সাংবাদিক নান্নুর স্ত্রী-শাশুড়ির বিরুদ্ধে হত্যা মামলা

প্রকাশিত: ১:০৪ অপরাহ্ণ, জুন ৩০, ২০২০

সাংবাদিক নান্নুর স্ত্রী-শাশুড়ির বিরুদ্ধে হত্যা মামলা

লন্ডন বাংলা ডেস্কঃঃ

 সাংবাদিক মোয়াজ্জেম হোসেন নান্নুর মৃত্যুতে তার স্ত্রী ও শাশুড়ির বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। একই বাসায় ছয় মাস আগে একইভাবে অগ্নিদগ্ধ হয়ে নান্নুর একমাত্র ছেলে পিয়াসেরও মৃত্যু হয়েছিল।নিহত সাংবাদিক নান্নুর বড় ভাই মো. নজরুল ইসলাম খোকন বাদী হয়ে আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর বাড্ডা থানায় এই হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় নান্নুর স্ত্রী শাহিনা হোসেন পল্লবী (৪৫) এবং শাশুড়ি মোসাম্মদ শান্তা পারভেজকে আসামি করা হয়েছে।

 

বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. পারভেজ ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘সাংবাদিক নান্নুর মৃত্যুর পর তার স্ত্রী একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেছিলেন। আজ সাংবাদিক নান্নুর আগুনের পুড়ে যাওয়া ও মৃত্যুকে হত্যা বলে দাবি করে তার বড় ভাই নজরুল ইসলাম খোকন আরেকটি মামলাটি দায়ের করেছেন।’সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সাংবাদিক নান্নুর মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে গুলশান বিভাগ পুলিশের তদন্ত কমিটি কাজ করছে। এ ছাড়া ফায়ার সার্ভিস, সিআইডি ও তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ আলাদা তদন্ত করছে।

 

মামলার এজাহারে নজরুল ইসলাম খোকন উল্লেখ করেছেন, ‘আমার ছোট ভাই মোয়াজ্জেম হোসেন নান্নু তার স্ত্রী শাহিনা হোসেন পল্লবীর সাথে আফতাব নগরের জহিরুল ইসলাম সিটির ৩ নম্বর সড়কের বি ব্লকের ৪৪/৪৬ নম্বর বাসার দশম তলায় বসবাস করতো। গত ১১ জুন রাত সাড়ে ৩টার সময় আমার ছোটভাই মোয়াজ্জেম হোসেন নান্নু রহস্যজনকভাবে অগ্নিদগ্ধ হয়। গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় তাকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরের দিন সকাল ৮ টায় নান্নু মারা যায়।’

 

এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, ‘ঘটনার সময় আমি নড়াইলের কলোরায় নিজ গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছিলাম। পরে আমি আমার মেজো ভগ্নিপতি আনসার হোসেনের কাছ থেকে নান্নুর অগ্নিদগ্ধের খবর পাই। এ-ও জানতে পারি নান্নুর অগ্নিদগ্ধ হওয়ার ঘটনাটি রহস্যজনক। ঘটনার সময় স্ত্রী ছাড়াও নান্নুর শাশুড়ি শান্তা পারভেজও ওই বাসায় অবস্থান করছিলেন। আমরা আরও জানতে পারি নান্নু গত ১১ জুন রাত ১টার দিকে বাসায় ফেরে। বাসায় ফেরার পর স্ত্রী পল্লবীর সাথে তার ঝগড়া হয় এবং এর কিছুক্ষণ পরেই বাসায় আগুন লাগে। নান্নু দগ্ধ হয়।

 

নিজে পাইপ এনে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। তার স্ত্রী ও শাশুড়ি আগুন নেভানোর চেষ্টা করে নাই এবং নান্নু নিজেই ১০ তলা থেকে হেঁটে নিচে নামে। সেখানে আশপাশের ফ্ল্যাট মালিকরা নান্নুকে হাসপাতালে নেয়। হাসপাতালে নেওয়ার একদিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় নান্নু মৃত্যুবরণ করে। আমার মেজো ভাই ইকবাল হোসেন বাবলু ও ভাগ্নে সাজ্জাদ হোসেন টিপু একটি ভাড়া গাড়িতে ঢাকায় আসে, তারা হাসপাতালে যেতে চাইলে পল্লবী ও তার অফিসের জনৈক সিইও তাদেরকে হাসপাতালে যেতে নিষেধ করেন, পরে তারা হাসপাতালে না গিয়ে বাসায় যান।’

 

মামলার অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, ‘নান্নু মারা যাওয়ার পর আমাদেরকে না জানিয়ে তার স্ত্রী ও সেখানে উপস্থিত পল্লবী যে প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতো সেই প্রতিষ্ঠান সিইও পরিচয় দেওয়া এক ব্যক্তি তার ব্যবহৃত একটি কালো রংয়ের পাজেরো গাড়িতে করে স্ত্রী পল্লবীর গ্রামের বাড়িতে যায়। ওই সিইও’র সহযোগিতায় বিনা ময়নাতদন্তে নান্নুর লাশ পল্লবী তার বাড়ি যশোর জেলার বাঘারপাড়া থানার ভাঙ্গুরা গ্রামে দাফন করেন। আমার মেজো ভাই ইকবাল হোসেন বাবলুসহ আত্মীয়-স্বজনরা লাশ দেখতে চাইলে তাদেরকে দেখতে দেওয়া হয়নি। আমি লোক মারফত আরও জানতে পারি, নান্নু হাসপাতালে থাকার সময় তার স্ত্রী পল্লবী মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে ভোর ৪টার সময় স্যুপ খাওয়ায় নান্নুকে। আর সেই স্যুপ পল্লবীর অফিসের জনৈক সিইও সাহেবের বাসা থেকে রান্না করে আনা বলে জানতে পেরেছি।’

 

প্রসঙ্গত, আফতাবনগরের একটি বাসায় স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করতেন সাংবাদিক নান্নু। গত ১২ জুন ভোর পৌনে ৪টার দিকে সেখানে রহস্যজনক আগুনে তিনি গুরুতর দগ্ধ হন। পরে সাংবাদিক নান্নুকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। ১৩ জুন সকাল ৮টা ২০ মিনিটে শেখ সেখানকার নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) তার মৃত্যু হয়।

Spread the love

আর্কাইভ

January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031