সিলেট ১০ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৩:৩৫ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২২, ২০২০
নিজম্ব প্রতিবেদক / মৌলভীবাজারঃ
মৌলভীবাজারের পূর্ব ও উত্তরাঞ্চলের তিনটি উপজেলাকে নিয়ে দেশের ৬৫তম পর্যটন জেলা ঘোষণার দাবি জোরালো হচ্ছে। কুলাউড়া নামকরণ করে পর্যটন জেলা ঘোষনার দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার রেশ ধরেই কুলাউড়ার সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেছেন পর্যটন জেলা বাস্তবায়নের উদ্যোক্তা হাজিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাংবাদিক আব্দুল বাছিত বাচ্চু।
মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারী) দিনগত রাত ৮ টায় শহরের একটি রেস্টুরেন্টে প্রিন্ট,ইলেকট্রনিক ও অনলাইনসহ স্থানীয় সাপ্তাহিকের অর্ধশত সাংবাদিকরা মতবিনিময়ে অংশ নেন। উদ্যোক্তা আব্দুল বাছিত বাচ্চুর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন প্রবীণ সাংবাদিক দৈনিক ইত্তেফাক প্রতিনিধি সুশীল সেন গুপ্ত,দি নিউনেশন প্রতিনিধি এম মছব্বির আলী,দৈনিক ইনকিলাব প্রতিনিধি প্রভাষক মানজুরুল হক,দৈনিক দিনকাল প্রতিনিধি মোক্তাদির হোসেন,সাপ্তাহিক অর্থকালের সহ-সম্পাদক আতিকুর রহমান আখই,ডেইলী স্টারের নিজস্ব প্রতিবেদক মিন্টু দেশোয়ারা,দৈনিক বর্তমান প্রতিনিধি আশীষ কুমার ধর,দৈনিক মানবজমিন প্রতিনিধি আলাউদ্দিন কবির,দৈনিক কালের কন্ঠ প্রতিনিধি মাহফুজ শাকিল,দৈনিক কাজির বাজার প্রতিনিধি শাহ আলম শামীম, দৈনিক যায়যায় দিন প্রতিনিধি আব্দুল আহাদ।
প্রস্তাবিত এই জেলা সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত তুলে ধরা হয়। প্রস্তাবিত এ জেলায় ৪ উপজেলা, ৩ পৌরসভা, ৩৮টি ইউনিয়ন, দৃষ্টিনন্দন মাধবকুন্ড জলপ্রপাত, রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ হাকালুকি হাওরের সিংহভাগ এলাকা,ছোট বড় ১০টি নদ-নদী,কুলাউড়া জুড়ীর সীমান্ত ঘেষা ষাড়েরগজ পাহাড়(কালা পাহাড়) অর্ধশতাধিক চা বাগান, পৃথিমপাশা জমিদার বাড়ি, নির্মাণাধীন দেশের প্রথম মাহে-মনি আর্টস এন্ড স্পোর্টস মিউজিয়াম, প্রস্তাবিত মুড়ই ছড়া ইকোপার্ক,আদিবাসী পল্লী,মৃৎ শিল্প, জুড়ীর কমলা বাগান, শমসের নগর বিমান ঘাটি, দীর্ঘ সীমান্ত এলাকা, চাতলাপুর স্থলবন্দর, উচু উচু পাহাড়-পর্বতসহ একাধিক দর্শনীয় স্থান রয়েছে।
কুলাউড়া উপজেলার হাজিপুর,শরীফপুর,কমলগঞ্জের সমশের নগর, পতনউষারসহ পাশর্^বর্তী আরও দু একটি ইউনিয়ন নিয়ে নতুন একটি উপজেলা করা যেতে পারে। এতে ৩ টির স্থলে ৪ টি উপজেলা নিয়ে হতে পারে প্রস্তাবিত জেলা। প্রস্তাবিত এই জেলার জনসংখ্যা হবে প্রায় ১১ লাখ। আর জেলার আয়তন হবে ১৬৪৩ দশমিক ৯৭ বর্গকিলোমিটার। দুটি সংসদীয় আসন (বড়লেখা,জুড়ী, কুলাউড়া ও কমলগঞ্জ আংশিক) হবে নতুন এই জেলায়। যোগাযোগে সহজ ও প্রায় মধ্যখানে থাকায় প্রস্তাবিত জেলার নাম কুলাউড়া হতে পারে। আর নতুন এই জেলা হলে পর্যটকদের যেমন আকর্ষণ বাড়বে ঠিক তেমনি এ খাত থেকে ব্যাপক রাজস্ব আয়ও হবে। পাশাপাশি অবহেলিত পূর্ব ও উত্তরাঞ্চলের ব্যাপক উন্নয়ন আর পরিবর্তন সাধিত হবে ।
কুলাউড়া উপজেলার হাজিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল বাছিত বাচ্চু বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁর মতামত তুলে ধরলে মানুষের ব্যাপক সমর্থন পান। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি কুলাউড়ার সাবেক এমপি নওয়াব আলী আব্বাছ খান ও সাবেক এমপি এম এম শাহীনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি এবং রাজনৈতিক ব্যক্তির সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। তাদের কাছ থেকে সাড়া পেয়ে সর্বশেষ তিনি মঙ্গলবার কুলাউড়ার গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে মতবিনিময় করেন।
পর্যায়ক্রমে বড়লেখা,জুড়ী,কমলগঞ্জের সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তির সাথে মতবিনিময় করে পর্যটন জেলার যৌক্তিক দাবিগুলো তুলে ধরবেন। পাশাপাশি বন ও পরিবেশ মন্ত্রি আলহাজ¦ শাহাব উদ্দিন এমপি,সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ এমপির দৃষ্টি আকর্ষন করে বিষয়টি সংসদে উপস্থাপনের দাবি জানান। এছাড়াও পর্যটন বান্ধব বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর লিখিত আকারে একটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা পাঠানোর সিন্ধান্ত মতবিনিময় সভায় গৃহিত হয় এবং কর্মসূচী বাস্তবায়নের জন্য আব্দুল বাছিত বাচ্চুকে আহবায়ক ও সাংবাদিক মোঃ নাজমুল ইসলামকে দপ্তর সম্পাদক করে ৪১ সদস্য বিশিষ্ট প্রস্তাবিত কুলাউড়া পর্যটন জেলা বাস্তবায়ন পরিষদ গঠন করা হয়। আব্দুল বাছিত বাচ্চু আরও জানান, বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন শ্রেনীপেশার মানুষের মত থেকে বুঝা যায় যোগাযোগ ও মধ্যবর্তী অবস্থান বিবেচনা করে প্রস্তাবিত জেলার হেডকোয়ার্টার হতে পারে কুলাউড়ায়। এতে পর্যটকদের যাতায়াত ব্যয় কমে যাবে অর্ধেক।
দেশের যেকোন এলাকা থেকে হেলিকপ্টার, বিমান, ট্রেনে অথবা সড়কপথে এখানে আসতে পারবেন পর্যটকেরা। তাছাড়া চালুর প্রক্রিয়াধীন কুলাউড়া শাহবাজপুর রেল পথটির কারণে প্রস্তাবিত এই জেলার যোগাযোগ অনেকটা সহজ হয়ে যাবে। সর্বসাকুল্যে ১ ঘন্টায় জেলার চারিদিকে যাতায়াত সম্ভব। জেলা সদর হলে এই এলাকার নিরাপত্তা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং ভৌত অবকাঠামো গড়ে উঠবে। ফলে পর্যটকদের আবাসিক সমস্যারও সমাধান হবে।
প্রস্তাবিত জেলার আয়তন আর জনসংখ্যা দেশের অনেক জেলার চেয়ে বেশি হবে। যেমন দেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের আয়তন ১৪০৪ দশমিক ৩৩ বর্গকিলোমিটার, রাজবাড়ীর আয়তন ১০৯২ দশমিক ৩০ বর্গকিলোমিটার, দক্ষিণ পশ্চিমের মাগুরার আয়তন ১০৪৯ বর্গকিলোমিটার, চুয়াডাঙ্গার ১১৭০ দশমিক ৮৭ বর্গকিলোমিটার আর মধ্যাঞ্চলের নারায়ণগঞ্জ জেলার আয়তন মাত্র ৬৮৩ দশমিক ১৭ বর্গকিলোমিটার।
এই সবকটির আয়তন প্রস্তাবিত পর্যটন জেলার চেয়ে অনেক কম। এমনি অনেক জেলায় সংসদীয় আসন মাত্র ২ টি করে। আর পার্বত্য অঞ্চলে তো একেক জেলায় মাত্র একটি করে সংসদীয় আসন রয়েছে। এই তিন উপজেলাকে বাদ দিলেও মৌলভীবাজার জেলার আয়তন দেশের উল্লেখিত এসব জেলার আয়তন থেকে বেশি অর্থাৎ প্রায় ১২ শত বর্গকিলোমিটার হবে।