সিলেট ৮ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৫:১৬ অপরাহ্ণ, জুলাই ৩১, ২০২০
লন্ডন বাংলা ডেস্ক::
পবিত্র ঈদুল আজহার বাকি আর মাত্র একদিন; কিন্তু রাজধানীর পশুর হাটগুলো এখনো জমে ওঠেনি। হাটভর্তি গরু থাকলেও ক্রেতা নেই। অলস সময় পার করছেন হাটের দায়িত্বে থাকা ইজারাদারদের সহকারীরাও। কিছু গরু বিক্রি হলেও বিক্রেতাদের অভিযোগÑ তারা পর্যাপ্ত দাম পাচ্ছেন না। অনেক ক্ষেত্রে লাভ নয়, চালান উঠাতে পারলেই তারা গরু বিক্রি করে দেবেন। তবে তারা আশা প্রকাশ করছেন, শেষ দিনে হয়তো ক্রেতার সমাগম ঘটবে। বাজার চাঙ্গা হতে পারে। তার পরও বিক্রেতাদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। তারা আসল নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারবেন কিনাÑ এ শঙ্কায় আছেন।
হাটে গরু বিক্রি কম হওয়ায় এবার ইজারাদাররাও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন। গরু বিক্রি থেকে পাওয়া অর্থের একাংশ থেকে তাদের আয় আসে; কিন্তু ঢাকার দুই সিটির একাধিক কাউন্সিলর আমাদের সময়কে বলেছেনÑ এবার ঢাকায় কোরবানি অনেক কম হবে। ফলে হাটে গরু থাকলেও ক্রেতা কম।
রাজধানীর উত্তর শাজাহানপুরের মৈত্রী সংঘের খেলার মাঠ ও আশপাশের জায়গায় হাট বসিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। হাটটিতে পর্যাপ্ত গরু থাকলেও বিক্রি নেই। কিছু গরু বিক্রি হলেও তাতে পর্যাপ্ত দাম নেই বলে জানান বিক্রেতারা।
ঝিনাইদহ থেকে ১৮টি গরু নিয়ে শাজাহানপুর হাটে এসেছেন কুদ্দুস মিয়া। গত তিনদিনে মাত্র তিনটি গরু বিক্রি করতে পেরেছেন। তার ভাষ্যÑ কেনাসহ সব খরচ হিসাব করলে তিনটি গরুতেই লস হয়েছে। তিনি বলেন, একটি গরু কিনেছি ৬১ হাজার টাকায়। এর পর গরুপ্রতি দুই হাজার টাকা ট্রাকভাড়া দিয়ে ঢাকায় আনা হয়েছে। তিনদিন ধরে গরুর সঙ্গে আছি। গরুর জন্য খড়, ভুষিসহ নানা খাবার। সব মিলিয়ে একেকটি গরুর পিছনে আরো ৪/৫ হাজার টাকা খরচ রয়েছে। কিন্তু গরুটি বিক্রি করেছি ৬৫ হাজার টাকায়। তবুও চাচ্ছি চালান উঠে আসুক। লস হলে জীবনে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবনা।
গতকাল রাজধানীর অন্তত তিনটি গরুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, হাটগুলোতে অন্যবারের মতো ভিড় নেই। নেই বিক্রিও। ছোট ও মাঝারি মানের কিছু গরু বিক্রি হলেও বড় সাইজের গরু একদমই বিক্রি হচ্ছে না। শাজাহানপুর হাটের ব্যবস্থাপনায় জড়িত আকমল হোসেন বলেন, এখন পর্যন্ত বিক্রি হওয়া সব গরুই এক লাখ টাকার মধ্যে। বড়গুলো বিক্রি হচ্ছে না। ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদাই বেশি।
এদিকে কমলাপুর স্টেডিয়ামসংলগ্ন পশুর হাটটির ইজারামূল্যই প্রায় সোয়া দুই কোটি টাকা। কিন্তু এবার হাটটি জমে ওঠেনি। পর্যাপ্ত গরুও আসেনি এই হাটে। হাটের জন্যে তৈরিকৃত বেশিরভাগ জায়গাই খালি পড়ে রয়েছে। হাটটিতে গতকাল দুপুর তিনটা পর্যন্ত মাত্র ৭৯টি গরু বিক্রি করা হয়েছে। এর আগের দুইদিনের অবস্থাও একই। তেমন বিক্রি নেই।
ফরিদপুরের মঙ্গু মিয়া তিনটি বড় আকারের গরু নিয়ে এসেছেন এই হাটে। দুইদিন আগে এলেও তার একটা গরুও বিক্রি হয়নি।মঙ্গু মিয়া বলেন, আমি গরু তিনটিকে লালন-পালন করে বড় করেছি। এলাকায় বড় গরুর চাহিদা নেই। তাই ঢাকায় নিয়ে এসেছি। কিন্তু এখানেও একই অবস্থা। একেকটি গরুর দাম অন্তত ৪/৫ লাখ টাকা হলেও ক্রেতারা আড়াই লাখ টাকার বেশি দাম বলছেন না। বুঝতে পারছি না, কী করব? এভাবে চললে আর কখনো গরু লালন-পালন করব না।
মেরাদিয়া পশুর হাট ঘুরেও দেখা গেছে একই চিত্র। বিশাল এলাকাজুড়ে গরুর হাট বসানো হলেও পর্যাপ্ত বিক্রেতা নেই। দলবদ্ধভাবে গরু ব্যবসায়ীরা দুশ্চিন্তা আর ভবিষ্যতের ভাবনা ভাগাভাগি করছেন। হাটটিতে বেশিরভাগ গরু ব্যবসায়ীই ময়মনসিংহ, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ অঞ্চলের।এরমধ্যে একজন সোবহান মাতবর। তিনি বলেন, তারা দুইজনে ১০টি গরু এনেছেন। এরমধ্যে তিনটি বড় বাকি সাতটি ছোট গরু। ছোট দুইটি গরু কেবল বিক্রি হয়েছে। তাতে লাভ হয়নি। চালান উঠেছে কেবল। তবু চাই বাকি গরুগুলো বিক্রি হোক।
পাশে থাকা অপর ব্যবসায়ী আমির ফরাজি বলেন, হাটের অবস্থা শুক্রবার ভালো হবে। সবাই অপেক্ষায় রয়েছেন শেষ দিন কিনবেন। ঢাকায় গরু কিনে রাখার জায়গা নেই। করোনার কারনে অনেকেই বাসায় অযথা জায়গা নষ্ট করতে চাচ্ছেন না।
এদিকে গতকাল ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম পূর্বাচল ব্রিজ সংলগ্ন মস্তুল ডুমনী বাজারমুখী রাস্তার উভয় পাশের খালি জায়গায় স্থাপিত অস্থায়ী কোরবানি পশুর হাট পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে তিনি পশুর হাট ঘুরে দেখেন এবং গবাদি পশু ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সাথে মতবিনিময় করেন। তিনি সবাইকে করোনা থেকে সুরক্ষিত থাকার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেন।