সিলেট ১৭ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:১৭ অপরাহ্ণ, মার্চ ২১, ২০২০
লন্ডন বাংলা ডেস্কঃঃ
দেশব্যাপী আতঙ্ক ছড়িয়েছে করোনা ভাইরাস। ‘লকডাউন’ হওয়ার আতঙ্কে বাড়িতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য মজুদ করছেন অনেকেই। এতে বাজারে বেড়েছে ক্রেতার চাপ। এ সুযোগে পণ্যের দামও বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। দাম বাড়ার এ প্রতিযোগিতায় সবচেয়ে বেশি বেড়েছে পেঁয়াজ। একদিনের ব্যবধানে মসলাজাতীয় এ পণ্যটির দাম বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ।
গতকাল শুক্রবার কারওয়ানবাজার, মালিবাগ, শান্তিনগরসহ রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এদিন খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে। একদিন আগেও ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। দুদিন আগে এ পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়।কারওয়ানবাজারের পেঁয়াজের ব্যবসায়ী জুয়েল মিয়া জানান, করোনা ভাইরাস আতঙ্কে গত বুধবার থেকেই পেঁয়াজ, রসুন, আদারচাহিদা বেড়ে যায়।
রান্নায় পেঁয়াজ অতিপ্রয়োজনীয় মসলা হওয়ায় পণ্যটি বেশি করে কিনছেন ক্রেতারা। বেশির ভাগ ক্রেতাই ২-৩ কেজির জায়গায় পাল্লা (৫ কেজি) হিসেবে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। বিগত কয়েক দিনে পেঁয়াজের চাহিদা অনেক হারে বেড়েছে। বিক্রিও বেড়েছে কয়েকগুণ।
চাহিদা বাড়লেও একদিনের ব্যবধানে দাম প্রায় দ্বিগুণ হওয়ার কারণ জানতে চাইলে কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা দিতে পারেননি খুচরা ব্যবসায়ীরা। তবে অনেকেই জানান, খুচরা বিক্রেতাদের হাতে দাম থাকে না। পাইকারিতে গত বৃহস্পতিবার দাম বেড়েছে। তার প্রভাব খুচরা বাজারে পড়েছে।
মালিবাগ বাজারের পাইকারি প্রতিষ্ঠান খোরশেদ বাণিজ্যালয়ের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ শাহবুদ্দিন বলেন, হঠাৎ সরবরাহের তুলনায় চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় মোকাম থেকেই দাম বেড়ে গেছে। বৃহস্পতিবার থেকে দুই দফায় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। ওইদিন বিকালে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হয় ৬০ থেকে ৬২ টাকায়। আগের দিন যা ছিল ৪০ থেকে ৪২ টাকা। এর পর শুক্রবার সকাল থেকে আরেক দফা ১০ টাকা বেড়ে যায়। এদিন পাইকারিতে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৭০ থেকে ৭২ টাকা কেজি দরে।
শ্যামবাজারের পাইকারি প্রতিষ্ঠান মিতালী বাণিজ্যালয়ের ব্যবসায়ী কানাই সাহা বলেন, এখন পেঁয়াজের ভরা মৌসুম। সেই হিসাবে দাম কমার কথা। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। করোনার আতঙ্কে মানুষ হঠাৎ বেশি করে পেঁয়াজ কিনতে শুরু করায় একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সুযোগে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
হঠাৎ দাম বাড়ায় ক্ষুব্ধ ক্রেতারাও। তাদের দাবি, করোনার আতঙ্ককে পুঁজি করে পেঁয়াজ নিয়ে নতুন করে কারসাজি শুরু করেছে। কারওয়ানবাজারে পেঁয়াজ-রসুন কিনতে আসা আনোয়ার হোসেন নামক এক ক্রেতা বলেন, দেশটা যেন মগের মুল্লুকে পরিণত হয়েছে। সুযোগ পেলেই যে যেমন পারছে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। কেউ যেন দেখার নেই। ম্যাজিস্ট্রেট একদিকে অভিযান চালাচ্ছে, ব্যবসায়ীরা অন্যদিকে ঠিকই বেশি দাম রাখছে।
পেঁয়াজের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে রসুন ও আদারও। গতকাল খুচরা বাজারে চায়না রসুন বিক্রি হয়েছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা কেজি দরে। দুদিন আগেও যা ছিল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। দেশি রসুনের কেজি বিক্রি হয়েছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়, বুধবার যা ছিল ৭০ থেকে ৮০ টাকা। এ ছাড়া ১০০-১২০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া আদার দাম বেড়ে হয়েছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায়।
এদিকে বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রির দায়ে গতকাল কারওয়ানবাজারের বেশ কয়েকটি পাইকারি ব্যবসায়ীকে জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এ বিষয়ে অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে মানুষ বেশি কেনাকাটা করায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সুযোগে পণ্যের দাম বাড়িয়েছে। অতিরিক্ত দাম রাখা ও পণ্যের মূল্যতালিকা না থাকায় আজ (শুক্রবার) কারওয়ানবাজারের কয়েক ব্যবসায়ীকে জরিমানা করেছি। একই সঙ্গে তাদের সতর্ক করা হয়েছে। এর পর একই অপরাধ করলে প্রতিষ্ঠান সিলগালা করে দেওয়া হবে।