করোনায় বিপর্যয়ের মুখে সিলেটের পর্যটন কেন্দ্র

প্রকাশিত: ১:৩২ অপরাহ্ণ, জুলাই ৮, ২০২০

করোনায় বিপর্যয়ের মুখে সিলেটের পর্যটন কেন্দ্র

রাসেল আহমদঃঃ

করোনা পরিস্থিতির কারণে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে দেশের অন্যতম পর্যটন এলাকা সিলেট বিভাগের শ্রীমঙ্গলসহ প্রায় দেড় শতাধিক পর্যটন কেন্দ্র। দীর্ঘ প্রায় চার মাস থেকেে এসব পর্যটন কেন্দ্রে করোনার ভয়ে পর্যটক না আসায় পর্যটননির্ভর ক্ষুদ্র ও বৃহৎ ব্যবসায়ীরা পড়েছেন বিপাকে। প্রতিদিন বড় অঙ্কের টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে রিসোর্ট ও হোটেল মালিকসহ পর্যটন কেন্দ্রগুলোর তত্বাবধাকদের । এতে করে স্টাফদের বেতনসহ প্রতিষ্ঠান গুলো পরিচালনা করতে হিমশিম খাচ্ছেন সংশ্লিরা।আবার কবে চালু হবে ও প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসবে এসব পর্যটনকেন্দ্রে, কেউ নির্দিষ্ট করে তা বলতে পারছেন না এবং অনিশ্চিত ভবিষ্যতের প্রহর গুনছেন তারা।

 

দেশের অন্যতম পর্যটন নগরী প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলে পর্যটনকেন্দ্রগুলো পর্যটকশূন্য হয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে।উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, চা গবেষণা কেন্দ্র (বিটিআরআই), দৃষ্টিনন্দন চা বাগান, বাইক্কা বিল, বধ্যভূমি-৭১, নিলকণ্ঠ সাত রঙের চা কেবিন, মনিপুরিপাড়া, হিল ভিউ রেস্ট হাউস, এসকেডি আমার বাড়ি, বালশিরা রিসোর্ট, শান্তি বাড়ি, টি হ্যাভেন, নভেম ইকো রিসোর্ট, টি রিসোর্ট অ্যান্ড মিউজিয়াম, মহসিন প্লাজা, লেমন গার্ডেন, গ্রান্ড সুলতান টি রিসোর্ট অ্যান্ড গলফসহ সব পর্যটন কেন্দ্রগুলো ।

 

একই চিত্র ‍সিলেট জেলার জাফলং, বিছনাকান্দি, সাদাপাথর, রাতারগুল, ডীমল্যন্ড, ওসমানী শিশুপার্ক ও সুনামগন্জ জেলার শিমুল বাগান, টাঙঙ্গুয়ার হাওর, বারেকটিলা, নিলাদ্রিলেক হবিগন্জ জেলার সাতছড়ি উদ্যান, হোটেল রিজার্ভেশন সহ অন্যান্য পর্যটন গুলোর। ফলে বড় ধরনের ‍আর্থিক ক্ষতির ‍সম্মুখিন হতে হচ্ছে সিলেট বিভাগের পর্যটন শিল্পগুলো। ফলে বিপাকে পড়েছেন পর্যটন খাতে বিনিয়োগকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্টানসহ কর্মকর্তা কর্মচারীরা।

 

বছরের এই সময়ে প্রতিদিন প্রায় ৪০-৫০ হাজার দেশ-বিদেশ থেকে পর্যটক বেড়াতে আসেন এ বিভাগে । এ বিভাগে প্রতিদিন এ সময় কয়েক হাজার প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত থাকত। কিন্তু এখন অলস সময় কাটাচ্ছেন নিরাপত্তাকর্মীরা। চারদিকে পিনপতন নীরবতা বিরাজ করছে। ফলে সরকারও কয়েক কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।অন্যদিকে পর্যটননির্ভর জীবিকা নির্বাহকারী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এ শিল্পের ওপর গড়ে ওঠা রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ও নেমেছে ধস। ফলে পর্যটনসহ এসব খাতে জড়িত সবাই সরকারি প্রণোদনা, ব্যাংক ঋণের সুদ ও পল্লী বিদ্যুতের মিটারের ডিমান্ড চার্জ মওকুফের দাবি জানিয়েছেন।

 

পর্যটনশিল্পসংশিষ্ট শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ ট্যুর গাইড কমিউনিটির সাধারণ সম্পাদক তাপস দাস জানান, তাদের সংগঠনে ৩২ পর্যটকের গাইড হিসাবে কাজ করতেন। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে অসহায় অবস্থায় আছেন, কোনো পর্যটক না থাকায় এ ব্যবসায় একেবারে ধস নেমে গেছে।এদিকে চারশতাধিক স্টাফ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন পাঁচতারকা মানের হোটেল গ্রান্ড সুলতানের কর্মকর্তারা।এ ব্যাপারে গ্রান্ড সুলতান টি রিসোর্ট অ্যান্ড গলফের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক আরমান খান জানান, তাদের রিসোর্ট প্রায় চার মাস থেকে বন্ধ রয়েছে। যে কারণে আগামী দিনগুলোতে তারা কিভাবে টিকে থাকবেন তা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে আছেন।

 

শ্রীমঙ্গল লেমন গার্ডেন রিসোর্ট অ্যান্ড স্পার চেয়ারম্যান সেলিম মিয়া জানান, করোনা পরিস্থিতিতে কর্মচারীরে বেতনসহ প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। পর্যটনশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে তিনি এ খাতের সবাইকে সরকারি প্রণোদনা প্রদান, ব্যাংক ঋণের সুদ ও পল্লী বিদ্যুতের মিটারের ডিমান্ড চার্জ মওকুফের দাবি জানান।এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম, গত ২৮ জুন পর্যটন কর্পোরেশন এবং বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে ভার্চুয়াল মিটিং হয়েছে।এ ক্ষেত্রে শ্রীমঙ্গলের পর্যটনসংশিষ্টরা যাতে প্রণোদনা পান আমরা চেষ্টা করছি। প্রণোদনা প্রদানে সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যটনকেন্দ্রগুলো চালু করতে সরকারি নির্দেশনা আসবে বলে তিনি জানান।

Spread the love

আর্কাইভ

January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031