সিলেট ৪ঠা অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৯:২৯ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৮, ২০২০
প্রাণঘাতি কোভিড ১৯ করোনা ভাইরাসের করাল গ্রাসে নিমজ্জিত বিশ্ববাসীর সাথে হাওরবাসীও রয়েছে চরম বিপাকে। করোনার ভয়ে ঘরবন্দি হতদরিদ্র থেকে কোটিপতি সবাই। যাদের ঘরে খাবার আছে তাদের ত কোন সমস্যা নেই। সমস্যা যা হতদরিদ্র, নিন্মমধ্যবিত্ত, দৈনিক ভিত্তিক শ্রমজীবীরা।
চলতি বোরো মৌসুমে হাওরের বোরো ফসল ঘরে তুলতে কৃষক-কৃষাণীরা আশায় বুক বেধে আছেন। সেই সাথে হতদরিদ্র ও দরিদ্র শ্রেণীর মানুষও বোরো ধান কেটে কয়েকমাসের খাবার ঘরে উঠানোর স্বপ্ন দেখে আসছে। আর সেই স্বপ্ন ভাঙ্গতে শুরু করেছে প্রকৃতি। এরই মাঝে ঝড়-বৃষ্টি, আগাম বন্যা, শিলাবৃষ্টি ও বিনামেঘে বজ্রপাত আতংক আরও বাড়িয়ে দিয়েছে তাদের মাঝে। বোরো মৌসুমের শুরুতে শনিবার এক দিনে চার উপজেলার চার কৃষকের মৃত্যু যেন আতংককে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
সরকার সাধারন মানুষকে সাধ্যমত সাহায্য সহযোগিতা করার প্রাণান্ত চেষ্টা করলেও কিছু স্বার্থবাদী জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ মহাবিপদেও গরিবের ত্রাণ চুরি করতে নানান কুট কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে কয়েকজনকে সরকারী চালসহ ধরে জেলে পাঠালেও টনক নড়ছে না মানুষরূপী জনপ্রতিনিধি নামের কিছু অমানুষের। লকডাউনে সারা দেশের মানুষ ঘরবন্দি হয়ে খাদ্যের জন্য হাহাকার করছেন।
অন্যদিকে ঝড় বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি, আগাম বন্যার পূর্বাভাস ও করোনার ভয়ে তটস্থ হাওরপাড়ের মানুষ। করোনার ভয়কে জয় করতে হাওর পাড়ের কৃষক ও শ্রমজীবীরা ধান কাটতে হাওরে নেমেছে। জীবন যুদ্ধে জয়ী হতে মরিয়া হয়ে উঠছেন তারা। অন্যান্য বছর বাহিরের জেলা উপজেলা থেকে অনেক শ্রমিক ধান কাটতে আসলেও চলতি বছর হাওরাঞ্চলের বিভিন্ন হাওরে করোনা ভাইরাসের মহামারী বৃদ্ধির আশংখায় অনেক শ্রমিক আসতে পারছেন না এবং ধান কাটা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন হাওর পাড়ের কৃষক। একবার হাওরের বোরো ফসল অকাল বন্যায় তলিয়ে গেলে কিংবা ফসল উঠাতে না পারলে অন্তত ৩-৪ বছর কষ্ট সহ্য করতে হয় হাওরের কৃষক পরিবারে।
এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অনেকে স্বল্পমুল্যে জায়গা জমি বিক্রি করে দরিদ্র হওয়ার নজিরও কম না। ধার দেনা, ব্যাংক বীমা ও এনজিও থেকে ঋণ গ্রহন করে হাওরে ধান ফলাতে দিন রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন কৃষকরা। ধান কাটতে কৃষকরা যখন হাওরে যায় তখন অজানা মৃত্যু তাদের তাড়া করে বেড়ায়। কখন যেন বিনামেঘে বজ্রপাতে অকালে প্রাণ হারাতে হয়। প্রাণের ভয় তো সকলেরই আছে। গেল বছরও শতাধিক মানুষ হাওরে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে মারা গেছেন। তাদের পরিবারে দেখা দিয়েছে মহাসংকট। পিতা বা অভিভাবকের অকাল মৃত্যুতে নিহতের পরিবারে নেমে এসেছে চরম সংকট।
চলতি বছরের শুরুতেই তরতাজা চারটি প্রাণ ঝড়ে গেল। পরিবারের সদস্যদের মুখে খাবার যোগাড় করতেই জীবন বাজি রেখে ধান কাটছেন এসব দরিদ্র দিন মজুর। বজ্রপাত নিয়ন্ত্রনে সরকার কিছু পদক্ষেপের মাঝে তালগাছ লাগালেও সেগুলোর হিসাব মিলছে না বছরের শেষে। এই বজ্রপাত নিয়ন্ত্রনে আনতে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করা সময়ের দাবী। হাওর পাড়ে বজ্রপাত নিয়ন্ত্রক ডিভাইস স্থাপন করা গেলে অকালে ঝড়ে পড়া রোধ সম্ভব হবে। সে জন্য দেশের উচ্চ পর্যায়ে এ নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে হবে। বজ্রপাতে শহরের চেয়ে গ্রামে গঞ্জেই বেশী লোক মারা যায়।
বজ্রপাতে অকাল মৃত্যু রোধে দ্রুত বৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনা করতে হবে। সরকার হাওরের ফসল রক্ষায় কোটি কোটি টাকা বাধ নির্মানে ব্যয় করলেও বজ্রপাত নিয়ন্ত্রনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন না করায় মৃত্যুর ঝুকি নিয়েই হাওরে ধান কাটতে যেতে হচ্ছে কৃষক ও শ্রমিকদের। বজ্রপাত নিয়ন্ত্রনে কার্যকরী ব্যবস্থা নিয়ে অকাল মৃত্যুর হাত থেকে কৃষকদের রক্ষা করতে হবে। বজ্রপাত নিয়ন্ত্রনে জরুরী ভিত্তিতে গ্রহন করতে হবে বজ্রপাত নিয়ন্ত্রন বিষয়ক প্রকল্প।
পৃথিবীর আর কোন দেশে বজ্রপাতে এভাবে এত মানুষ মারা যায় কিনা সন্দেহ। হাওরবাসীর জীবন বাচাঁতে ফসল রক্ষা বাধঁ নির্মানের মত বজ্রপাত নিয়ন্ত্রনে প্রকল্প নেয়া সময়ের দাবী। সেই সাথে শিলা-ঝড়-বৃষ্টি ও আগাম বন্যার হাত থেকে মানুষকে বাচাঁতে হাওর ও জলাশয় অধিদপ্তরের অধীনে মহাপরিকল্পনা গ্রহন করতে হবে।
-লেখক: মোঃ মাহতাব উদ্দিন তালুকদার, সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক হাওরাঞ্চলের কথা।