সিলেট ১৪ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১লা ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৮:০৬ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২০
শিপন আহমদঃ
সিলেটের ওসমানীগরের মোবারকপুরে উচ্চ বিদ্যালয় স্থাপনের ফলে লেখা পড়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে শিক্ষা ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকা ১০ গ্রামের প্রায় ৫ শতাধিক মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের। বিগত সময়ে মাধ্যমিক বিদ্যালয়বিহীন অবহেলিত ওই এলাকায় শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক পর্যায়ে থেকে জড়ে যেত । তবে উপজেলার সাদীপুর ও গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের বৃহত্তর মোবারকপুর এলাকার প্রবাসী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সার্বিক অর্থায়নে স্থাপিত ওই বিদ্যালয়ের চলতি বছরের জানুয়ারী থেকে পাঠদান কার্যক্রম শুরু হওয়ায় আলোর ঝিলিক দেখতে পাচ্ছেন স্থানীয়রা। এদিকে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখিসহ বৃহত্তর মোবারকপুর অঞ্চলে উচ্চ শিক্ষার হার শত ভাগ নিশ্চিত করতে ইতিমধ্যে বিদ্যালয় বাস্থবায়ন কমিটি ইউকের পক্ষ থেকে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদানের ঘোষণা দিয়েছেন। কোন ধরণের বেতন বা ফি ছাড়াই বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করতে পারছে এ অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা।এমনকি গরীব শিক্ষার্থীদের আর্থিক সুবিধাও দিয়ে যাচ্ছেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
জানা যায়,শত বছর ধরে ওসমানীনগর উপজেলার বৃহত্তর মোবারকপুর-মনতৈল,জহিরপুর,পূর্বগোজাতলী-গাভুরটিকি,-নুরপুর,জহিরপুর-মতিয়ারগাঁও-সম্মানপুর,ভরাউট ,হলিমপুর, লামা গাভুর টিকি,জহিরপুর এলাকার মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা ৬/৭ কি:মি:রাস্তা পায়ে হেটেঁ বা রিক্স্রায় ছড়ে বেগমপুর উচ্চ বিদ্যালয়,গোয়ালা বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ে যেতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে এলাকার প্রায় পাঁচ শতাধিক কমলমতি শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক পাড়ি দিয়ে ওইসব বিদ্যালয়ে গিয়ে লেখাপড়া চালিয়ে গেলে যাতায়ত ব্যবস্থার কারনে অনেকেই লেখা পড়া ইতি টানতে হয়। শিক্ষার্থীদের দুর্দশার কথা মাথায় এনে প্রায় এক যুগ ধরে এলাকাবাসী উদ্যোগে মোবারকপুর এলাকায় বারবার উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার জন্য সভা-সমাবেশ করলেও নামকরণসহ নানা বেড়াজালে আর বিদ্যালয় স্থাপন হয়নি। অবশেষে গত বছরের শেষের দিকে প্রবাসে বসবাসরত বৃহত্তর মোবারকপুর এই এলাকার মানুষ ঐক্যবদ্ধ হন। দীর্ঘ প্রচেষ্ঠার পর সেই স্বপ্ন বাস্তবে রুপ নিয়ে মোবারকপুর উচ্চ বিদ্যালয় নামে বিদ্যালয় স্থাপন করে চলতি বছরের জানুয়ারী মাসেই শুরু হয়েছে পাঠদান।
অবহেলিত এলাকায় বিদ্যালয়টি হওয়ায় স্থাপনের প্রথম বছরেই ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় দুই শতাধিককের উপরে দাঁড়িয়েছে বলে জানান,বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি আবুল লেইছ বলেন, বিদ্যালয় না থাকায় এলাকার প্রায় অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা অল্প বয়সেই বিভিন্ন কায়িক শ্রমের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়তো। মোবারক পুরে উচ্চ বিদ্যালয় স্থাপনের ফলে শিক্ষা ক্ষেত্রে আলোকিত হওয়ায় স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছেন পিছিয়ে থাকা স্থানীয় বাসিন্দারা।
বিদ্যালয় বাস্থবায়ন কমিটির বাংলাদেশ শাখার সভাপতি হাজি আব্দুল খালিক, সাবেক মেম্বার আব্দুল হাই,স্থানীয় বাসিন্দা মনোহর আলী,সৌদি প্রবাসী সেবুল আহমদ, আনহার আলীসহ অনেকেই জানান,নব্স্থাপিত মোবারকপুর উচ্চ বিদ্যালয় এলাকার বাসিন্দা প্রায় ১২ হাজার। এখানে রয়েছে পাঁচটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এসব প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো থেকে প্রতি বছর প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী প্রাথমিক সমাপনী পরিক্ষায় অংশ গ্রহন করে ভাল ফলাফল করে আসছে। যারা এবছর থেকে আর ৬/৭ কি:মি: রাস্তা অতিক্রম করে আর অন্য উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হচ্ছে না। শিক্ষার্থীর দূর্ভোগ ও এলাকার শিক্ষা বিস্তারে এগিয়ে আসার জন্য বৃহত্তর মোবারকপুর গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত প্রবাসীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তারা।
অভিভাবকরা জানিয়েছেন,এলাকায় বিদ্যালয় স্থাপন হওয়ায় যাতায়ত সমস্যার কারনে আমাদের ছেলে মেয়েদের আর লেখা পড়া বন্ধ হবে না। প্রয়োজনে আমরা নিজেরা সেচ্চাশ্রমের বিনিময়ে বিদ্যালয়ের সার্বিক কল্যানে কাজ করে যাব।শিক্ষার্থীরা জানায়,আমাদের এলাকায় কোন উচ্চ বিদ্যালয় না থাকায় আমরা প্রতিদিন পায়ে হেঁটে ও গাড়িতে চড়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গোয়ালাবাজার ও বেগমপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে যেতে হতো। আমাদের সহপাটিদের মধ্যে যাতায়ত ব্যবস্থার কারনে লেখা-পড়া ছেড়ে দিয়েছিল। গ্রামে বিদ্যালয় স্থাপন হওয়ায় আমরা খুব খুশি। আমরা এখন নিজ গ্রামের বিদ্যালয়ে লেখা-পড়া করতে পারছি।
বিদ্যালয় বাস্থবায়ন কমিটির ইউকে শাখার সভাপতি ও মোবারকপুর ওয়েল ফেয়ার ট্রাষ্টের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব ফজল উদ্দিন,সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান সহিদ,প্রবাসী কমিউনিটি নেতা আব্দুল হক,হুমায়ুন রশিদ খোকন,কানাডা প্রবাসী আব্দুল আহাদ বলেন, শিক্ষাক্ষেত্রে নানা বৈষম্যের স্বীকার আমাদের বৃহত্তর মোবারকপুর।এলাকার ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখি করে উচ্চ শিক্ষিত করে গড়ে তুলার লক্ষ্যে বিদ্যালয় স্থাপনের মূল লক্ষ্য। বিশেষ করে বিদ্যালয় না থাকায় আমরা শিক্ষার দিক থেকে অনেকটা পিছিয়ে আছি।এলাকার শিক্ষার হার শতভাগে নিয়ে আসতে সুষ্ট পাঠদানসহ নব্য প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়ের কল্যানে সকলের সার্বিক সহযোগিতার আহব্বান জানান।
এলবিএন/১৩/এফ/এস/৭০-০২