ওসমানীনগরের ৮ ইউপিতে শেষ মুহূর্তে এগিয়ে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা

প্রকাশিত: ১২:৪৯ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ২৭, ২০২২

ওসমানীনগরের ৮ ইউপিতে শেষ মুহূর্তে এগিয়ে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা

প্রতিনিধি/ওসমানীনগরঃঃ
প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটের ওসমানীনগরের ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে শেষ মূহুত্বে প্রচার-প্রচারনায় ব্যাস্থ সময় কাটাচ্ছেন আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থী,বিদ্রোহী ও বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান এবং সাধারণ ওয়ার্ড ও সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থীরা। আগামী ৩১ জানুয়ারি উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও সদস্য পদের নির্বাচন নিয়ে প্রার্থীদের চোখে ঘুম নেই বললেই চলে। কাক ডাকা ভোর থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট প্রার্থনা,উঠান বৈঠক, জনবহুল স্থানে ও হাট-বাজারে নিবার্চনী সভা-সমাবেশের পাশাপাশি ভোটারদের দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতিও।

 

উপজেলার ৮ ইউনিয়নের কে হবেন চেয়ারম্যান, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য ও সাধারণ সদস্য তা নিয়ে ভোটারদের মধ্যেও চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। প্রতীক বরাদ্ধের প্রথম দিকে নিজ দলের বিদ্রোহী ও বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থীরা অনেকটা চাপের মুখে থাকতে দেখা গেলেও শেষ মূহুত্বে এসে উপজেলার ৮ ইউনিয়নের মধ্যে গোয়ালাবাজার,তাজপুর,উমরপুর, সাদীপুর, উসমানপুর ইউনিয়নের সাধারণ ভোটারদের সমর্থন আদায়ের মাধ্যমে নির্বাচনী মাঠ সম্পন্ন আওয়ামীলীগের দখলে দেখা যাচ্ছে।

 

বাকি ৪ টি ইউনিয়নে বিজয়ী হতে আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থীরা এলাকায় সরকারের উন্নয়নের ফিরিস্থি তুলে ধরার পাশাপাশি সাধারণ ভোটারদের কাছে টানতে কোমর বেঁধে মাঠে কাজ করে যাচ্ছে উপজেলা আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সংগঠন। অন্যদিকে দলের বিদ্রোহী ও বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সরকার দলীয় প্রার্থীদের ভোটের মাঠে ঘায়েল করতে নানা কৌশলে প্রচার-প্রচারনাসহ টাকার বিনিময়ে ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টার পাশাপাশি অবাদ নিরপেক্ষ সুষ্ট নির্বাচন প্রত্যাশা করছেন।

এদিকে, আওয়ামীলীগ দলের গঠনতন্ত্র লংঘন করে দলীয় প্রার্থীর বিপরীতে নির্বাচন করায় ইতিমধ্যে উপজেলার তাজপুর ইউনিয়নে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী অরুনোদয় পাল ঝলককে বহিস্কার করা হয়েছে। একইভাবে উসমানপুর ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান ময়নূল আজাদ ফারুক,সাদীপুরে গোলাম কিবরিয়া,পশ্চিম পৈলনপুর ইউনিয়নে এম মতিন উরপে গেদাই,বুরুঙ্গায় সুরমান মিয়া,সমজ্জুল হোসেন আলকাছকে বহিস্কার করেছে আওয়ামীলীগ।এছাড়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের কোনো নেতা-কর্মীরা বিদ্রোহী প্রার্থীদের সাথে হাত মিলালে উপজেলা আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে দলের সেসব নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

 

দলীয় প্রার্থীদের বিজয়ী করতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের সাথে উপজেলা নেতা-কর্মীরাও প্রচার প্রচারণায় সমান ভাবে অংশ গ্রহন করায় উপজেলার ৮ ইউনিয়নের মধ্যে ৪ টিতে নৌকা এগিয়ে রয়েছে বলে গুঞ্জন শুনা যাচ্ছে।দলীয় প্রার্থীদের জয়ী করার জন্য উপজেলার আওয়ামী লীগ ও তার অংঙ্গ সংগঠন গুলো দিন রাত প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত রয়েছেন। বিগত দিনে এলাকায় উন্নয়নের কারনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা তাদের জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।

 

তবে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী ও বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জানিয়েছেন,ভোটারদের ইচ্ছায় ও দাবীর প্রেক্ষিতে তারা নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেছেন। অবাধ, সুষ্ঠ এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হলে তারা জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।উপজেলায় এই ভোট যুদ্ধে প্রচার-প্রচারনায় পিছিয়ে নেই সংরক্ষিত মহিলা সদস্য প্রার্থী ও সাধারন সদস্য প্রার্থীরা। মহিলা প্রার্থীদের সাথে তাদের স্বামী-সন্তান এবং পুরুষ সদস্যদের সাথে তাদের স্ত্রী ও সন্তানেরা সমান ভাবে রাত দিন প্রচার প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন।

 

তাদের সবারই প্রত্যাশা ভোট যুদ্ধে জয়ী হওয়া। শেষ পর্যন্ত এদিকে নির্বাচনের তফশিল ঘোষনার প্রথম দিকে নানা ভেদাভেদ দেখা গেলেও নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থীদের বিজয়ী করতে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের দায়িত্বশীলরা সাধারণ ভোটারদের সাথে সরাসরি যোগাযোগের পাশাপাশি দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে সাধারণ ভোটারদের সমর্থন আদায়ে সর্ব চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।

 

সব মিলিয়ে উপজেলার ৮ ইউনিয়নেই নৌকার মাঝিদের ঘাটে বিরাতে উপজেলা আওয়ামীলীগ ব্যস্থ হয়ে উঠলেও তাজপুর, গোয়ালা বাজার,সাদীপুর ও উসমানপুর ইউনিয়ন ছাড়া বাকি ৪টি ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থীর বিজয় অনেকটা অনিশ্চিতা দেখা যাচ্ছে।

 

তবে বিগত ২০১৬ সালে অনুষ্টিত ইউপি নির্বাচনে ভুল সংশোধনের মাধ্যমে এবারের স্থানীয় নির্বাচনে ৮ ইউনিয়নেই আওয়ামীলীগের নৌকার বিজয় নিশ্চিতে এলাকা ভিত্তিক দলীয় নেতাকর্মী ভাগ করে নির্বাচনী প্রচারনা চালিয়ে যাওয়ায় ৮টি ইউনিয়নে বিজয় আনতে না পারলেও বেশ কয়টি ইউনিয়নে ঠিক মতো নৌকার নোঙ্গর ফেলতে পারবেন বলে মনে করছেন বিজ্ঞজনরা। আওয়ামীলীগ দলীয় প্রার্থীদের অভিযোগ, নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে উপজেলার বেশিরভাগ ইউনিয়নেই সাধারণ ভোটারদের সমর্থন নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের দখলে চলে যাওয়ায় কালো টাকার প্রভাব বিস্তারসহ নানা কৌশলে আওয়ামীলীগকে ঘায়েল করে মাঠ দখলের চেষ্টার করছেন বিদ্রোহী ও বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীরা।

 

তাদের দাবি, সাধারণ মানুষের জনসমর্থন দেখে বিদ্রোহী ও বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা কালো টাকাসহ নানা প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে সাধারণ ভোটারদের নাজেহাল করছে। কেউ টাকা না নিলেও ভিন্ন ভিন্ন কৌশলসহ নানা ভাবে হুমকি ধামকি নৌকা প্রতিকে ভোট দিলে প্রান নাশেরও হুমকি দেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন তারা।

 

এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করে কার্যত কোন ব্যবস্থা দৃশ্যমান নয় বলেও জানিয়েছেন তারা। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি দলীয় ভাবে অংশ গ্রহন না করলেও ওসমানীনগরে স্বতন্ত্রের মোড়কে বিএনপি সমর্থিতরা নির্বাচনে অংশ নিয়ে আওয়ামীলীগের প্রার্থীদের পরাজিত করতে ইলিয়াস আলী নিখোঁজের ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে উপজেলা ও ইউনিয়ন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নিয়ে দলীয় ভাবে প্রচার-প্রচারনা চালানোসহ একাধিক ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহীদের সাথে গোপন একট্টা ও আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের মাঝে কৌশলে নানা ফাটল ধরিয়ে নির্বাচনে নিজেদের বিজয় নিশ্চিতের চেষ্টা চালিয়ে যেতে দেখা যাচ্ছে।

 

একাধিক ইউনিয়নের সাধারণ ভোটার ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, আগামি ৫ বছরের জন্য উপজেলার ৮ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান হিসেবে কাকে নির্বাচন করবেন,সে বিষয়ে শেষ মুহুর্তের হিসেব কষা হচ্ছে। সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে কেন্দ্রে বিচারিক ক্ষমতাসহ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট,সেনাবাহিনী,বিজিবি সহ সার্বক্ষনিক আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তা ব্যাবস্থা জোরদারের আহব্বান জানান তারা।

উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আনা মিয়া বলেন,বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রানিত থেকে ওসমানীনগর উপজেলা আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ইউনিয়ন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাচ্ছে।দলের নির্দেশ অমান্য করে যারা বিদ্রোহী হয়ে বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সাথে জোট বেধে উন্নয়নের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনোনিত প্রার্থীদের পরাজিত করার চেষ্টা করছেন সাধারণ ভোটারা তাদেও বয়কট করে যাওয়ায় উপজেলার ৮ ইউনিয়নে নৌকার গনজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

 

ওসমানীনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান চৌধুরী নাজলু বলেন,উপজেলার ৮ ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিত করতে আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সংগঠন মাঠে ঐক্যবদ্ধ ভাবে মাঠে কাজ করছে। ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে কেউ যদি দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান করেন সেক্ষেত্রে তাৎক্ষনিক ওই সমস্ত নেতাকর্মীদের তালিকা তৈরী করে উপজেলা আওয়ামীলীগের কাছে প্রদানের জন্য ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

 

ওসমানীনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আতাউর রহমান বলেন,ওসমানীনগরে ৮ ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের প্রার্থীদের বিজয় ঠেকাতে নানামুখি সড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। সাধারণ ভোটারদের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস রেখে দলীয় প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিতে উপজেলা আওয়ামীলীগও অঙ্গ সংগঠন মাঠে কাজ করে যাচ্ছে।বঙ্গবন্ধুর প্রতীক নৌকার পক্ষে ওসমানীনগরের ৮ ইউনিয়নে সাধারণ ভোটার ইতিম্যে গনজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। আগামী ৩১জানুয়ারী অনুষ্টিত ইউপি নির্বাচনে ওসমানীনগরের ৮টি ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ প্রার্থীদের বিজয় হবে বলে আশাবাদ করেন তিনি।

Spread the love

আর্কাইভ

March 2025
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31