সিলেট ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৪:৪০ অপরাহ্ণ, মে ১, ২০২২
লন্ডন বাংলা ডেস্কঃঃ
লাখো মানুষের অংশগ্রহণে জানাজা শেষে সিলেট নগরের রায়নগরে পারিবারিক কবরস্থানে মা-বাবার কবরের পাশে দাফন করা হয়েছে সাবেক অর্থমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও ভাষাসৈনিক আবুল মাল আবদুল মুহিতকে। এ কবরস্থানে শুয়ে রয়েছেন তার বাবা আবু আহমদ আবদুল হাফিজ ও মা সৈয়দা শাহার বানু চৌধুরী। তাদের পাশেই চিরন্দ্রিায় শায়িত হলেন মুহিত। রোববার (১ মে) বিকেল পৌনে ৩টায় দাফন সম্পন্ন হয়।
এর আগে লাখো মানুষের অংশগ্রহণে সিলেট আলিয়া মাদরাসা মাঠে সাবেক এ অর্থমন্ত্রীর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। দুপুর ২টা ১৮ মিনিটে অনুষ্ঠিত জানাজায় ইমামতি করেন আল্লামা মুহিবুল হক গাছবাড়ি। জানাজার পর দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় আওয়ামী লীগ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের লাখো মানুষ উপস্থিত ছিলেন। জানাজা-পূর্ব সংক্ষিপ্ত আলোচনায় পরিবারের পক্ষ থেকে মুহিতের ছোট ভাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বক্তব্য রাখেন।
মুহিতের জীবনের নানা দিক স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য রাখেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান; বন, পরিবেশ জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন আহমদ, জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ, সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান, সংসদ সদস্য হাফিজ আহমদ মজুমদার, আবুল মাল আবদুল মুহিতের চাচাতো ভাই হোসেন আহমদ, সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক, মুকাব্বির খান, হাবিবুর রহমান হাবিব ও আব্দুল মজিদ খান।
আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন আহমদ সিরাজ, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমেদ, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন প্রমুখ।
জানাজা-পূর্ব সংক্ষিপ্ত আলোচনায় প্রয়াত আবুল মাল আবদুল মুহিতের ছোট ভাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, বড় ভাই আবুল মাল আবদুল মুহিত আজীবন মানুষের সেবা করে গেছেন। তিনি ৬৩ বছর ধরে পাবলিক সার্ভেন্ট ছিলেন। একজন অভীষ্ট লক্ষ্যে কাজ করার একজন মানুষ ছিলেন তিনি। তার আমার আমাদের সবার একটাই লক্ষ্য বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এদেশের মানুষকে উন্নত-সমৃদ্ধ জাতিতে পরিণত করা। সে লক্ষেই তিনি আমৃত্যু কাজ করে গেছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘তিনি আমাদের সততা ও সফলতার আইডল এবং অভিভাবক ছিলেন। তিনি দীর্ঘ জীবনে চলার পথে কাউকে দুঃখ দিয়ে থাকলে তাকে আপনারা ক্ষমা করে দিবেন। তার জন্য আমি আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে সবার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘আবুল মাল আবদুল মুহিত ছিলেন আমার নেতা, আমার সিনিয়র কলিগ, আমার বড় ভাই, আমাদের সততার আইকন। তিনি অত্যন্ত সৎ ও নির্লোভ একজন মানুষ ছিলেন। টাকার প্রতি তার কোনো মোহ ছিল না। তিনি কোনো ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তিনি মানুষের কল্যাণে আজীবন কাজ করে গেছেন। তিনি অর্থমন্ত্রী থাকাকালে এদেশের অর্থনীতিকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়েছিলেন।
এর আগে রোববার দুপুরে সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে চোখের জলে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে শেষ বিদায় জানান সিলেটের সর্বস্তরের মানুষ। দুপুর ১২টার দিকে বিশেষ অ্যাম্বুলেন্সে করে তার মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হলে সেখানে এক শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মুহিতকে শ্রদ্ধা জানাতে সকাল থেকে শহীদ মিনারে আসতে শুরু করেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এর আগে সেখানে কালো কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয় শ্রদ্ধা নিবেদন মঞ্চ।
প্রথমে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) একটি চৌকস দল ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আবুল মাল আবদুল মুহিতের প্রতি রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদর্শন করে। পরে প্রয়াতের প্রতি সম্মান দেখিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
এরপর সাবেক অর্থমন্ত্রীর মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক ও উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদসহ আরও অনেকে।