সিলেট কামরান চত্বরে আজ নেই কামরান

প্রকাশিত: ৯:০৭ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২১

সিলেট কামরান চত্বরে আজ নেই কামরান

স্টাফ রির্পোটারঃঃ

‘কামরান চত্বর’ নিয়ে গত বছরের জুলাই মাসের শেষদিকে টানা তিন দিন উত্তাল ছিলো সিলেট নগরী। সিলেট সিটি করপোরেশন তথা নগর ভবনের সামনের পয়েন্টটিকে ‘কামরান চত্বর’ নামকরণ নিয়ে সৃষ্ট উত্তপ্ত পরিস্থিতি শেষে পেরিয়ে গেছে অর্ধবছর। কিন্তু ‘কামরান চত্বর’-কে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়ার বিষয়টি চাপা পড়ে আছে অজ্ঞাত কারণে।

 

 

শুধু এতেই শেষ নয়, দুদিন থেকে ‘কামরান চত্বর’ ছোট সাইনবোর্ডটিও এখন আর নেই। কে বা কারা খুলে নিয়েছে সে খবরও রাখেননি সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ কিংবা এর পক্ষে আন্দোলনকারী আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা। তাই বিষয়টি যেন এমন- ‘কামরান চত্বরে’ আজ নেই কামরান! যদিও এ বিষয়ক ফাইলটি ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে সিলেটভিউ-কে জানিয়েছেন সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।

 

 

গত বছর সংস্কার কাজ শেষে দৃষ্টিনন্দন করে তৈরির পর সিলেট সিটি করপোরেশন তথা নগর ভবনের সামনের পয়েন্টটিকে বছরের ২৬ জুলাই সন্ধ্যারাতে ‘নগর চত্বর’ হিসেবে উদ্বোধন করেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। যে চত্বরটি আগে ‘সিটি পয়েন্ট’ নামে পরিচিত ছিলো। উদ্বোধনের পর ক্ষোভে ফেটে পড়েন সিলেট ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা। পরদিন (২৭ জুলাই) দুপুরে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের শতাধিক নেতাকর্মী মিছিল সহকারে এসে উদ্বোধন হওয়া ‘নগর চত্বর’ সাইনবোর্ড খুলে ‘কামরান চত্বর’ লেখা নতুন সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেন।

 

 

এর পরদিন সিলেট সিটি করপোরেশনের মাসিক সভায় ‘নগর চত্বরকে’ ‘কামরান চত্বর’ করার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সিসিকের ২৮ জুলাইয়ের সভার শুরুতেই এই চত্বর নিয়ে সৃষ্ট উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সার্বিক বিষয় তুলে ধরেন এবং দ্রুত এটি কামরান চত্বর হিসেবে ঘোষণার দাবি জানান সিসিকের বেশিরভাগ কাউন্সিলর। এ দাবির সঙ্গে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ পরিষদের কেউই দ্বিমত পোষণ করেননি। তাই নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত হয়, নগর চত্বরকে স্থায়ীভাবে করা হবে কামরান চত্বর।

 

 

ওইদিন সিসিক’র প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান সিলেটভিউ-কে বলেন, দীর্ঘ আলোচনা এবং পরিষদের সবার সম্মতিক্রমে নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে- নগর ভবনের সামনের চত্বরটি কামরান চত্বরই হবে। এ বিষয়ে দ্রুত ফাইল রেডি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে এবং অনুমোদন পেলেই এটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘কামরান চত্বর’ হিসেবে ঘোষণা করা হবে।এদিকে, ওই সভার পরপরই বদর উদ্দিন আহমদ কামরানসহ সিলেটের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নামে বিভিন্ন সড়ক ও স্থাপনার নামকরণের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়।

 

 

সেই কমিটির প্রধান করা হয় সিলেটে সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে। কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা থাকলেও এসব বিষয়ে সেই কমিটির কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। এরপর আর কামরান চত্বরসহ অন্যান্য স্থাপনা ও সড়কের নামকরণ নিয়ে কমিটির কোনো বৈঠকই হয়নি, নেয়া হয়নি কোনো উদ্যোগ। এমনকি কোনো রেজুলেশনই তৈরি করা হয়নি।

 

 

তবে কিছুদিন আগে মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ক একটি ফাইল পাঠানো হয়েছে সিলেটভিউ-কে জানালেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। বুধবার বিকেলে তাঁর সঙ্গে সরাসরি আলাপকালে বলেন, ফাইল অলরেডি পাঠানো হয়ে গেছে। আসলে এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের অনুমতির কিছু নাই। এটি একটি ফরমালিটি মাত্র। তাহলে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘কামরান চত্বর’ ঘোষণার কতদূর? এমন প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, উদ্বোধন অলরেডি হয়ে গেছে। তারা (আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা) করে ফেলেছেন। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আর কিছু নাই।

 

 

সাইনবোর্ড না থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, এটি কে বা কারা খুলে নিয়েছে জানি না। দেখা যাক কী করা যায়।কামরান চত্বর প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী সিলেট মহানগর যুবলীগের সভাপতি আলম খান মুক্তি সিলেটভিউ-কে বললেন, এ বিষয়ে আর খোঁজ-খবর নেয়া হয়নি। সাইনবোর্ড না থাকার বিষয়েও তিনি কিছু জানেন না বলে জানালেন।

 

 

উল্লেখ্য, সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান গত বছরের ১৫ জুন মারা যান। করোনাক্রান্ত হয়ে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। পরদিন সোমবার তার মরদেহ সিলেটে এনে মানিক পীর কবরস্থানে দাফন করা হয়।

 

 

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নির্বাহী সদস্য পদে আমৃত্যু দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। আর সিলেট সিটি করপোরেশনের ইতিহাসে প্রথম নির্বাচনে তিনি মেয়র হয়েছিলেন। পরের দফায়ও একই পদে কারাগার থেকে নির্বাচিত হন কামরান। নিজের জীবনের প্রায় দুই ভাগ সময়ই (৪১ বছর) তিনি জনপ্রতিনিধি হিসেবে কাটিয়েছেন।

 

 

১৯৫৩ সালে জন্ম নেয়া বদর উদ্দিন আহমদ কামরান মাত্র ১৯ বছর বয়সে ১৯৭২ সালে তৎকালীন সিলেট পৌরসভার কমিশনার নির্বাচিত হন। এরপর কমিশনার থেকে হন পৌরসভার চেয়ারম্যান। পৌর চেয়ারম্যান থেকে দু’বারের সিটি মেয়রও ছিলেন তিনি।সিলেটে ব্যাপক জনপ্রিয় কামরানের মৃত্যুর পর তাঁর স্মৃতি ধরে রাখার বিষয়ে জোরালো দাবি ওঠে বিভিন্ন মহল থেকে। রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষও সেই দাবিতে শামিল হন।

 

 

সে সময় সবার দাবির সাথে একমত ছিলেন বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীও। কামরানের স্মৃতি ধরে রাখতে ‘কিছু একটা করা হবে’ বলে জানিয়েছিলেন তিনি। এর পরিপ্রেক্ষিতে দল-মত নির্বিশেষ সকলের প্রত্যাশা ছিলো- সিটি পয়েন্টকে উদ্বোধনের সময় ‘কামরান চত্বর’ হিসেবে ঘোষণা দিবেন আরিফ, কিন্তু গত ২৬ জুলাই সে আশার গুড়ে যেন বালি ঢেলে দিয়ে সেটিকে ‘নগর চত্বর’ ঘোষণা দিয়ে উদ্বোধন করেন আরিফুল হক চৌধুরী।

 

 

অবশেষে দুই দিনে অনেক জল ঘোলা করে উদ্বোধনের দুদিন পর (২৮ জুলাই) সিসিক পরিষদের সভায় নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত হয়, নগর চত্বরই হচ্ছে কামরান চত্বর। এটি বাস্তবায়নে সেদিন আরিফুল হক চৌধুরীও সম্মতি জানিয়ে কমিটি গঠন করেন। কিন্তু আরিফুল হক চৌধুরীর বক্তব্যমতে এ সংক্রান্ত ফাইল মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কামরান চত্বর ঘোষণা করা হয়নি। সর্বশেষে সেখানে থেকে ‘নাই’  হয়ে গেছে ‘কামরান চত্বর’ লেখা সাইনবোর্ডটি।

Spread the love

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

আর্কাইভ

April 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930