সিলেট ১৩ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৭:০৫ অপরাহ্ণ, মার্চ ৫, ২০২০
লন্ডন বাংলা ডেস্কঃঃ
মা-বাবা ও ছোট ভাইকে ভরণপোষণ না দিয়ে উল্টো নেশার টাকার জন্য মারধর করার অভিযোগে ছেলের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় বাবা ও ছেলেকে মিলিয়ে দিলেন বিচারক। বৃহস্পতিবার ঢাকা সিএমএম আদালতের ঢাকা মহানগর হাকিম দেবদাস চন্দ্র অধিকারী এই মানবিক কাজটি করেন।
মামলার নথি থেকে দেখা যায়, রাজধানীর কদমতলী থানাধীন মোহাম্মাদবাগস্থ ২ নম্বর রোডের ১৮ নম্বর বাড়ির বাসিন্দা মো. আব্দুল গফুর (৭৫) ২০১৮ সালের ২৯ মে ঢাকা সিএসএম আদালতের কদমতলী থানাস্থ আমলী আদালতে এ মামলা দায়ের করেন।
মামলায় বাদী অভিযোগ করেন, তার বড় ছেলে শেখ ফরিদখান (৪৫) মা-বাবা ও ছোট ভাইকে ভরণপোষণ দেয় না। ভরণপোষণ দাবি করলে সম্পত্তি লিখে দিতে বলেন। সরল বিশ্বাসে বাদী সম্পত্তি লিখে দেয়। তারপর ভরণপোষণ দাবি করলে মারধর করেন। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ১৭ মার্চ ভরণপোষণ চাইলে বড় ছেলে মামলার বাদী, তার স্ত্রী ও মেয়েকে মারধর করেন। এ ছাড়া নোশার টাকার জন্য ভাঙচুর করেন ও নগদ ২০ হাজার টাকা চুরি করে নিয়ে যান।
আদালত মামলার দিনই ছেলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। ওই পরোয়ানায় ওই বছর ২৪ জুন ছেলে গ্রেপ্তার হলে কারাগারে পাঠায় সিএমএম আদালত। গ্রেপ্তারের চারদিন পর জামিন পায় ছেলে। এরপর মামলাটি বিচারের জন্য মহানগর হাকিম দেবদাস চন্দ্র অধিকারীর আদালতে পাঠানো হয়। এ আদালত গত বছর ১ জানুয়ারি ছেলে বিরুদ্ধে শেখ ফরিদখানের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করেন।
আজ বৃহস্পতিবার মামলাটিতে সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য ছিল। এদিন বাদী আব্দুল গফুর সাক্ষ্য দিতে হাজির হন। তিনি ছেলের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য কাঠগড়ায় দাঁড়ালে বিচারক দেবদাস চন্দ্র অধিকারী বলেন, ‘আপনি (আব্দুল গফুর) মুরব্বি মানুষ। ছেলে ভুল করতে পারে, আপনি ছেলেকে ক্ষমা করতে পারবেন না। একবার সুযোগ দিয়ে দেখুন।
বিচারকের কথায় তখন অশ্রুসিক্ত বাবা গফুর বলেন, ‘যে অপরাধ করেছে ক্ষমা করা যায় না।’ তখন বাদী ও আসামি পক্ষের আইনজীবী আনিছুর রহমান ও খোরশেদ আলমও বিচারকের কথা সমর্থন করেন।
এ সময় বিচারক বলেন, ‘আমার অনুরোধে একবার ক্ষমা করে দেখেন, একমাস দেখেন কি হয়। এরপর সংশোধন না হলে সাক্ষ্য দিয়েন।’ তখন বাদী হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লে বিচারক ছেলে ফরিদখানকে আসামির কাঠগড়া থেকে নামিয়ে বাবার পা ধরে ক্ষমা চাইতে বলেন। ছেলেও অশ্রুশিক্ত চোখে বাবার পা জড়িয়ে ধরে ক্ষমা চান। তখন আদালতে এক হৃদয় বিদায়ক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়।
এরপর বিচারক বলেন, ‘মামলায় আগামী তারিখ ৬ এপ্রিল সাক্ষ্য গ্রহণের জন্যই থাকবে। যদি ছেলে নিজেকে না শুধরায় তাবে সেদিন সাক্ষ্য হবে।
এরপর বাবা ও ছেলেকে আদালত কক্ষে এক সঙ্গে নাস্তা করানোর জন্য পেশকার জহির উদ্দিনকে নির্দেশ দিয়ে বিচারক এজলাস ছাড়েন। এরপর পেশকার ফলমূল এনে বাবা ও ছেলেকে খাওয়ায় এবং তারপর তারা বাসার উদ্দেশে রওনা হয়।
এ সম্পর্কে ওই আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর আজাদ রহমান বলেন, ‘বিচারক বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনায় নিয়ে বাবা ও ছেলের মধ্যে একটি সম্পর্ক তৈরির চেষ্টা করেছেন। প্রত্যেক বিচারকেরই বিচারের আগে পারিবারিক সদস্যগুলো এমন মানবিক দৃষ্টিকোণ দিয়ে দেখা উচিত।’