সিলেট ১০ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৫:২৬ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৯, ২০২০
বিজয় রায়, সুনামগঞ্জঃঃ
ছাতকে উপজেলা প্রশাসনের প্রধান দু’কর্মকর্তাসহ প্রায় ডজন খানেক সরকারী কর্মকর্তা বিহীন চলছে প্রশাসনিক কার্যক্রম। ট্রেনিংয়ের মিছিলে শরীক হতে কর্মকর্তারা একের পর এক এখানের কর্মস্থল ত্যাগ করে চলে গেছেন।
উপজেলার প্রধান দু’কর্মকর্তা ষ্টেশনে না থাকায় এখানের প্রশাসনিক কর্মকান্ডে দেখা দিয়েছে অনেকটা স্থবিরতা। ফলে এখানের উপকারভোগী সাধারন মানুষ পড়েছেন চরম বিপাকে। অনুপস্থিত কর্মকর্তাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন সরকারী ট্রেনিংয়ে, আবার কোন-কোন দপ্তরের কর্মকর্তা বদলী হয়ে অনত্র চলে যাওয়ায় এসব দাপ্তরিক চেয়ার গুলো খালি অবস্থায় পড়ে আছে। ফলে দাপ্তরিক বহু গুরুত্বপূর্ন কাজ কর্মকর্তদের অভাবে আটকে আছে বলে ভোক্তভোগীরা জানিয়েছেন। কর্মকর্তাদের অবর্তমানে এখানের উন্নয়ন কর্মকান্ডও বাধাগ্রস্থ হচ্ছে বলে অনেকেই মনে করছেন। বর্তমানে পানিউন্নয়ন বোর্ডের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ চলমান রয়েছে। বাধ পর্যক্ষেন কমিটির সভাপতি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ষ্টেশনে না থাকায় কেবল মাত্র পাউবোর নিয়োজিত লোকজনই বাধের কাজ পর্যবেক্ষন করছেন। বাধের কাজে পুকুর চুরি হওয়ারও আশংকা করে স্থানীয় কৃষকরা নানান প্রশ্ন তুলছেন। সর্বশেষ উপজেলা নির্বাহী কমকর্তা তিন সপ্তাহের ট্রেনিংয়ে চলে গেলে উপজেলা প্রশাসনে সৃষ্টি হয় অভিভাবকহীনতা।এ ছাড়া দেড় মাস আগে সরকারী ট্রেনিং করতে ষ্টেশন ছেড়েছেন সহকারী কমিশনার(ভুমি)।
উপজেলা প্রশাসনের প্রধান দু’কর্মকর্তার চেয়ার খালি খাতায় প্রশাসনের অনেক দপ্তর প্রধান ও সহকারীরা অফিসে অনিয়মিত থাকতে লক্ষ্য করা গেছে। বর্তমানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার(ভুমি), উপজেলা প্রশাসনিক কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সহকারী(সিএ), উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকতা, উপজেলা প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা, উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তাসহ ৭জন সহকারী প্রাথমিক কর্মকর্তার চেয়ার খালি অবস্থায় রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় দেড় বছর আগে উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান খান বদলি হয়ে অন্যত্র চলে গেলে এখন পর্যন্ত তার স্থলাবিসিক্ত কেউ হয়নি। ফলে অফিসের দু’জন কর্মচারী দিয়ে চালানো হচ্ছে পরিসংখ্যান বিভাগের কাজ। বর্তমানে আদমশুমারীর জন্য পরিসংখ্যান কার্যালয়ে চলছে চুক্তিভিত্তিক লোক নিয়োগ। কর্মকর্তা না থাকায় আদম শুমারী জন্য লোক নিয়োগের বিষয়টি নিয়েও নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠছে।
গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর সরকারী ট্রেনিংয়ে ষ্টেশন ত্যাগ করেন সহকারী কমিশনার(ভুমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট তাপস শীল। পরবর্তিতে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। পরবর্তিতে তিনিও ট্রেনিংয়ে চলে গেলে উপজেলা প্রশাসন হয়ে পড়ে অভিভাবকহীন। আটকে পড়ে ভুমি সংক্রান্ত আফিল-আপত্তিসহ গুরুত্বপূর্ন বিভিন্ন কর্মকান্ড। ট্রেনিংজনিত কারনে উপজেলা প্রশাসনের প্রশাসনিক কর্মকর্তার চেয়ারটিও খালি অবস্থায় রয়েছে। চলিত মাসের ৩ তারিখ প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্দুল জব্বার সরকারী ট্রেনিংয়ে চলে গেলে তার চেয়ারটি খালি হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস সহকারী জয়দেব ১৩ জানুয়ারী সরকারী ট্রেনিংয়ে নিজ কর্মস্থল ত্যাগ করেন। উপজেলা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ন এ চেয়ারটি খালি থাকায় বিভিন্ন কাজ নিয়ে আসা উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলের উপকারভোগী মানুষ বিমুখ হয়ে ফিরতে হচ্ছে।
২৬ জানুয়ারী তিনি পুনরায় কর্মস্থলে এসে যোগ দিয়েছেন। ১৫ জানুয়ারী কর্মস্থল ত্যাগ চলে যান উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মিজানুর রহমান। বদলীজনিত কারনে তিনি অন্য উপজেলার চলে যান। ফলে মহিলাদের জন্য সরকারী সেবামুলক ও গুরুত্বপূর্ন এ দপ্তর রয়েছে তালাবদ্ধ্। উপজেলা প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মাসুদ সিদ্দিকী বদলী হয়ে প্রায় দু’মাস আগে এখানের কর্মস্থল ত্যাগ করেন। এখনো প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা হিসেবে এখানে কেউ স্থলাবিসিক্ত হয়নি। অফিসে অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকলেও প্রায় সময় তাদের ষ্টেশনে পাওয়া যায়নি বলে ভোক্তভোগীরা অভিযোগ তুলেছেন। সর্ব শেষ গত ১৫ জানুয়ারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম কবির সরকারী ট্রেনিংয়ে নিজ কর্মস্থল ত্যাগ করলে উপজেলা প্রশাসন হয়ে পড়ে অভিভাবকহীন। তবে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে এখানের দায়িত্বে রয়েছেন দোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোনিয়া সুলতানা। তিনিও প্রায় দু’ সপ্তার মধ্যে একদিন ছাতকে এসেছিলেন বলে জানা গেছে।
এদিকে, প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন দপ্তর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় চরম জনবল সংকটে ভোগছে। ৬জন সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার স্থলে এখানে রয়েছে মাত্র ১জন। তীব্র জনবল সংকটে থাকা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে প্রায় সময়ই শিক্ষকদের ভিড় লেগে থাকতে দেখা যায়। আবার অনকে সময় শিক্ষকরা অফিসের দাপ্তরিক কাজে নিয়োজিত থাকতে দেখা গেছে। জনবল সংকটের কারনে এখানের প্রাথমিক শিক্ষার অগ্র যাত্রা মারাত্মক বাধাগ্রস্থ হচ্ছে বলে শিক্ষানুরাগীরা মনে করছেন। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান এ ব্যাপারে জানান, ট্রেনিং ও বদলীজনিত কারনে এ সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এর জন্য মেজর কোন সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে না বলে তিনি মনে করেন।