সিলেট ২১শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১০:৩২ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১, ২০২০
স্টাফ রিপোর্টারঃঃ
ভালবেসে বিয়ে করে গাজীপুর থেকে হবিগঞ্জে ছুটে আসে তরুনী। ১২দিন ঘর সংসার করার পরও নববধু এখন পিতার বন্দিশালায়। গভীর প্রেমের টানে গাজীপুরের টঙ্গি থেকে চলে আসা যুবতি ইকরা সরকার ও নবীগঞ্জের যুবক জনির সংসার এখন শশুরের অপহরন মামলায় তছনছ! ঐ প্রেমিক জুটি।
সূত্রে জানা গেছে, সিলেট নোটারি পাবলিক ও কাজী অফিসের মাধ্যমে প্রাপ্ত বয়সী হিসাবে তাদের বিবাহ হয়। এতে বাধাঁ হয়ে দাঁড়ালেন ইকরার বাবা মান্নান সরকার। তিনি এই বিয়েকে মেনে নিতে না পেরে টঙ্গি পশ্চিম থানায় তার মেয়ে অপহরণ হয়েছে মর্মে একটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ও অপহরন সহযোগীতার করার অপরাধের অভিযোগ তুলে ৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ৩/৪জন এর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
উক্ত মামলায় ইকরার চাচা শশুর রফিক মিয়া ও তার ননদের স্বামী শামিমুল ইসলামকে পুলিশ গ্রেফতার করে। এই ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশের হাতে ধৃত রফিক ও শামিমকে থানা থেকে ছাড়াতে নবীগঞ্জ থেকে টঙ্গি পশ্চিম থানাতে চলে যান নববধু ইকরা। স্বামীর স্বজনদের ছাড়াতে স্ব-ইচ্ছায় ইকরা থানায় গিয়ে পড়েন চরম বিপাকে। একদিকে থানা পুলিশ, অপরদিকে ইকরার বাবা। ইকরা সরকার তার বাবার দায়েরকৃত অপহরন মামলার কারণ জানতে চাইলে ও এর প্রতিবাদ জানালে তার উপর ক্ষেপে যান তার বাবা।
এক পর্যায়ে উক্ত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই ইয়াছিন আরাফাত (বিপি- ৮৭১৪১৭৩৪৮৪) (নিঃ) তিনি নববধু ইকরা সরকারকে হুমকি দিয়ে বলেন, যদি তুমি তোমার স্বামীকে বাচাঁতে চাও তবে, তোমাকে অপহরন হয়েছে মর্মেই মিথ্যা স্বীকারোক্তি দিতে হবে। নয়তো তোমার স্বামীকে ক্রসফায়ার করে মেরে ফেলা হবে, উল্লেখিত কথা গুলি বলে নবীগঞ্জের এক সাংবাদিকের মোবাইল ফোনে আলাপচারিতায় বিস্তারিত তুলে ধরেন ইকরা সরকার।
এছাড়া তিনি আরো জানান, তার বাবা ও পুলিশের এসব হুমকিতে থানায় তিনি বাধ্য হয়ে মিথ্যা স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। এর পরপরই তার পিতা এম এ মান্নান সরকার তাকে তার জিম্মায় নিয়ে গৃহবন্দি করে রাখেন।
এবং তিনি আরো বলেন, আমি গত ৩দিন যাবৎ বন্দি অবস্থায় রয়েছি। এই বন্দিশালা থেকে মুক্তি পেতে সাংবাদিক ও প্রশাসনের সহযোগীতা কামনা করছি। এরপর তিনি মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকটও আকুল আবেদন করে বলেন, এই বন্দিদশা ও হয়রানী থেকে মুক্তি চাই। নিন্মে তার হুবহু বক্তব্য তুলে ধরা হলো।
আমি ইকরা সরকার টঙ্গি থেকে বলছি। আমি খুব কষ্ট করে আপনার মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করেছি। আমাকে আমার আব্বু থানা থেকে পুলিশকে ম্যানেজ করে বাসায় এনে জিম্মি করে রেখেছেন। গত ৮ তারিখ আমি বিয়ে করেছি। আমি বাসা থেকে যাওয়ার পরে আমার বাবা টঙ্গি পশ্চিম থানায় গিয়ে আমার স্বামীর বিরোদ্ধে মিথ্যা সাজানো অপহরন মামলা দায়ের করেছেন। মামলা দায়ের পর থেকে আমার স্বামীকে ধরার জন্য অনেকে চেষ্ঠা করেছেন। কিন্তু এই মামলায় ২জন আসামীকে গ্রেফতার করার খবর পেয়ে আমি জানুয়ারীর ১২ তারিখে ঐ থানায় উপস্থিত হই।
সেখানে উপস্থিত হওয়ার পর আমার বাবা আমার স্বামীর বিরোদ্ধে মিথ্যা কথাবার্তা বলিয়ে দারগা আরাফাত ইয়াসিন এর মাধ্যমে লিখিত বক্তব্য নেয়। এবং মিথ্যা বক্তব্য যদি না দেই তাহলে আমার স্বামীকে ক্রসফায়ার করে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দেয়। যদি তাদের কথা মতো মিথ্যা বক্তব্য দেই তাহলে আমার স্বামীকে মারবে না। আমি তাদের কথা বিশ্বাস করে বক্তব্য দিয়েছি। এরপর আমার বাবার জিম্মায় থানা থেকে আমাকে বাসায় নিয়ে এসে বন্ধি করে রাখা হয়। আমার বাবা গত ৩দিন ধরে আমাকে নানা ধরনের চাপ প্রয়েগ করছে, আমার স্বামীকে আমি ডিভোর্স দেওয়ার জন্য। কিন্তু ভাইয়া আমি আমার স্বামীকে ছাড়তে চাইনা এবং তালাকও দিতে চাচ্ছিনা। আমি আমার স্বামীর কাছে ফিরে যেতে চাই। আপনার মাধ্যমে দেশ- বিদেশের সকল সাংবাদিক ভাইদের নিকট আকুল আবেদন আপনারা আমাকে সাহায্য করুন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, আমার বাসা গাজিপুর টঙ্গি কলেজ গেইট, দত্তপাড়া হাসান লেন। হাউজ ৪৯, আমি বাসার দু’তলায় বন্ধি। আমাকে বাসা থেকে বের হতেও দেয়না বা কারো সাথে কথা বলতেও দিচ্ছেনা, দেখা করতে দিচ্ছেনা। আমার স্বামীর বিরোদ্ধে আমার বাবা মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করতেছে এবং আমার স্বামী এখন পলাতক রয়েছে। আমি আমার স্বামীকে খুজে পাইতেছিনা, দেখাও করতে পারছিনা। যদি আমার স্বামীর কিছু হয় তাহলে আমার বাবাই দায়ী থাকবেন। আপনারা সকল সাংবাদিক ভাইদের নিকট আকুল আবেদন জানিয়ে বলছি যে, প্রশাসনের সাহায্যে আমাকে এই বন্ধিদশা থেকে মুক্ত করুন। এবং মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট আমার প্রাণ ভিক্ষা চাই যে, তিনি যেন আমাকে এই বন্ধিদশা ও হয়রানী থেকে মুক্ত করেন।
উল্লেখ্য যে, গাজীপুর সিটির টঙ্গি পশ্চিম থানার ৪৯ হাসানলেন এর বাসিন্দা এম এ মন্নান এর কন্যা ইকরা সরকার (২১) ও হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার কালিয়ার ভাঙ্গা ইউনিয়নের দেবপাড়া গ্রামের সিরাজুল ইসলামের পুত্র মোঃ আমিনুল ইসলাম (জনি) একে অপরকে ভালবেসে গত ৬ ডিসেম্বর ঢাকা হযরত শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দর থেকে একটি ফ্লাইটে সিলেট ওসমানী আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দরে এসে পৌছেন ইকরা সরকার। এরপর দিনই ৮ ডিসেম্বর ২০১৯ইং তারিখে সিলেট জজ কোর্ট নোটারী পাবলিক সমগ্র বাংলাদেশ সিলেট এর মাধ্যমে বিবাহ সংক্রান্ত হলফনামায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। পরবর্তীতে সিলেট একটি কাজী অফিসের মাধ্যমে ইসলামী শরিয়া ও সরকারী বিধি মোতাবেক তারা স্বামী স্ত্রী হিসাবে কাবিন রেজিষ্ট্রিও করেন। এই বিবাহ মেনে না নিতে পেরে প্রভাবশালী ইকরার বাবা এম এ মান্নান মিথ্যা সাজানো অপহরনের অভিযোগ তুলে গত ৪ জানুয়ারী ২০২০ইং তারিখে টঙ্গি পশ্চিম থানায় মামলা দায়ের করে। এরপর পরই জনির ২ আত্মীয়কে পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার করিয়ে টঙ্গি থানা পুলিশ গাজীপুর আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরন করে। ইকরাকে তার বাবা ও আত্মীয়- স্বজনরা বাসায় গৃহবন্দি করে নির্যাতন করছেন বলে ইকরা অভিযোগ করেন। এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্র প্রধান মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।