সুনামগঞ্জে পাহাড়ি ঢলের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত ৪৪ হাজার পরিবার

প্রকাশিত: ১২:৪৭ অপরাহ্ণ, জুন ২৮, ২০২০

সুনামগঞ্জে পাহাড়ি ঢলের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত ৪৪ হাজার পরিবার

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃঃ

আজ সকাল থেকে বৃষ্টি না হওয়ায় সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতি পরিবর্তিত রয়েছে। তবে পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জ পৌরসভার ৮০ ভাগ ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। শহরের নবীনগর, ধোপাখালী, ষোলঘর, কাজীরপয়েন্ট, তেঘরিয়া, সাববাড়িরঘাট, হোসেনবখত চত্বর, পশ্চিম হাজীপাড়া, জগন্নাথবাড়ি, জেলরোড, লঞ্চঘাট, সুরমা মার্কেট, হাছননগর, মল্লিকপুর, কালীপুর , রায়পাড়া, সোমপাড়া, আরপিননগর, বড়পাড়াসহ সবকটি আবাসিক এলাকার সড়ক ঢলের পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।

 

নীচু এলাকার শতাধিক বাড়িঘরে ঢলের পানি প্রবেশ করেছে। পৌর এলাকার সড়ক গুলো পানিতে নিমজ্জিত থাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। শহরের লোকজন পায়ে হেঁটে পানি মাড়িয়ে বাসাবাড়িতে চলাচল করছেন।

 

জেলা বন্যা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সূত্রে জানাযায়, সীমান্তের ওপাড় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে সুনামগঞ্জ সদর, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মাপাশা, দোয়ারাবাজার, জগন্নাথপুর, ছাতক, শাল্লাসহ ৯টি উপজেলার ২৯ টি ইউনিয়নের ৪৪ হাজার ১১০টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

 

এগুলো হলো সদর উপজেলার গৌরারং,সুরমা,জাহাঙ্গীরনগর, রঙ্গারচর ইউনিয়ন ও সুনামগঞ্জ পৌর এলাকার ৫ হাজার পরিবার, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ফতেহপুর, ধানপুর, সলুকাবাদ,পলাশ দক্ষিণ বাদাঘাট ইউনিয়নের ৫ হাজার পরিবার, জামালগঞ্জ উপজেলার বেহেলী ও ফেনারবাক ইউনিয়নের ৪০০ পরিবার, ধর্মপাশা উপজেলার চামরদানী ও দক্ষিণ বংশীকুন্ডা ইউনিয়নের ২৫০টি পরিবার, শাল্লা উপজেলার বাহারা ও হবিবপুর ইউনিয়নের ১৪টি পরিবার।

 

তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট,বড়দল উত্তর, বড়দল দক্ষিণ, শ্রীপুর উত্তর ও শ্রীপুর দক্ষিণ,বালিজুরি ও তাহিরপুর সদর ইউনিয়নের ৩ হাজার পরিবার, দোয়ারাবাজার উপজেলার সুরমা ও সদর ইউনিয়নের ১১ হাজার পরিবার, ছাতক উপজেলার ইসলামপুর,নোয়ারাই,কালারুকা,দোলারবাজার ইউনিয়ন ও ছাতক পৌর এলাকার ১৯ হাজার ৩৯৬টি পরিবার ও জগন্নাথপুর উপজেলার ৫০টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

 

সদর উপজেলার ২৫ টি, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ১০০টি, ছাতক উপজেলার ৫০টি,দোয়ারাবাজার উপজেলার ৯টি ধর্মপাশা উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারসহ মোট ১৯৭ টি পরিবার এখন পর্যন্ত আশ্রয় কেন্দ্রে এসে ওঠেছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানাযায়, ৩ হাজার ৭৬৫ হেক্টর আউশ ধানের জমি ও ১৮৮ হেক্টর বর্ষাকালীন সবজি ক্ষেত ঢলের পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।

 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সবিবুর রহমান বলেন, সুরমা নদীর পানি ৭০ সেন্টিমিটার ও শক্তিয়ার খলা যাদুকাটা নদীর পানি বিপদ সীমার ৯০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহীত হচ্ছে। আগামী ৪৮ ঘন্টায় সুনামগঞ্জে আরও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলা গুলোতে ৪১০ মেট্রিক টন চাল এবং ২৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে।

 

এছাড়া উপজেলাস সমূহে ৪ হাজার ৭৫২ টি পরিবারের মাঝে শিশু খাদ্য বিতরণের জন্য বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। উপজেলায় ও ইউনিয়ন পর্যায়ে শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও পানি বিশুদ্ধকরন ট্যাবলেট প্রস্তুত করা ও প্রয়োজন অনুযায়ী সরবরাহ করা হয়েছে। জেলায় ৭৮ টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে।

 

ত্রান ও উদ্ধার কাজে সহায়তা করার জন্য স্থানীয় পর্যায়ে নৌযানের ও মাঝির ব্যবস্থা করা এবং তাদের যোগাযোগের নম্বর প্রচার করা হয়েছে। ত্রান ও উদ্ধার কাজে সহায়তা করার জন্য স্থানীয় পর্যায়ে স্পিড বোটের ব্যাবস্থা করা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে কারোও করোনা উপসর্গ থাকলে তাকে আলাদা স্থানে রাখার ব্যাবস্থা করা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে সাবান, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মাস্ক সরবরাহ করা হয়েছে।

 

চিকিৎসা ব্যাবস্থা নিশ্চিত করার জন্য মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। জেলা দুর্যোগ ব্যাবস্থাপনা কমিটির মিটিং করে প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

Spread the love

আর্কাইভ

January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031