সিলেট ১৫ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩১শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৫:৫১ অপরাহ্ণ, জুন ১৪, ২০২০
বিজয় রায়/ছাতকঃঃ
ছাতকে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা আশংকাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে অবাধ চলাফেরা করার কারনেই আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে স্বাস্থ্য বিভাগ মনে করছেন। শুধু পরীক্ষার আওতায় যাদের আনা হচ্ছে তাদের মধ্যে সনাক্ত হচ্ছে শতকরা প্রায় ৩০-৩৫ ভাগ।
গণহারে বা পর্যাপ্ত পরীক্ষা করা হলে বা করতে পারলে সনাক্তের পরিমান ধারনার বাইরেও চলে যেতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন। শুধু ১৫ জুন পর্যন্ত হিসেব অনুযায়ী ছাতক উপজেলায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ১৪৭ জন। অর্থাৎ মোট আক্রান্ত ১৪৭ জনের মধ্যে ১২৪ জনই সনাক্ত হয়েছেন গত দু’সপ্তাহে। এভাবে চলতে থাকলে এক পর্যায়ে করোনা পরিস্থতি নিয়ন্ত্রনহীন হয়ে পড়ার আশংকা রয়েছে।
করোনা সনাক্তের হার এমশঃ বৃদ্ধি পাওয়ায় আতংকে রয়েছেন সচেতন মহল। সচেতন মহল মনে করছেন, বাজারে আসা লোকজনের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। নিজেরা না বুঝেই অবাধ চলাফেলার মাধ্যমে অন্যজনকে সক্রামিত করছেন। এভাবেই এখানে একে অন্যের মাধ্যমে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে দিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তাই ডাক্তারদের মতে বাঁচতে হলে-স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। বর্তমান ডিজিটাল যুগে তথ্য আদান-প্রদানের অন্যতম বাহক হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক। ফেইসবুক ব্যবহার করে না এমন পরিবার পাওয়া অনেকটা দুষ্কর হবে।
করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির সৃষ্টি থেকে ফেসবুকের মাধ্যমে দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞরা নিয়মিত সতর্কবার্তার পাশাপাশি নিরাপদে থাকার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে জনগণের নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন জরুরী পদক্ষেও গ্রহন করেছে। সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী স্থানীয় প্রশাসন যথাযথভাবে আইনী ব্যবস্থা এখানে প্রয়োগ করতেও দেখা গেছে। উপজেলা প্রশাসন, পৌর প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংস্থা করোনা ভাইরাস সংক্রমন প্রতিরোধে মুর্হুমুহু প্রচার-প্রচারনা অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন।
কিন্তু এখানে সব চেষ্টাই যেন গুড়েবালি। লক্ষ করলে দেখা যায়, বাজারে বা শহরে আসা-যাওয়া করা রোকজনের মধ্যে অন্তত শতকরা ২০ ভাগ রয়েছে বখাটে প্রকৃতির লোক। যারা কোন কারন বা কাজ ছাড়াই এখানে-ওখানে বিপদজনকভাবে ঘুরাফেরা করছে। গুনীজনের মতে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্বের বিষয়টি এখানের সাধারন মানুষ হয়তো বুঝতে পারছে না, নতুবা সংশ্লিষ্টরা সাধারন মানুষকে বুঝাতে পারছেন না।
দেখা যায় এখানের বাজারে আশা লোকজনের মধ্যে শতকরা ৮০ভাগ মানুষই ব্যবহার করছেন না মাস্ক। মানছেন না সামাজিক দূরত্ব। সব শ্রেনী-পেশার ছোট-বড় সকল ব্যবসায়ীদেরও একই অবস্থা মাস্ক ব্যবহার বা স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। এখানের হাট-বাজারের অবস্থা দেখ মনে হয়ে করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতা সম্পর্কে এখানের সাধারন মানুষের বিন্দু মাত্র মাথাব্যথা নেই।
প্রত্যেকের সাথে মাস্ক থাকলেও তা পকেটে কিংবা হাতে ঝুলিয়ে রাখতে দেখা গেছে। পুলিশ দেখলে মাস্ক ব্যবহার করে, আবার চলে গেলে খুলে ফেলে। বাজারে প্রায় সব জায়গাই দেখা যায় একে-অন্যের হাত ধরে গলা-গলি করে রাস্তায় চলাচল করছে কিছু বখাটে শ্রেনীর যুবক। শহরের অলি-গলিতে বসা ছোট ছোট চা’র দোকানে কিছু মধ্য বয়সী যুবকরা চায়ের আড্ডায় মত্ত থাকতে দেখা গেছে।
বিশেষ করে শহরের ক্লাব রোডের কয়েকটি চায়ের দোকান ও একটি কফি সেন্টার প্রতিদিন রাত ১০ থেকে ১১ টা পর্যন্ত চো-কেনা চলে থাকে। এ ছাড়া সন্ধ্যা থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত প্রতিদিনই ট্রাফিক পয়েন্টে ভ্রাম্যমান বেশ কটি দোকান বসতে দেখা গেছে। এসব দোকানী ও ক্রেতাদের দেখলে যেকেউ ভাবতে পারে রাতে হয়তো করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হয় না।
আইন অমান্যকারী এসব মানুষের সংখ্যা অত্যন্ত কম হলেও এরা করোনা পরিস্থিতির বড় রকমের ক্ষতির কারন হয়ে দাড়িয়েছে। করোনা ভাইরাস সংক্রমন প্রতিরোধে সরকারের সকল প্রচেষ্টা ভেস্তে দিতে বসেছে শতকরা ৩০ ভাগ মানুষ।
অভিজ্ঞ মহলের মতে ওই ৩০ পার্সেন্ট অসচেতন মানুষকে যেদিন সচেতন বা প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে সেদিন করোনা ভাইরাসও প্রতিরোধের জালে এখানে আটকা পড়বে।