ওসমানীনগরে কৃষকদের ধান নিয়ে খাদ্য গুদামে হট্টগুল

প্রকাশিত: ৭:২৯ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২০

ওসমানীনগরে কৃষকদের ধান নিয়ে খাদ্য গুদামে হট্টগুল

 

 

প্রতিনিধি/ওসমানীনগরঃঃ

গতকাল শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ওসমানীনগর উপজেলার রবিদাশ গ্রামের কৃষক সুনু মিয়া তার ধান নিয়ে আসেন উপজেলা খাদ্য গুদামে। তার ধান দেখে ক্রয় করা হবে বলে আলাদা রাখা হয়। দুপুর ২ টার দিকে ঐ কৃষকের ধান নেওয়া হবে না বলে জানান উপজেলা খাদ্য গুদামের সংশ্লিষ্টরা।

 

আবার সকাল ১০ টা থেকে ব্যবসায়ীদের আনা ট্রাক ভর্তি নিন্মমানের ধান গুদামে ঢুকাতে কর্মকর্তা-কর্মচারিদের ব্যস্ত ছিলেন। সকাল থেকে অপেক্ষমান কৃষকদের ধান না নিয়ে ব্যবসায়ীদের ধান ক্রয় করায় দুপুর ২ টার দিকে উপস্থিত একাধিক কৃষক এবং সংশ্লিষ্টদের মধ্যে হট্টগুল বাধে।

 

এমন খবরে উপজেলার তাজপুর খাদ্য গুদামে যান স্থানীয় সাংবাদিকরা। এসময় সাংবাদিকরা উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা আব্দুল আউয়ালকে অফিসে এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার কথা বললে ওই কর্মকর্তা অফিসে আসতে অনিহা দেখান। পরে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান চৌধুরী নাজলুসহ আওয়ামীলীগসহ অঙ্গ সংগঠেনের নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় লোকজনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

 

সরজমিন সাংবাদিকরা তাজপুরস্থ খাদ্য গুদামে গিয়ে দেখতে পান- খাদ্য গুদামে কৃষকদের ধান এক পাশে রাখা। মানহীন ধান গুদামে ডুকানো নিয়ে কৃষকরা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত এলএসডি মূর্শেদা বেগমকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। গুদামে দালালদের মানহীন ধান নেয়া হলেও কৃষকের ভালো ধান ফিরিয়ে দেওয়ার হচ্ছে বলে সেখানে আসা কৃষকরা অভিযোগ করেন।

 

উপজেলা খাদ্য গুদামের অনিয়ম নিয়ে একাধিকবার সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলেও টনক নড়ছে না উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের। ধান সংগ্রহে সংশ্লিষ্টদের দূর্নীতির বিষয়টি বার বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের জানালেও কোন কার্যত ব্যবস্থ গ্রহন না করায় সিলেট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না ওসমানীনগরের কৃষকরা।

 

সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার খাদ্য গুদামে কর্মরত সংশ্লিষ্টরা কৃষকদের অভিযোগ কর্নপাত না করে সরকারীভাবে ধান কেনার কর্মসূচীকে পূঁজি করে লুটপাটে মেতে উঠেছেন। দক্ষিন সুরমা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা ওসমানীনগর উপজেলার অতিরিক্ত দ্বায়িত্বে থাকা আব্দুল আউয়াল ও উপজেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত এল এসডি কর্মকর্তার দ্বায়িত্বে থাকা মোর্শেদা বেগম বিভিন্ন ভাবে দালালদের কাছ থেকে ধান ক্রয়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন কয়েক লক্ষ টাকা।

 

ডিজিটাল মিটারে ধান মাপার কথা থাকরেও পাল্লা দিয়ে ধান মাপা হচ্ছে। তাই কৌশলে সাধারণ কৃষকদের কাছ থেকে প্রতি টন ধানের সাথে ৩/৪ মন ধান বেশি নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে।ফলে উৎপাদনকারী প্রকৃত কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার পাশাপাশি সরকারের দেয়া প্রণোদনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

 

অন্যদিকে, গত বছরের ২০ ডিসেম্বর থেকে ধান সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু করে ১৮ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত ৬১৮ টন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানান কর্মকর্তারা। লক্ষ মাত্রা অনুসারে ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে আরো ৬শ টন ধান সংগ্রহ করার কথা থাকলে গতকাল শনিবার পর্যন্ত ৩ দিনে ৩৫৪ টন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত এল এস ডি মূর্শেদা বেগম।

 

তিনি বলেন, কে কৃষক,আর কে কৃষক নয় সেটি আমি জানি না। তালিকায় নাম থাকলে আমরা ধান গ্রহন করছি। আমাদের আর ২৪৬ টন ধান সংগ্রহ বাকি রয়েছে তাও তারা তারি সংগ্রহ করা হবে। (দুই মাসে অর্ধেক ধান আর তিন দিনে তার অর্ধেক ধান) ৩ দিনে ৩৫৪ টন ধান কিভাবে সংগ্রহ করা হলো এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কৃষকরা ধান নিয়ে এসছেন আমরা বাছাই করে রেখেছি। তবে, খাদ্য গুদামের ধান সংগ্রহে ধীরগতি ও দূর্নিতির সংবাদ গনমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ায় ৩ দিনে ৩৫৪ টন নিন্মমানের ধান সংগ্রহ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক কৃষকরা।

 

কৃষক আব্দুল মুহিদ, আব্দুর রাজ্জাক, তজমুল আলী, আব্দুর রহিম বলেন, আমাদের নাম তালিকায় থাকা সত্বেও আমরা একাধিকবার ধান নিয়ে উপজেলা খাদ্য গুদামে গেলে আমাদেরকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের ধান না নিয়ে খাদ্য গুদাম সংশ্লিষ্টরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তাদের ইচ্ছা মতো ধান ক্রয় করছেন। দালালদরে ধান ক্রয় করা হলেও আমাদের ভালো ধান ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় কৃষকরা নিজের জমির ধান গুদামে নিয়ে গিয়ে নিরুপায় হয়ে কেউ দালালদের কাছে কম মূল্যে বিক্রি করছেন।

 

একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, উপজেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত এল এস ডি মূর্শেদা বেগম ও দক্ষিন সুরমা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা ওসমানীনগর উপজেলার অতিরিক্ত দ্বায়িত্বে থাকা আব্দুল আউয়ালসহ সংশ্লিষ্টরা প্রতিটন ২৬ হাজার টাকার ধান ক্রয়ে ২০০০ হাজার টাকা বাধ্যতামূলক ঘুষ নিচ্ছেন। দালাল ছাড়া কোন ধান ক্রয় করা হচ্ছে না তাই কৃষক ধান নিয়ে খাদ্য গুদামে এসে ন্যায্যমূল্যে ধান বিক্রি করতে পারছে না। ফলে সরকারের খাদ্য মন্ত্রনালয়ের অধিনে ২৬ টাকা কেজি দরে ধান কেনার ঘোষনা দিলেও এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন ওসমানীনগর উপজেলার কৃষকরা।

 

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দ্বায়িত্ব প্রাপ্ত) আব্দুল আউয়াল টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়টি অস্বিকার করে বলেন, আমরা চাইলে ৫ টনও ধান নিতে পারি। নানা অনিয়মের ব্যপারে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার এতা সময় নেই।

 

উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান চৌধুরী নাজলু বলেন, প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করা হচ্ছে না। এবং কৃষকরা খাদ্যগুদামে হট্টগুলের খবর পেয়ে আমি এসেছি এবং পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এখানে আসবেন তিনি কৃষকদের অভিযোগের কথা শুনে ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।

 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা:তাহমিনা আক্তার বলেন, এ ব্যপারে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তের রির্পোট পেলে ব্যবস্থা গ্রহন তরা হবে।

Spread the love

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

আর্কাইভ

April 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930