যাঁদের ক্রেডিট কার্ডের জন্য জরিমানা করা হয়েছে, তাঁদের ১১ জনের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এই ১১ জনের মধ্যে সিকদার পরিবারের সদস্য ৯ জন ও বাকি ২ জন সিকদার গ্রুপের কর্মকর্তা। তাঁরা ক্রেডিট কার্ড দিয়ে বিদেশে সীমাতিরিক্ত মার্কিন ডলার খরচ করেছেন, যা দেশের প্রচলিত আইনে বৈদেশিক মুদ্রা পাচারের অপরাধ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১১টি ক্রেডিট কার্ডে গত পাঁচ বছরে ১ কোটি ৩৬ লাখ ৩০ হাজার ৫২৮ ডলার খরচ করা হয়, প্রতি ডলারের বিনিময়মূল্য ৮৬ টাকা ধরে দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ১১৭ কোটি টাকা।
সিকদার পরিবারের যেসব সদস্য ব্যাংকটির ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করছেন, তাঁরা হলেন রন হক সিকদার, রিক হক সিকদার, দিপু হক সিকদার, মমতাজুল হক ও লিসা ফাতেমা হক। তাঁরা সবাই ব্যাংকটির প্রয়াত চেয়ারম্যান জয়নুল হক সিকদারের সন্তান। এর বাইরে পরিবারের আরও যাঁরা কার্ড ব্যবহার করেছেন, তাঁরা হলেন রিক হক সিকদারের দুই ছেলে জন হক সিকদার ও শোন হক সিকদার। পরিবারের আরেক সদস্য হলেন মনিকা সিকদার খান, তিনি নাসিম হক সিকদারের মেয়ে।
নাসিম হক সিকদার হলেন প্রয়াত জয়নুল হক সিকদারের মেয়ে। ওই পরিবারের অপর সদস্য জেফরি সিকদারও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে সীমার বেশি ডলার খরচ করেছেন। এর বাইরে সিকদার গ্রুপের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) সৈয়দ কামরুল ইসলাম এবং গ্রুপের কর্মকর্তা ভারভারা জারিনাও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে নির্ধারিত সীমার বেশি ডলার খরচ করেছেন।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম গতকাল বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিটি ঋণের তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিআইবিতে জমা দিতে হবে, এটাই নিয়ম। ব্যাংকটি তা পালন করেনি।এ কারণে জরিমানা করা হয়েছে।’তবে দেশের বাইরে অতিরিক্ত ডলার খরচের জন্য কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নথিপত্রে দেখা গেছে, যে পরিমান ঋণের তথ্য গোপন করা হয়েছে তার মধ্যে রন হক সিকদারের ঋণ ৬৯ লাখ ৯৫ হাজার ৮৯৩ ডলার, রিক হক সিকদারের ৩৫ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭৯ ডলার, দিপু হক সিকদারের ৪ লাখ ১১ হাজার ৮৮৬ ডলার, মমতাজুল হকের ১ লাখ ৩৫ হাজার ১৫ ডলার ও লিসা ফাতেমা হকের ৮ লাখ ৩৩ হাজার ৬০৮ ডলার।
এছাড়া পরিববারের সদস্যদের মধ্যে জন হক সিকদারের ঋণ ১ লাখ ৩২ হাজার ৪৫০ ডলার, শোন হক সিকদারের ৯ লাখ ৮৭ হাজার ডলার। মনিকা সিকদার খানের ঋণ ৮২ হাজার ১৩৭ ডলার ও জেফরি সিকদারের ৫৭ হাজার ৪৪৫ ডলার। আর সিকদার গ্রুপের কর্মকর্তা সৈয়দ কামরুল ইসলামের ঋণ ৩ লাখ ৩৪ হাজার ৮৭৮ ডলার ও গ্রুপের কর্মকর্তা ভারভারা জারিনার ঋণ ৭৪ হাজারে ৭৪৭ ডলার।