নিউজিল্যান্ড অর্ডার অব মেরিট সম্মান পেলেন সিলেটের ফরিদ

প্রকাশিত: ৭:৪৬ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৬, ২০২২

৬৬৭ Views

লন্ডন বাংলা ডেস্কঃঃ
নিউজিল্যাণ্ডের ফরিদ আহমেদ, বাংলাদেশের ফরিদ আহমেদ এবং সিলেটের ফরিদ আহমেদও তিনি। তিন বছর আগে একজন শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদী তার স্ত্রী এবং অন্য ৫০ জন মুসলমানকে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ এলাকার আল নুর জামে মসজিদে ঢুকে গুলি করে হত্যা করেছিল। ২০১৯ সালের মার্চের সেই গণহত্যার পর ফরিদ আহমেদ শান্তি, প্রেম এবং ক্ষমার এক অনন্য কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠেন বিশ্বব্যাপী। আন্তঃধর্মীয় সম্প্রদায়ের সেবার জন্য এখন তাকে ‘নিউজিল্যান্ড অর্ডার অফ মেরিট’ সম্মান দেওয়া হয়েছে।

 

তিনি ন্যাশনাল মেমোরিয়াল সার্ভিসে তার দর্শন সম্পর্কে কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, তিনি হত্যাকারীকে ক্ষমা করেছেন এবং তারপর থেকে তার বার্তা প্রচারের জন্য বিশ্বজুড়ে ভ্রমণ করেছেন।

 

তিনি একজন দ্বীনদার মানুষ, মানে একজন ধর্মপ্রাণ মুসলিম। তিনি ইসলামের শিক্ষায় শিক্ষিত। তিনি ইসলাম থেকে পেয়েছেন শান্তি কীভাবে সমাজে আনা যায়। তিনি বললেন, “প্রত্যেকেরই ক্ষমা করার ক্ষমতা আছে, এটি কেবল একটি পছন্দ। আমরা যদি নিজের ইচ্ছাশক্তি দিয়ে সিদ্ধান্ত নিই যে আমরা প্রেমকে বেছে নিতে চাই, তাহলে এটি সহজ।

 

তিনি জানালেন তিনিও কষ্টমুক্ত না। বললেন, “দুটি দিক আছে, দিন ও রাতের মতো। রাতের অংশ অন্ধকার, এতে ব্যথা আছে, দুঃখ আছে, আমি এর থেকে মুক্ত নই।

 

ফরিদ আহমেদ বললেন “একই সময়ে, রাত আশা দেয় যে শীঘ্রই এটি শেষ হতে চলেছে এবং সূর্য বেরিয়ে আসতে চলেছে।

সেদিন ঐ মসজিদে ফরিদ আহমেদের স্ত্রী, হুসনা, মহিলা ও শিশুদের নিরাপত্তার জন্য গাইড করে নিরাপদ জায়গায় রেখে পরে হুইলচেয়ার ব্যবহার করা তার স্বামীকে সাহায্য করার জন্য আল নূর মসজিদে তৃতীয়  ফিরে যাওয়ার সময় আততায়ী তাকে গুলি করে হত্যা করে।

 

সেই বছরের মার্চেই হাজার হাজার নিউজিল্যাণ্ডবাসীর সামনে এই ধার্মিক ফরিদ আহমেদ বলেছিলেন, “আমি হামলাকারিকে ক্ষমা করে দিয়েছি…….তার সাথে দেখা করে আমি তাকে জড়িয়ে ধরতে চাই।

 

ব্রিটেনের রানী কর্তৃক তাঁকে ‘নিউজিল্যাণ্ডের অর্ডার অব মেরিট’ সম্মান দেওয়ার পর মিডিয়া তাঁর প্রতিক্রিয়া ছিল এ রকম-

“I don’t take it as a glory for me, I am nothing and do not need it. The real honour goes to my wife, to the 50 other people who lost their lives and to their families.” (এটাকে আমি আমার প্রতি সম্মান মনে করছি না। আমি কিছু না, আমার এটা দরকার নেই। এ সম্মান তাঁদের প্রতি – আমার স্ত্রীসহ ৫০ জন, যারা তাঁদের জীবন ও পরিবার হারালেন।)

 

রানীর দেয়া সম্মানসূচক সদস্যপদ পাওয়ার পর ফরিদ ভাই তাঁর এক বন্ধুকে একটি মেইল দেন। তাতে তিনি লিখেছেন-

 

‘‘আসসালামু আলাইকুম, আশা করি পরিবার নিয়ে ভালো আছেন। আমি যথারীতি জীবনের প্রতিকূলতার সাথে লড়াই করছি। কিন্তু আমার স্বেচ্ছাসেবী কাজ বেড়েছে এবং আমি চালিয়ে যেতে আরও সংগ্রাম করছি। বয়স বাড়ছে, শক্তি কমছে, কিন্তু কাজের গতি কমছে না। আমি জীবনে একটি জিনিস শিখেছি এবং তা হল, ‘কঠোর পরিশ্রম, ঝুঁকি এবং ক্ষতি ছাড়া কিছুই আসে না।’ (Nothing comes without hard hard work, risk and loss.)

 

‘গতকাল, ঘোষণা করা হয়েছে, মহামান্য রাণী আমাকে নিউজিল্যান্ড অর্ডার অফ মেরিট-এর সদস্য হিসাবে নিযুক্ত করেছেন, এটি একটি অত্যন্ত উচ্চ সম্মান যা নিউজিল্যান্ড সরকার অনুমোদিত। এটি আমার প্রিয় স্ত্রী এবং অন্যান্য ৫০ জন বন্ধুকে হারানোর জন্য আমাকে দুঃখিত করে, কিন্তু আমাকে আনন্দিত করে যে আমরা শান্তি ও সহানুভূতির সাথে মুসলমানদের কষ্ট এড়াতে পারি।…

 

‘আমি কখনো সম্মানের জন্য কিছু করিনি বা করিনা, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করি‘আমার জন্য দুআ করো। আমার অনেক কিছু করার আছে। চাহিদা ও সুযোগ এখন বেশি। আলহামদুলিল্লাহ! আমি নিয়মিত লিখছি, এবং নিউজিল্যান্ডে ভয়েস অফ ইসলামের সাথে টিভি প্রোগ্রাম করছি এবং কনফারেন্সে কথা বলছি। এছাড়া স্বেচ্ছায় কোরআন শিক্ষা চলছে। আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কিছু স্বেচ্ছাসেবী কাজ পরিচালনা করি। আল্লাহ তাদের কবুল করুন।

 

অনুগ্রহ করে আমার ভালবাসা আপনার পরিবার এবং সমস্ত বন্ধুদের কাছে পাঠিয়ে দিন। সময় সীমাবদ্ধতার কারণে সবাইকে লিখতে না পারার জন্য আমি দুঃখিত। তার মানে এই নয় যে আমি আপনাদের সবাইকে ভালোবাসি না, আমি শুধু ব্যস্ত থাকি এবং সবসময় আপনাদের সবার জন্য দোয়া করি। আমার মেয়ের জন্য দোয়া করবেন। সে এ বছর ইউনিতে যাচ্ছে। আমি রেজা ভাই ও হুসনাকে নিয়মিত কবরস্থানে দেখতে যাই। আমি এখনো কাঁদি কিন্তু আল্লাহর সিদ্ধান্তে খুশি। আল্লাহ আমাদের প্রিয়জনদের জান্নাত নসিব করুন, আমীন!’

 

ফরিদ ভাই দেখালেন, প্রকৃত ধার্মিক মানুষ নিজে কষ্ট পেলেও আল্লাহর সিদ্ধান্তে শান্ত থাকে, শান্তি চান, ভালোবাসা ছড়িয়ে দেন বিশ্বময়। প্রকৃত ধার্মিকের মাঝে আক্রোশ থাকে না, ফ্যাসাদের ফন্দি থাকে না।

Spread the love

Follow us

আর্কাইভ

March 2024
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031