সিলেট ২১শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৯:১৪ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৭, ২০২১
প্রতিনিধি/ওসমানীনগরঃঃ
সিলেটের ওসমানীনগরে তৃতীয় শ্রেনীর ছাত্রী ফাইজার মৃত্যু নিয়ে জট খোলছে না রহস্যের। বুধবার বিকালে ময়না তদন্ত শেষে উপজেলার তাজপুর ইউনিয়নের রঙ্গিয়া গ্রামের মামার বাড়িতে ফাইজার লাশ নিয়ে আসলে বিদ্যালয়ের সহপাটি,শিক্ষক ও স্বজনদের কান্না ও আহাজারিতে এক হৃদয় বিধারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়।
উপস্থিত সবার দাবি, এই ছোট শিশুটি কোনো ভাবেই আত্মহত্যা করতে পারেনা। এছাড়া, তাঁর গাঁয়ে একাধিক স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। থানা পুলিশ ঘাতকদের ছেড়ে দিয়ে চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে স্বাক্ষর নিয়ে অপমৃত্যুর মামলা রুজু করেছে। সার্বিক বিষয়ে প্রশাসনের উর্ধ্ধতন কর্মকর্তার হস্তক্ষেপ কামনা করেন খাসদরগাহ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুনন্দন কমার দাসসহ উপস্থিত লোকজন।
এসময় ফাইজা হত্যার সাথে জড়িতদের বিচার চেয়ে খাসদরগাহ বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গনে তাৎক্ষনিক প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ সমাবেশ করতে দেখা গেছে স্থানীয়দের। সন্ধ্যায় ফাইজার নানার বাড়িতে লাশের গোসল ও প্রথম জানাযার নামাজের পর রাত সাড়ে ৭টায় উপজেলার ব্রাম্মনগ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
এদিকে, দশ বছরের শিশু ফাইজার লাশ উদ্ধারের তিন দিন অতিবাহিত হলেও এটি হত্যা না আত্মহত্যা তা নিয়ে রয়ে গেছে ধুম্রজাল। থানা পুলিশ নিহতের পরিবারের অভিযোগ আমলে না নিয়ে শিশুর মায়ের স্বাক্ষর নিয়ে তরিগরি করে থানায় অপমৃত্যুর মামলা রুজু করেছে অভিযোগ করেছেন মামা আবুল কালামসহ স্বজনরা।
তাদের দাবি, পরিকল্পিত ভাবে শিশুটিকে ধর্ষনের পর হত্যা করে লাশ ঝুঁলিয়ে রাখা হয়েছিল। এটি আত্মহত্যা নয়। তারা হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার জন্য থানা পুলিশের কাছে করোজুড়ে মিনতি করে কোনো কাজ হয়নি। উল্টো পুলিশ ময়না তদন্তের দোহাই দিয়ে ঘাতকদের ছেড়ে দিয়ে হত্যা মামলার অভিযোগ আড়াল করে ময়না তদন্ত সম্পূন্ন হওয়ার পূর্বেই কৌশলে অপমৃত্যুর মামলা রুজু করেছে।
তবে, এসব অভিযোগ অস্বিকার করে সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ওসমানীনগর সার্কেল) রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, সার্বিক বিষয়ে তিনি অবগত রয়েছেন, পারিবারিক কলহের জের ধরে শিশুটি নিজ থেকে আতœহত্যা করে মারা গিয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ায় থানায় অপমৃত্যুর মামলা রুজু করা হয়েছে। ময়না তদন্তের রির্পোটে পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জানা যায়, সোমবার তুরণ মিয়া কাজে থাকাবস্থায় বিকেলে মা লায়লা বেগম মেয়েকে ঘরে রেখে ছোট ছেলেকে নিয়ে বাজারে যান। সন্ধ্যা ৬টার দিকে বাড়িতে ফিরে বসত ঘরের বাঁশের তীরের সাথে মেয়েকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পেয়ে তাৎক্ষণিক লায়লা বেগম চিৎকার শুরু করলে কয়েকজন ছুটে এসে ঘরের লাইট বন্ধ করে ওড়নার গিট্ট খোলে ফাইজার দেহ নামিয়ে আনে।
এসময় শিশুর মা লায়লা বেগম লাইট নিভানোর কারণ জানতে চেয়ে আরও জোড়ে চিৎকার শুরু করলেও তারা দ্রুত ফাইজাকে নিয়ে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে সোমবার রাতে ওসমানীনগর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ফাইজার তিন চাচাতো ভাইকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসে। মঙ্গলবার এ বিষয়ে অপমৃত্যুর মামলা রুজু করে তাদের ছেড়ে দেয় পুলিশ।
কান্নাজনিত কন্ঠে ফাইজার লায়লা বেগম বলেন, আমার মেয়েকে ধর্ষনের পর হত্যা করে ঘাতকরা লাশ ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রেখে তারা গাঁ ডাকা দিতে চেয়েছিল। কিন্তু ভাগ্যক্রমে এ সময়েই আমি বাড়িতে এসে পড়ায় ঘাতকরা দ্রুত লাশ নামিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সার্বিক বিষয়ে থানা পুলিশকে জানানোর পরও পুলিশ ঘটনার রাতে ওসমানী হাসপাতালে আসার প্রয়োজন মনে না করে মঙ্গলবার সকালে হাসপাতালে এসেছিল। থানা পুলিশ হাসপাতালে দেরিতে আসায় ময়ন্ত তদন্ত সম্পন্ন করতে তিন দিন সময় লেগেছে।
তবে সোমবার রাতেই থানা পুলিশ তাৎক্ষনিক আমাদের বাড়িতে গিয়ে আমার ভাসুরদের তিন পুত্রকে আটক করে থানায় নিয়ে আসলেও কিন্তুু মঙ্গলবার আটকৃতদের অভিযুক্ত করে থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়ার পরও থানা পুলিশ আমার অভিযোগটি আড়াল করে হুমকির মাধ্যমে আমার স্বাক্ষর নিয়ে তাদের ছেড়ে দিয়ে পারিবারিক কলহের কাল্পনিক ঘটনা বানিয়ে আমার ছোট শিশু ফাইজা আত্যাহত্যা করেছে বলে বেড়াচ্ছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য নেয়া বিবি বলেন, আমি একাধিকবারের জনপ্রতিনিধি হিসাবে এসব বিষয়ে আমার অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমি খুব কাছ থেকে শিশু ফাইজার লাশটি দেখেছি। আমার দেখামতে তাকে ধর্ষনের পর হত্যা করা হয়েছে এমনটি নিশ্চিত হয়েছি।
নিহত ফাইজার লাশের গোসলের কাজে নিয়োজিত থাকা উপজেলা আনছার ভিডিপির সহকারী কমান্ডার তাছলিমা বেগম ও নিহতের নিকট আত্বীয় আছারুন বিবি বলেন, আমারা লাশের গোসল করানোর সময় একাধিক স্থানে আঘাতের চিহ্ন ও মুখমন্ডলসহ শরিরের একাধিক অংশে কামর ও নকের আচর দেখেছি। তার গোপনাঙ্গও ক্ষত বিক্ষত রয়েছে। তাকে যে ধর্ষনের পর হত্যা করা হয়েছে এটা লাশের গোসলের সময় নিশ্চিত হয়েছি।
ওসমানীনগর থানার ওসির দ্বায়িত্বে থাকা অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) মাকসুদুল আমিন বলেন, জিজ্ঞাবাদের জন্য তাৎক্ষনিক কয়েক জনকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছিল। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর অপমৃত্যুর মামলা রুজুর পর তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে। ময়না তদন্তের রির্পোটে পাওয়ার পর এ ব্যপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।