সিলেট ১লা নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৬ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৬:০০ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৩, ২০২৫
 
                                                                          লন্ডন বাংলা ডেস্ক ::
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ছাত্র ও শাখা ছাত্রদল নেতা জোবায়েদ হোসেন হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য জানালেন পুলিশের একটি বিশ্বস্ত সূত্র।
সূত্র জানায়, ‘বর্ষার সঙ্গে জোবায়েদ ও মাহিরের প্রেমের কথা বর্ষার পরিবারের সবাই জানতো। শুধু তাই নয় বর্ষার মাও মাহিরকে পছন্দ করতেন না। এছাড়া জোবায়েদকে কোনো প্রফেশনাল কিলার খুন করেনি। মাহির নিজেই খুন করেছে।’
গতকাল বুধবার (২২ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দীন জোবায়েদ হত্যাকাণ্ড নিয়ে নানাবিধ প্রশ্ন তুলেন। এরজবাবে বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) সংশ্লিষ্ট সূত্রটি এসব জবাব দেন।
সূত্র জানায়, অনেকেই অনেক রকম প্রশ্ন তুলেছে। অনেক নানাবিধ কথা বলছে। কিন্তু প্রেমের সম্পর্ক থেকেই এই হত্যার এই ঘটনা ঘটে।
জোবায়েদের খুনের বিষয়ে প্রফেশনাল কিলার খুন করেছে কিনা—এ প্রশ্নের জবাবে সূত্র জানায়, ‘জোবায়েদকে কোনো প্রফেশনাল কিলার হত্যা করেনি। মাহির রহমান নিজেই হত্যা করেছে। পৃথক জায়গা থেকে দুইটি ছুরি কিনলেও একটি ছুরি দিয়েই হত্যা করা হয় জোবায়েদকে। অন্য ছুরিটি ব্যবহার হয়নি। মাহিরের বন্ধু আইলানকে পিছন থেকে ছুরি মারার কথা থাকলেও সে মারেনি। কিন্তু মাহির ছুরি মেরে চলে যাওয়ার সময় আইলানকে ছুরি উঠাতে বলে। আমরা একটাই ছুরি উদ্ধার করি স্পট থেকে। ওই ছুরি দিয়েই তাকে হত্যা করা হয়। ফলে একাধিক জখম বা আঘাত করা লাগেনি।’
এটির নির্ভরযোগ্য তথ্য হিসেবে পোস্টমর্টেমের সঙ্গে যুক্ত থাকা চিকিৎসকের বরাত দিয়ে বলেন, ‘গলার রক্তনালীতে আঘাত করা হয় জোবায়েদের। রক্ত নালী কেটে যাওয়াতে খুবই স্বল্প সময়ে রক্তক্ষরণের মাধ্যমে তার মৃত্যু হয়।’
সূত্র জানায়, এসব কথা আদালতে জবানবন্দিতেও স্বীকার করেছে আসামিরা।
তদন্তের বিশারদে বর্ষার বাবা-মা এবং ওই বাসার সদস্যদের সঙ্গে কোনো কথা হয়েছে কিনা—এ প্রশ্নর জবাবে সূত্র জানায়, ‘আমরা গতকাল কথা হয়েছিল। কিন্তু আজ আর কোনো কথা বলা হয়নি। তাও আমরা আজ খোঁজ নিয়েছি। তবে বাসায় কেউ না থাকায় কথা বলা সম্ভব হয়নি। তদন্তের জন্য আমরা আবারও কথা বলবো।’
পোস্টমর্টেম রিপোর্ট
পোস্টমর্টেম রিপোর্টে বিষয়ে সূত্র জানায়, ‘এখনও পোস্টমর্টেম রিপোর্ট আসেনি। এটি আসতে সময় লাগে। এছাড়াও কয়েকটি টিম তদন্ত করছি। তদন্তের স্বার্থে অনেক পাওয়া তথ্যও গোপন করতে হচ্ছে।’
জোবায়েদ হত্যাকাণ্ড নিয়ে পুলিশের ‘ত্রিভুজ প্রেমের গল্প’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল নেতা মো. জোবায়েদ হোসেন হত্যাকাণ্ড নিয়ে পুলিশ ‘ত্রিভুজ প্রেমের গল্প’ সাজিয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. রইছ উদ্দীন।
আজ বুধবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির আয়োজনে ভাষা শহীদ রফিক ভবনের নিচে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সংবাদ সম্মেলন থেকে “ত্রিভুজ প্রেমের একটা গল্প” সাজানো হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে জোবায়েদের চরিত্র হননের চেষ্টা করা হয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, প্রক্টর, বিভিন্ন দপ্তরের প্রধান, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, ছাত্রদলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীর পাশাপাশি জোবায়েদের আইনজীবী মো. ইশতিয়াক হোসেনও ছিলেন।
ডিএমপির বক্তব্য নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে রইছ উদ্দীন বলেন, ‘আমাদের কিছু কিছু বিষয় নিয়ে সংশয় আছে, প্রশ্ন আছে। জোবায়েদকে হত্যার আগে তার ছাত্রী বর্ষা তাকে কল দিয়ে জিজ্ঞাসা করে, সে কখন আসতেছে, কতটুকু এসেছে এবং তার আসার বিষয়টি নিশ্চিত হয়। পরবর্তীতে তার লোকেশন চেক করে। বিষয়টি স্বীকারোক্তি দিয়েছিল ছাত্রী বর্ষা। সেটি এজাহারের প্রথম সূত্র হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু সেটি কেন বাদ দেওয়া হলো? সেটা কি ইচ্ছাকৃতভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে, নাকি পরে বাদ দেওয়া হয়েছে, সেটা আমাদের প্রথম প্রশ্ন।’
অভিযোগ করে ওই শিক্ষক বলেন, ‘সিসিটিভি ফুটেজে দুজন ব্যক্তিকে দেখা গিয়েছে। একজন কালো টি-শার্ট পরিহিত, আরেকজন লাল টি-শার্ট পরিধান করা ছিল। এই দুজনই কি গ্রেপ্তার হওয়া দুজন কিনা, আমরা কীভাবে নিশ্চিত হব? সংশ্লিষ্ট প্রশাসন পর্যাপ্ত প্রমাণ জব্দ করেছে কিনা, সেটা আমরা জানতে চাই।’
পুলিশের বিবরণের আরেকটি অংশ তুলে ধরে এই অধ্যাপক বলেন, ‘ডিএমপি যে বিবৃতি দিয়েছে, হত্যার সময় সেখানে ধস্তাধস্তি হয়েছে। সাধারণত আমরা দেখি, ধস্তাধস্তির সময় আশপাশে অনেকে জড়ো হয়। তাহলে ওই বাসায় যে ধ্বস্তাধস্তি হয়েছে, তা কি কেউ কোনো শব্দ শোনেনি? তারা কেনো বাঁচাতে আসলো না?’
মামলার বাদী পক্ষের অভিযোগ
মামলার এজহারের বিষয়ে অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন শেষে বাদী পক্ষের আইনজীবী ইশতিয়াক জিপু বলেন, ‘হত্যাকণ্ডের পর বর্ষা জোবায়েদের এক বন্ধুকে বলেছে, কে বা কারা জোবায়েদকে মেরে ফেলেছে। এটা সূচনা বক্তব্য। কিন্তু এসব কিছুই উল্লেখ করেনি পুলিশ। এছাড়া এই মামলায় ৪-৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। আমরা আশা করছি, খুব দ্রুত অজ্ঞাতনামা আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে। এই প্রত্যাশা পুলিশের কাছে।’
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
এদিকে জোবায়েদ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবিতে বিক্ষোভ করেছে তার বিভাগের (পরিসংখ্যান) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। গতকাল দুপুর ২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে ভাষ্কর্য চত্বরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। এ সময় পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রিপন রউফসহ বিভাগের অন্যান্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, গত রোববার জোবায়েদ হোসেন পুরান ঢাকার আরমানীটোলায় ১৫, নুরবক্স লেনে রৌশান ভিলা নামের বাসায় বর্ষা নামের এক ছাত্রীকে প্রতিদিনের মতোই ফিজিক্স ক্যামেস্ট্রি ও বায়োলজি পড়াতে যান। তিনি গত এক বছর ধরে ওই ছাত্রীকে পড়াতেন। ঘটনার দিন আনুমানিক বিকাল ৪টার ৪৫ মিনিটের দিকে ছাত্রীর বাসার তিন তলার সিড়িতে খুন হন তিনি।
| M | T | W | T | F | S | S | 
|---|---|---|---|---|---|---|
| 1 | 2 | |||||
| 3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8 | 9 | 
| 10 | 11 | 12 | 13 | 14 | 15 | 16 | 
| 17 | 18 | 19 | 20 | 21 | 22 | 23 | 
| 24 | 25 | 26 | 27 | 28 | 29 | 30 | 
 
 