সিলেট ১১ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ২:৪৭ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৬, ২০২০
লন্ডন বাংলা ডেস্কঃঃ
সিলেট-ঢাকা মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করা নিয়ে বিদ্যমান জটিলতার অবসান হয়েছে। প্রকল্প নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা অনিশ্চয়তাও কেটে গেছে। এখন এই প্রকল্পের পূর্ণাঙ্গ নকশা তৈরির কাজ প্রায় শেষ। প্রকল্পের খসড়া ডিপিপিও চূড়ান্ত। ডিপিপি ও নকশা নিয়ে এডিবির সবুজ সংকেত পেলে অনুমোদনের জন্য শিগগিরই ওঠানো হবে একনেকে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিপি)। অর্থায়ন থাকবে সরকারেরও।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে জটিলতা চলছিল। সেই সংকট কাটিয়ে এখন এই প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হচ্ছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ ইতিমধ্যে প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের জন্য সাতটি জোনের মধ্যে পাঁচটির প্রস্তাবনা তৈরি করেছে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কটি সাতটি জেলার ওপর দিয়ে নির্মাণ করা হবে। এ কারণে প্রতিটি জেলাকে একটি জোন ধরে সাতটি প্রস্তাবনা তৈরি করা হচ্ছে। তৈরি হওয়া পাঁচটি প্রস্তাব একনেকের অনুমোদনের জন্য শিগগিরই পাঠানো হবে। অনুমোদন পেলে খুব দ্রুত জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু করবে সড়ক বিভাগ। জমি অধিগ্রহণের পুরোটাই সরকার অর্থায়ন করবে।
সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করার কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল জানুয়ারি মাসে। সে লক্ষ্যে এ বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)-এর মধ্যে আলোচনা শুরু হয় বছরের শুরুতে।সূত্র জানায়, ঢাকা-সিলেট চার লেন নির্মাণ প্রকল্পের পূর্ণাঙ্গ নকশা তৈরির কাজ প্রায় শেষ। সড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব চন্দন কুমার দে বলেন, ‘নকশা আপডেট হচ্ছে। একই সঙ্গে এই প্রকল্পের ডিপিপি তৈরির কাজও চলছে। সড়ক ও জনপথ অধিদফতর ডিপিপি তৈরির কাজ করছে। আশা করছি শিগগিরই ডিপিপি তৈরি হয়ে যাবে। তারপর সেটি অনুমোদনের জন্য একনেকে পাঠানো হবে।’
সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের (সওজ) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সাব্বির হাসান জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে প্রকল্পের ডিপিপি ও নকশা আপডেটের কাজ শেষ করে এডিবির কাছে পাঠানো হয়েছে। তারা খসড়া ডিপিপি দেখছে। তাদের চূড়ান্ত মতামত পাওয়ার পরই ডিপিপি অনুমোদনের জন্য একনেকে পাঠানো হবে। আশা করা হচ্ছে, ১৫ অক্টোবরের মধ্যেই এই ডিপিপি একনেকে উত্থাপন করা হবে।
তিনি জানান, আশা করা হচ্ছে আগামী ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে সরকার ও এডিবির মধ্যে এই প্রকল্পের ঋণচুক্তি সম্পন্ন হবে। সওজ সূত্র জানায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ২১০ কিলোমিটার চার লেনে উন্নীত করা হবে। থাকবে মহাসড়কের দুই পাশে দুটি সার্ভিস লেন। নির্মাণ হবে ছয়টি রেল ওভারপাস। এ ছাড়া বেশ কিছু আন্ডারপাস থাকবে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে। মহাসড়কের দুই পাশে দেওয়া হবে ব্যারিয়ার, যাতে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে গবাদিপশু সড়কে উঠতে না পারে।
একই সঙ্গে নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া সার্ভিস লেনের কোনো যানবাহন যেন মূল সড়কে উঠতে না পারে। ইউটার্ন থাকবে নির্দিষ্ট দূরত্বে। বিশেষ করে বাজার এবং আরবান বা রুরাল এলাকায় যেখানে জনবসতি আছে সেসব স্থান চিহ্নিত করে নির্মাণ করা হবে ইউটার্ন।
সওজ সূত্র জানায়, এই প্রথমবারের মতো দেশের কোনো মহাসড়ক নির্মাণে ব্যবহার করা হবে পলিমার মোটিফাইড বিটুমিন। ফলে সড়ক হবে টেকসই ও দীর্ঘস্থায়ী। দুই মাসের মধ্যে এ প্রকল্পের দরপত্র আহ্বান করা হবে। মোট ১৩টি প্যাকেজে সম্পন্ন করা হবে প্রকল্পের পূর্তকাজ। আগামী বছরই এ প্রকল্পের মূল কাজ দৃশ্যমান হবে। ২০১৩-১৪ সালের দিকে এডিবি প্রথম সমীক্ষা করে। এরপর এ মহাসড়কের কাজ কারা করবে, এ নিয়ে নানা জটিলতা তৈরি হলে এডিবি আর বেশি দূর এগোতে পারেনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করতে শুরুতে এডিবির সঙ্গেই কথা হচ্ছিল সরকারের। কিন্তু মধ্যে চীনের অর্থায়নে জিটুজি ভিত্তিতে এ মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করার জন্য ২০১৭ সালের অক্টোবরে চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছিল সরকার। কথা ছিল ২০১৮ সালের প্রথম দিকেই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। কিন্তু চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং এ প্রকল্পের জন্য যে ব্যয় প্রস্তাব করেছিল, তা সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতরের প্রাক্কলনের চেয়ে প্রায় ৪২ শতাংশ বেশি। তাই তাদের প্রস্তাবটি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় গ্রহণ করেনি। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে রশি টানাটানি শুরু হলে প্রকল্পটি ঝুলে যায়। একপর্যায়ে সরকার নিজস্ব অর্থায়নে এ প্রকল্পের কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়। এ জন্য ডিপিপি তৈরিও করা হয়। সেটি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হলেও সেখান থেকে ফেরত পাঠানো হয় আরও কিছু সংশোধনী চেয়ে। সড়ক বিভাগ তা সুবিন্যস্ত করে ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায়।
কিন্তু প্রস্তাবটি পরিকল্পনা কমিশনে যাওয়ার পর তৎকালীন পরিকল্পনামন্ত্রী প্রকল্পটি অনেক ব্যয়বহুল উল্লেখ করে এর জন্য বাইরের কোনো অর্থায়ন পাওয়া যায় কি না দেখতে নির্দেশ দেন। এর পরপরই প্রকল্পটি পুরোপুরি ঝুলে যায়। অথচ কথা ছিল সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগেই প্রকল্পটির কাজ শুরু হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে সরকার। এরপর এ প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়ে আবারও আগ্রহ দেখায় এডিবি।
সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পে এখন আর কোনো সংকট নেই। যত দ্রুত প্রকল্পের ডিপিপি অনুমোদন হবে তত দ্রুত কাজ শুরু হবে।