টাকা ধার না দেওয়ায় প্রবাসী রহিমাকে খুন

প্রকাশিত: ৮:৪৩ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১, ২০২০

টাকা ধার না দেওয়ায় প্রবাসী রহিমাকে খুন

রাসেল আহমদ, ওসমানীনগর::
ঈদ উপলক্ষে প্রবাসী মহিলার কাছে টাকা ধার চেয়ে না পেয়ে মহিলাকে গলাকেটে হত্যা করে লাশ বাথরুমে রেখে পালিয়ে যায় হত্যাকারী। ঈদের আগের দিন সিলেটের ওসমানীনগরে গলাকাটা অবস্থায় খুন হওয়া রহিমা বেগমের লাশ উদ্ধারের ২৪ ঘন্টার মধ্যে হত্যাকন্ডের রহশ্য উদঘাটন করেছে পুলিশ।

 

শুক্রবার রাতে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতারের পর পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য জানায় হত্যাকারী আব্দুল জলিল কালু(৩৯)। গ্রেফতারকৃত কালু ২০০৭ সালে গোয়ালাবাজারে একই ভাবে সংঘটিত হওয়া একটি হত্যা মামলারও আসামী।

 

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার উমরপুর ইউনিয়নের কটালপুর গ্রামের মৃত আখলু মিয়ার স্ত্রী যুক্তরাজ্য প্রবাসী রহিমা বেগম ওরোপে আমিনা (৬০) তার ৪ সন্তানসহ যুক্তরাজ্যে থাকতেন। গত ২ বছর ধরে গোয়ালাবাজারের করনসী রোডে নিজস্ব বাসায় তিনি বসবাস করছেন। পার্শবর্তী হেলাল ভিলায় ভাড়া থাকতো নগরীকাপন গ্রামের আব্দুল কাছিম এর পুত্র হত্যাকারী আব্দুল জলিল ওরোপে কালু।

 

পাশাপাশি বাসা থাকায় পরিচিতর সুবাদে কালু গত মঙ্গলবার (২৮ জুলাই) প্রবাসী রহিমা বেগমের কাছে ঈদ উপলক্ষে ৫ হাজার টাকা ধার চায়। রহিমা বেগম টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন এবং কালুকে তাড়িয়ে দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয় কালু। ক্ষিপ্ত হয়ে রহিমা বেগম কে খুন করার পরিকল্পনা করে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী সে মঙ্গলবার রহিমার ঘরে লুকিয়ে থাকে। কিছু সময় পর সে পিছন থেকে রহিমার মাথায় বাঁশের লাঠি দিয়ে আঘাত করে। এতে রহিমা বেগম মাঠিতে পরে যান এবং নড়াচরা করায় ঘরে থাকা বটি দা দিয়ে তার গলা কেটে দেয় কালু। পরবর্তীতে সে ঘরে তালা দিয়ে পালিয়ে যায়। রহিমা বেগমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি মঙ্গলবার (২৮ জুলাই) বিকেল থেকে বন্ধ থাকায় দেশে তার আত্মীয়রা বৃহস্পতিবার রাতে রহিমা বেগমের বাসায় আসেন। এবং বাসাটি তালবদ্ধ দেখতে পান।

 

পরে গভীর রাতে থানা পুলিশের উপস্থিতিতে গেইট ও দরজার তালা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করে বাথরুমের মেঝে রহিমা বেগমের গলা কাটা রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। এ সময় রহিমা বেগমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। শুক্রবার সকাল ১০টায় সিলেটের পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন পিপিএম ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ওসমানীনগর(সার্কেল) রফিকুল ইসলাম,ওসি শ্যামল বনিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এছাড়া পুলিশ ইনভেস্টিগেশন অব ব্যুরো (পিবিআই)ওসি সিআইডির দুটি টিম ঘটনাস্থলে এসে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করে। থানা পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ওসমানী হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে।

 

এদিকে, শুক্রবার রাতে এ ঘটনায় একটি হত্যা মালমা দায়ের করেন নিহত রহিমার ছোট ভাই উপজেলার ধিরারাই গ্রামের আব্দুল কাদির। মামলা নং-০১। মামলা দায়ের এবং লাশ উদ্ধারের পর হত্যাকান্ডে জড়িতদের গ্রেফতারে তৎপর হয়ে উঠে পুলিশ। এক পর্যায়ে শুক্রবার দিনগত রাত সোয়া ৩টার দিকে গোয়ালাবাজারস্থ হেলাল ভিলা (করনসী রোড) থেকে আব্দুল জলিল কালুকে গ্রেফতার করা হয়।

 

গ্রেফতারের পর দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে কালু তাকে ৫ হাজার টাকা ধার না দেওয়ায় রহিমা বেগমকে গলা কেটে হত্যার কথা স্বীকার করে। শনিবার (১ আগস্ট) পুলিশ তাকে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে রহিমা বেগমের মোবাইল ফোন ও ২৮ জুলাই বিকেল ৫ টার দিকে সংঘটিত এ হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত বটি দা নিহতের বাড়ি থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।

 

ওসমানীনগর থানার এস আই সুজিত চক্রবর্তী বলেন, লাশ উদ্ধারের পর থেকে পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে হত্যাকারী কালুকে শনাক্ত করে গ্রেফতার করে এবং প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য যে দুইজনকে থানায় আনা হয়েছে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

 

ওসমানীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ শ্যামল বনিক বলেন, আসামী আব্দুল জলিল কালুকে গ্রেফতারের পর তার স্বীকারোক্তি মতে টাকা ধার না দেওয়ার প্রতিশোধ হিসেবে সে একাই প্রবাসী মহিলাকে গলা কেটে হত্যা করেছে বলে পুলিশকে জাননিয়েছে। ইতোমধ্যে খুনের আলামত জব্দ করা হয়েছে।

Spread the love

আর্কাইভ

March 2025
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31