সর্ব রোগের মহা ঔষধ টুনিমানকুনি পাতা

প্রকাশিত: ৪:১৬ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২০

 সর্ব রোগের মহা ঔষধ টুনিমানকুনি পাতা

 

অন্তরা চক্রবর্তীঃঃ

 

গ্রাম বাংলার পরিচিত প্রাকৃতিক উদ্ভিদ টুনিমানকুনি বা থানকুনি পাতা । সিলেটের অঞ্চলের লোকজনের কাছে উদ্ভিদটি টুনিমানকুনি হিসাবে পরিচিত থাকলেও অঞ্চলভেদে এই পাতাটিকে টেয়া, মানকি,তিতুরা, থানকুনি, আদামনি, ঢোলামানি,মানামানি, ধূলাবেগুন, আদাগুনগুনি নামে ডাকা হয়। বহু রোগের ডাক্তার এই পাতাটির ইংরেজি নাম  Indian pennywort, ল্যাটিন নাম Centella Asiatica, বৈজ্ঞানিক নাম Centella Asiatica urban এবং পরিবার Mackinlayaceae

 

বিভিন্ন তথ্য সূত্রে জানায়, টুনিমানকুনি মাটিতে লতার মত করে জন্মায়। সিলেট অঞ্চলের মহাউপকারী এ পাতা যত্রতত্র দেখা যেত। খাল, ছরা, ডোবা, পুকুর ও দিঘীর পাড়সহ জমির আইলে থানকুনি প্রচুর জন্মাত। এ উদ্ভিদের জন্ম এমন ব্যাপক ছিল যে মানুষ চলাচল করতে গিয়ে পায়ের চাপে নষ্ট হয়ে যেত। তৎকালিন সময়ে টুনিমানকুনি হেলাফেলার বস্তুু হলেও আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে এটাকে মাহা ঔষধ হিসাবে অখ্যায়িত করেছেন চিকিৎসকরা।

 

বিজ্ঞজনদের মতে, এক সময় মানুষ প্রাকৃতিক টুনিমানকুনিসহ নানা গাছগাছালির লতা পাতা ও গাছের শিকড় এবং ছালকে ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করত। এসব প্রাকৃতিক উদ্ভিদ খেয়ে অনেকেই সুস্থ হয়ে ওঠার নজিরও ছিল। প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত গাছগাছালি লতা পাতার গুনাগুন উপলব্ধি করে এসব দিয়ে গ্রামে অনেকে লোকজনের চিকিৎসাও করত। গাছগাছালি ও লতাপাতা দিয়ে মানুষকে চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে অনেকে কবিরাজ কিংবা ডাক্তার হয়ে যাওযার কথা প্রচারের সাথে সাথে তাদের বাড়ী, ডাক্তার ও কবিরাজ বাড়ী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। সেই সুবাধে এখনও সিলেটের গ্রামঅঞ্চলে কবিরাজ বা ডাক্তার বাড়ি নামে অনেক বাড়ী রয়েছে।

 

গ্রাম্য কবিরাজ গন টুনিমানকুনি পাতাকে ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করতেন। কবিরাজগন টুনিমানকুনি পাতা সংগ্রহ করে এগুলো থেকে রস নিয়ে অথবা পাতা ও শিকড় শুকিযে ঔষধ তৈরী করতেন। আর কবিরাজি নানা ঔষধের সাথে থানকুনির রস কিংবা পাতা ও শিকড় পিসে দিয়ে ঔষধ সেবনের পরামর্শ দেওয়া হত। টুনিমানকুনি পেটের পীড়ার মহা ঔষধ। আমাশয় রোগীদের থানকুনির রস খাওয়ালে পেটের যন্ত্রনা উপসম হয়। তাছাড়া থানকুনি ভর্তা করে গরম ভাত দিয়ে খেলে আমাশয় ও পেটের পীড়া কমে যায়। তাছাড়া থানকুনি সেবনে মুখে রুচি বৃদ্ধি পায়। হজম শক্তি বাড়ে। পেটের অসুখ কমে যায়। মাথাও ঠান্ডা রাখে। মহা উপকারী এ উদ্ভিদ পূর্বে যেভাবে গ্রামের যত্রতত্র দেখা যেত এখন আর তেমন দেখা যায় না। পরিবেশগত কারনে টুনিমানকুনির উৎপাদন কমে গেছে। সিলেটের কোন কোন অঞ্চলে টুনিমানকুনি পাওয়া গেলেও তা খুবই নগন্য। বিজ্ঞানের যুগে প্রাকৃতিক এ ঔষধী গুনাগুন সর্ম্পকে মানুষ খুব সচেতন হওয়ায় টুনিমানকুনির চাহিদা এখন প্রচুর। চাহিদা থাকা সত্ত্বেও টুনিমানকনির চাষাবাদ কেউ করেনা। তাই উপকারী এ উদ্ভিদ পাওয়া খুব কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে। অবশ্য কোন কোন সময় সিলেটের গ্রামে হাট বাজার গুলিতে টুনিমানকুনি দেখা যায়। তবে দাম চড়া। হেলাফেলার এ টুনিমানকুনি পাতার ঔষুধী গুনাগুনের বিষয় উপলব্ধি করে কেউ কেউ বাড়ী ঘরের আঙ্গিনায় টুনিমানকুনির চাষাবাদে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।

 

সচেতন মহলের অভিমত বর্তমান প্রজন্মের অনেকের কাছে টুনিমানকুনি বা থানকুনি অপরিচিত দ্রব্য। মহাঔষধ হিসাবে খ্যাত এ টুনিমানকুনি চাষাবাদে কৃষকদের আগ্রহী করে তুলতে পারলে অর্থ আয় যেমন হবে তেমনি প্রাকৃতিক এ ঔষধ সেবন করে অনেকের রোগ মুক্তিও পাওয়া পাবে।

Spread the love