নবীগঞ্জে কামার শিল্পে চলছে নানা দুর্ভোগ!

প্রকাশিত: ১০:১৬ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৬, ২০২০

নবীগঞ্জে কামার শিল্পে চলছে নানা দুর্ভোগ!
৭৩ Views
বুলবুল আহমদ/নবীগঞ্জঃঃ
সারাদেশের তুলনায় হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে আগের মতো আর কামার পাড়াগুলোতে টুংটাং শব্দ করেনা! চাষাবাদ কমে যাওয়ায় এখন আর কেউ কাঁচি বানায় না। এমনকি কয়লা সংকট, কর্মচারি সংকট, ক্রেতার অভাব সহ নানা সমস্যায় ধুঁকে ধুঁকে চলছে কোন রকম চলছে তারা। এখন চাষীরা নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন বিদেশী প্রযুক্তির উপর। দেশীয় পদ্ধতিতে তৈরি কামার শিল্পের চাহিদাও দিন দিন কমছে। দেশের ঐতিহ্য বহন করা এই কামার শিল্প রক্ষায় কামার পাড়া টিকিয়ে রাখতে সরকারি সহযোগিতা কামনা করছেন তারা।
সরজমিনে গিয়ে তাদের সাথে কথা বলে জানাযায়, নবীগঞ্জের কামার’রা কেউ কেউ কাজ করছেন আবার কেউবা রয়েছে বসে। কাজের অভাবে অলসতা সহ নানা সমস্যায় দিন কাটচ্ছেন তারা। বর্তমানে মানুষ চাষাবাদ কমিয়ে ঘেরের প্রতি বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। ফলে চাষাবাদের জন্য আর তৈরি হচ্ছে না লাঙ্গল কংবা জুয়াল। অপদিকে ন্যায্য মূল্য কাজ না পাওয়ায় এই শিল্প ছেড়ে চলে অনেকেই বেচে নিয়েছেন দিনমকুদের কাজে। ফলে এই শিল্প বিকশিত হতে পারছে না। লোহা সব সময় পাওয়া যায়। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে না ভালো মানের কয়লা।
কামার শিল্পের প্রধান হছে কাঁচামাল কয়লা। এই কয়লা ছাড়া কামার শিল্প চিন্তাই করা যায় না। আগে গরাণ, সুন্দরী, বাবলা, বাইন কাঠের কয়লা পাওয়া যেত। এখন সেগুলো আর পাওয়া যায় না। মেহগনি, আম, সিরিজ কাঠের কয়লা। এই কয়লা পরিমাণে লাগে বেশি। কয়লা ভালো না হলে লোহা তাড়াতাড়ি গরম হয় না। ফলে একটা জিনিস তৈরি করতে সময়ও লাগে অনেক। তাই এই কামার পাড়ায় কর্মহীন হয়ে পড়া লোকজন হতাশা নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন।
নবীগঞ্জের কর্মকার সুকুমার রায় বলেন, “কামার শিল্পের বর্তমান অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। প্রায় ৩০ বছর ধরে এই পেশায় নিয়োজিত আছি। এটা আমাদের বাপ- দাদার পেশা। লাভ না হলেও আমরা তা ধরে রেখেছি। ছোট বেলা থেকে আমি বাবার সাথে কাজ করতাম। এমন কোন দিন ছিল না যে, বাবা  ৪/৫টি লাঙ্গল আর ১০/১২টি কাঁচি বিক্রয় হতো।
একটি নিন্মবিত্ত পরিবার থেকে রাষ্ট্রের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ পর্যন্ত সবার ঘরে ঘরে রয়েছে এই কামার শিল্পের যন্ত্রপাতি। এই কাজে কমপক্ষে দুইজন লোক লাগে। কিন্তু বর্তমানে এই পেশায় কেউ আসে না। আগে চাষাবাদ হতো। তাই লাঙ্গলের ব্যবহার ছিল। লাঙ্গল তৈরির কাজও করতাম। আগে আউশ চাষে নিংড়ানি, পাশনি, আচড়া ব্যবহার হতো। কিন্তু এখন এসব চাষ কমে যাওয়ায় লাঙ্গলসহ এসব যন্ত্রপাতির ব্যবহার দিনদিন কমে। আসছে। মানুষ এখন বিদেশী প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে।
তিনি আরও বলেন, “আগে গরুর গাড়ি তৈরি হত । কিন্তু এখন আর লাগে না। তাই গরুর গাড়িও তৈরি হয় না। আগে জমিতে আমন বা বোরো ধান হতো। তখন কাস্তে, কোদাল, কাঁচির ব্যবাহার হতো বেশি। কিন্তু এখন আর আমন ধান চাষ হয় না। তাই এসব যন্ত্রপাতিও এখন আর তৈরি হয় না। এখন বেশি তৈরি করি বটি, কোদাল, দা, খোন্তা, কর্ণিক, বাইশ, ছেনি, ছোট কুড়াল, ডাইস ও কাস্তে। কিন্তু আগের মতো এখন এ শিল্পে তেমন লাভও নেই।
এ ব্যাপারে কর্মকার চান্দ্র দেব এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, কামারের কাজ করে এখন সংসার চালানো বড় কঠিন। বাচ্চাদের পড়াশুনার খরচ চালাতে খুব কষ্ট হয়। এখন কৃষি যন্ত্রপাতি থেকে রাজমিস্ত্রির সরঞ্জাম তৈরি করা হয় বেশি। তবে, কয়লা সমস্যার কারণে এখন ঠিকমতো কাজ করতে পারছিনা। এখন কয়লাগুলো শহরের বিভিন্ন হোটেল থেকে প্রতি বস্তা ৫’শ টাকায় কিনি। আগে এক বস্তা কয়লায় দুই দিন চলতো কিন্তু এখন যায় এক মাস। কাজের অবস্থা খুবই খারাপ। প্রতিদিন প্রায় একশটির মতো কাস্তে তৈরি করতাম কিন্তু এখন ১০টিতে এসে দাঁড়িয়েছে। ভারত থেকে কোদাল ও রাজমিস্ত্রির উন্নত যন্ত্রপাতি আসছে আমাদের এখানে। তাই দেশীয় জিনিসের কদর কমেছে।
নবীগঞ্জের কামার শিল্প চলছে ধুঁকে ধুঁকে। চাষাবাদ কমে যাওয়ার কারণে কামারদের তেমন কাজ নেই। কয়লা সমস্যাও প্রকট আকার ধারণ করেছে। দেশের ঐতিহ্য বহনকারী এই কামার শিল্প সরকারি ভর্তুকীর মাধ্যমে টিকিয়ে রাখা সম্ভব বলে মনে করছেন বিজ্ঞজনরা।
Spread the love

Follow us

আর্কাইভ

December 2023
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031