সিলেট ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৭:০৫ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২০
সেলিম মাহবুবঃঃ
মরিলে কান্দিসনা আমার দায়রে যাদুধন মরিলে কান্দিসনা আমার দায়, সূরা ইয়াছিন পাঠ করিও বসিয়া কাছায়, আমার প্রাণ যাবার বেলায়, বিদায় কালে পড়িনা যেন শয়তানের ধূকায় রে যাদুধন মরিলে কান্দিসনা আমার দায়,/সিলেট পরতম আযান ধ্বনি শাহজালাল বাবায় দিয়াছে, তোরা শুন সেই আযান ধ্বনি আইজো হইতাছে, যেই ধ্বনিতে পাথর গইলা পানি হইয়াছে, সিলেট পরতম আযান ধ্বনি বাবায় দিয়াছে ও শেষ বিয়ার শানাইসহ জনপ্রিয় অসংখ্য গানের শ্রষ্টা মরমি কবি গিয়াস উদ্দিন আহমদ। তার মৃত্যুর প্রায় পনের বছর পর মরমি কবি গিয়াস উদ্দিন আহমদ স্মরণে লোকজ উৎসব উদযাপন করা হয়েছে।
মরমি কবি গিয়াস উদ্দিন আহমদ লোক উৎসব উদযাপন পর্ষদ এর উদ্যোগে মঙ্গলবার রাত ৮টায় তার জন্মস্থান ছাতক উপজেলার গোবিন্দগঞ্জস্থ বালুর মাঠে অনুষ্ঠিত লোকজ উৎসবে দেশের বিশিষ্ট লোক সংস্কৃতিক গবেষক, কবি, সাহিত্যিক, নাট্যকার, সাংবাদিক, বাউল শিল্পি, জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেনি পেশার মানুষ অংশ গ্রহণ করে উৎসবকে প্রাণবন্ত করে তুলেন। উৎসবে গুণীজন সম্মাননা, মরিলে কান্দিসনা আমার দায় বইয়ের মোড়ক উন্মোচন, কবির বর্নাঢ্য জীবনী নিয়ে আলোচনা ও তার লেখা গান পরিবেশন করেন দেশের প্রখ্যাত শিল্পী ও অনুষ্টানের আলোচকবৃন্দ।
লোক উৎসব উদযাপন পর্ষদের আহবায়ক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অলিউর রহমান চৌধুরী বকুলের সভাপতিত্বে অনুষ্টিত লোকজ উৎসবের উদ্বোধন করে মরমি কবির জীবনী ও তার লেখা গান নিয়ে আলোচনা করেন একুশে পদক প্রাপ্ত লোক সংগীত শিল্পী, সুনামগঞ্জের কৃতি সন্তান সুষমা দাশ। এসময় লোকজ উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্টানে অন্যান্যদের মধ্যে মরমি কবির জীবনী ও তার লেখা গান নিয়ে আলোচনা করেন বাংলা একাডেমির সহকারী পরিচালক লোক সংস্কৃতি গবেষক ও নাট্যকার ড. সাইমন জাকারিয়া, নাগরীলিপি গবেষক মোস্তফা সেলিম, ছাতকের সাবেক উপজেলা নির্বাহী বর্মকর্তা ও অতিরিক্ত সচিব লুৎফুর রহমান, প্রখ্যাত সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমদের সহধর্মীনি নাট্য অভিনেত্রী ও পরিচালক মেহের আফরোজ শাওন, লোক সংস্কৃতি গবেষক ও প্রাবন্ধিক সুমন কুমার দাশ, শিল্পী হিমাংশু বিশ্বাস, জামাল উদ্দিন হাসান বান্না, ভারতের কবি কাজল চক্রবর্তী, ছাতক উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান চৌধুরী মিজান, পৌর সভার প্রতিষ্ঠাতা সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল ওয়াজিদ মজনু, বিশিষ্ট শিল্পপতি আশরাপুর রহমান চৌধুরী ও কবিপুত্র আনোয়ার হোসেন রনি।
বাংলাদেশ বেতারের উপস্থাপক সৈয়দ সাইমুম আনজুম ইভানের পরিচালনায় আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন, উদযাপন পর্ষদের সদস্য সচিব ও গোবিন্দগঞ্জ আবদুল হক স্মৃতি অনার্স কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মহী উদ্দিন। এর আগে উদযাপন পর্ষদ এর পক্ষ থেকে গুনীজনদের উত্তরীয় ও সম্মাননা ক্রেষ্ট প্রদান করা হয়। আলোচনা শেষে সিলেট অঞ্চলের উপস্থিত শিল্পিদের সম্মিলিত কণ্ঠে মরমী কবির লেখা ‘সিলেট পরতম আযান ধ্বনি শাহজালাল বাবায় দিয়াছেন’ এই গানের মধ্যদিয়ে কবির লেখা গান পরিবেশন করেন দেশের খ্যাতনামা শিল্পিবৃন্দ। মরন সংগীত হিসেবে খ্যাত ‘মরিলে কান্দিসনা আমার দায়রে যাদুধন’ এ জনপ্রিয় গানটি পরিবেশনের মধ্য দিয়ে ছাতকের গোবিন্দগঞ্জে শ্রুতাদের মাতিয়ে গেলেন, প্রখ্যাত সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমদের সহধর্মীনি নাট্য অভিনেত্রী ও পরিচালক মেহের আফরোজ শাওন।
এছাড়া মরমী কবির লেখা অন্যান্য গান পরিবেশন করেন, একুশে পদকপ্রাপ্ত লোক সংগীত শিল্পি সুষমা দাশ, সেলিম চৌধুরী, আশিক, হিমাংশু বিশ্বাস, জামাল উদ্দিন হাসান বান্না, কৃঞ্চকলি, বাউল আবদুর রহমান, বাউল পাগল কালা মিয়া, বাউল বিরহী কালা মিয়া, বাউল সিরাজ উদ্দিন, বাউল সূর্যলাল, লাভলী দেব, পঙ্কজ দেব, তন্নি দে, সুপ্রিয়া দে, প্রদ্বীপ কুমার মল্লিক, অন্তরা বিশ্বাস পিংকি, লিংকন দাশ, জাহাঙ্গীর আলমসহ শিল্পীবৃন্দ। অনুষ্ঠানে বাতিঘর কর্তৃক প্রকাশিত লোকসংস্কৃতি গবেষক ও প্রাবন্ধিক সুমন কুমার দাশ সংকলিত মরমী কবির নির্বাচিত গান নিয়ে ‘মরিলে কান্দিসনা আমার দায়’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন, সুষমা দাশ ও লুৎফুর রহমানসহ অতিথিবৃন্দ।
এর আগে দুপুর সাড়ে টায় লোক উৎসব উপলক্ষে বিনা মূল্যে আলো রক্তদান সমাজ কল্যাণ সংস্থার উদ্যোগে উৎসবে আগত অর্ধশত লোকদের কাছ থেকে স্বেচ্চায় রক্ত সংগ্রহ ও বিনা মূল্যে রক্তের নির্ণয় করা হয়। পরে বিকেল ৩ টায় গোবিন্দগঞ্জ কলেজ সংলগ্ন মাঠে লন্ডনস্থ ব্রাইটন শহর থেকে বাংলাদেশে আগত ব্রাইটন ফুটবল ক্লাব ও স্থানীয় সুমন ব্রাদার্স স্পোটিং ক্লাবের খেলোয়ারদের মধ্যে অনুষ্টিত হয় গিয়াস প্রীতি ফুটবল ম্যাচ। মরমি কবি গিয়াসউদ্দিন আহমদ ১৯৭৪ সালে গীতিকার হিসেবে বাংলাদেশ বেতারে স্বীকৃতি লাভ করেন। মরমী কবি গিয়াস উদ্দিন আহমদ ১৯৩৫ সালের ১২ আগষ্ট ছাতক উপজেলার ছৈলা আফজলাবাদ ইউনিয়নের শিবনগর গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন ফতেহ উল্যাহ ও মাতা অমুরতা বিবি। ১৯৮৯সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ঝলক ইন্টারন্যাশনাল আর্টিস এসোশিয়েশনের নিমন্ত্রনে সফর করেন। ২০০৫ সালের ১২ এপ্রিলে এ গুনী কবি’র মৃত্যু বরণ হয়।