,খাদ্য গুদামে তখন ধান দেয় ফড়িয়া ব্যাবসায়ীরা। তাই তিনি লটারীর অপেক্ষা না করে স্থানীয় ব্যাবসায়ীদের কাছেই ধান বিক্রি করে থাকেন।
তাহিরপুর উপজেলা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা মফিজুর রহমান বলেন,ইচ্ছে করলেই আমরা এখন ধান নিতে পারি না। সরকারী সিদ্ধান্ত মোতাবেক ধান সংগ্রহ করা হবে। খাদ্য গুদামে ধান ক্রয় উদ্বোধন করা হয়েছে। আগামী ১২মে থেকে কৃষকরা সরাসরি খাদ্য গুদামে ধান দিতে পারবেন।
তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসান উদ দৌলা বলেন,প্রকৃত কৃষকরা যেন খাদ্য গুদামে ধান দিতে পারে সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। কৃষকদের তালিকার কাজ চলমান।
তাহিরপুর উপজেলার পরিষদ চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল জানান,কোন ভাবেই সরকারী ধান ক্রয়ে অনিয়ম করতে দেওয়া হবে না। সে যত বড় ক্ষমতাশালী হউক। সরকারী নিদের্শনা অনুযায়ী কৃষকরাই খাদ্য গোদামে ধান বিক্রি করবে। অনিয়ম হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।