সড়ক দূর্ঘটনায় নবিগঞ্জের দুলালের মৃত্যু নিয়ে ধ্রুবজাল

প্রকাশিত: ৩:০৫ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৩, ২০২০

সড়ক দূর্ঘটনায় নবিগঞ্জের দুলালের মৃত্যু নিয়ে ধ্রুবজাল

বুলবুল আহমদ/নবীগঞ্জঃঃ
নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়নের আলমপুর গ্রামের ৩ সন্তানের জনক হাঁস খামারী মৃত আনফর (গেদা) মিয়ার পুত্র দুলাল মিয়া (৩০) কে পরিকল্পিত ভাবে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পূর্ব শত্রুতার জের ধরে তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দুলালের পরিবারবর্গ।

 

গত রবিবার বিকেলে সরেজমিনে নিহত দুলাল মিয়ার বাড়ি উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়নের বকশিপুর গ্রামের গিয়ে তার পরিবারের লোকজন এর সাথে আলাপকালে তারা বলেন, বকশিপুর গ্রামের আছমত মিয়ার পুত্র মাদক ব্যবসায়ী লালন মিয়া (৩৫) ও তার সহযোগীরা গত শুক্রবার বাদ জুম্মা আলমপুর গ্রামে দুলাল মিয়ার হাঁস খামারে এসে তাকে হাঁসের বাচ্ছা অল্প মূল্যে ক্রয়ের লোভ দেখিয়ে নগদ ৬০ হাজার টাকাসহ দুলালকে একটি সিএনজি যোগে গ্রামের বাড়ি থেকে নিয়ে যায়।

 

এরপর সে আর বাড়িতে আসেনাই। এতে আমরা তাকে না পেয়ে বিভিন্ন জায়গায় ফোন দিয়ে খোঁজাখুঁজি করে কোন সন্ধান পাইনা। ওইদিন দিবাগত রাত অনুমান ১০টার দিকে দুলালের পরিবারের কাছে অপরিচিত একটি মোবাইল নাম্বার থেকে কল আসে যে, দুলাল মিয়া সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে পড়ে আছেন।

 

তাৎক্ষণিক দুলালের পরিবারের লোকজন খবর পেয়ে ঘটনাস্থল মৌলভীবাজার সদর মডেল থানাধীন লামুয়া বাজারের নিকটে চলে যান। সেখানে গিয়ে দুলালকে না পেয়ে দুলালের বড় ভাই আলাল মিয়া, সিতার মিয়া সহ তার আত্মীয় স্বজন মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে গিয়ে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অবস্থায় দেখতে পান। এসময় দুলালের অবস্থার অবনতি দেখে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে আশংখাজনক অবস্থায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। তবে, পথিমধ্যেই রাজনগর থানার দিকে যাওয়ার পূর্ব মুর্হুতেই দুলাল মৃত্যুর কুলে ঢলে পড়ে। পরে মৌলভীবাজার মডেল থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্ত শেষে পরদিন শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টয় তার দাফন সম্পন্ন করা হয়।

 

এদিকে, দুলাল এর মাতা সুন্দরী বিবি, বড় ভাই আলাল মিয়া ও তার স্ত্রী ফাতেহা বেগম অভিযোগ করে বলেন, দুলাল মিয়াকে ঘটনার দিন বাদ জুম্মা ২টার দিকে পাশ্ববর্তী বকশিপুর গ্রামের মাদক ব্যবসায়ী লালন মিয়া, দুধু মিয়া সহ আরো কয়েকজন হাঁসের বাচ্চা পাইকারী দরে কেনার লোভ দেখিয়ে নগদ ৬০ হাজার টাকা নিয়ে তাদের সাথে যান। এর পর আর সে বাড়িতে আসেনি। তাকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে। সিএনজি চালক কাটারাই গ্রামের তুরন দাসের পুত্র রিংকু দাশে চালক হিসাবে ছিল। সে জানায়, ওইদিন দুলাল মিয়া ও লালন মিয়ার সাথে সেও ছিল। লালন দুলালকে রোকনপুর চা-বাগানে নিয়ে মদ পান করিয়ে অজ্ঞান করার চেষ্টা করিলে সে ওই সিএনজি থেকে পানিউমদার নিকট সে রাস্তায় নেমে যায়।

 

এরপর এলাকায় গিয়ে লোকমুখে শুনে যে, সিএনজি দিয়ে লালনসহ হাঁসখামারী দুলাল গোরারাই, কাটারাই বাজারের ওপর দিয়ে সিএনজি যোগে যাচ্ছিলেন এই সিএনজির পেছন থেকে কে যেনো বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করেছিলো। ওই চিৎকারের সুরে গোরারাই গ্রামের বেলাল, কাটারাই গ্রামের রিপু, বাচ্চু সহ আরো অনেকেই শুনেছেন বলে জানান। এর কিছুক্ষণ পরেই সড়ক দুর্ঘটনার সংবাদ পান এলাকাবাসী। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় দুলালকে উদ্ধার করে স্থাণীয়রা মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। এর পূর্বেই লালনসহ ঘাতকরা পালিয়ে যায়।

 

এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানায়। লালনসহ অন্যানরা এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে রয়েছেন। এ ব্যাপারে আউশকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী মহিবুর রহমান হারুন এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, এই ঘটনাটি খুবই মর্মার্ন্তিক। হাঁসখামারী দুলাল মিয়া নিহতের সংবাদ পেয়ে আমি সহ আরো অনেকেই নিহতের বাড়িতে যাই। আমাদের কাছে এটি একটি রহস্যজনক মৃত্যু বলে মনে হয়। প্রশাসন সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানাচ্ছি।

 

এ ব্যাপারে মৌলভীবাজারসদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আলমগীর হোসেন এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, দুলাল মিয়ার লাশ আমরা উদ্ধার করে (ময়নাতদন্ত) শেষে তার পরিবারের নিকট লাশ হস্তান্তর করেছি। এ ঘটনায় এখনো থানায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। অভিযোগ দায়ের করলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো। দুলাল নিহতের ঘটনায় সচেতন মহলের মধ্যে নানা রহস্যের ধানা বাধছে। এ ঘটনায় জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

Spread the love

আর্কাইভ

January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031