১২ বছরে আগুনে সহস্রাধিক হতাহত

প্রকাশিত: ৩:৪১ অপরাহ্ণ, জুন ৬, ২০২২

১২ বছরে আগুনে সহস্রাধিক হতাহত
৩২৭ Views

লন্ডন বাংলা ডেস্কঃঃ

সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড এবং রাসায়নিক বিস্ফোরণে এখন পর্যন্ত ৪৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছে দুই শতাধিক। তা ছাড়া ডিপোর ৪ কিলোমিটার আশপাশের ঘরবাড়ি এবং স্থাপনা ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। দেশে গত এক যুগে এমন বেশ কিছু বৃহৎ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।

 

আগুনে দগ্ধ হয়ে হতাহত হয়েছেন সহস্রাধিক মানুষ। একের পর এক আগুনে মৃত্যুর ঘটনায় দায়সারাভাবে মামলা হলেও কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান শাস্তির মুখোমুখি হয়নি। বিচারহীনতা এবং শিল্প প্রতিষ্ঠান বা কারখানার কর্ম পরিবেশের কারণে এমন ঘটনা ঘটছে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।

 

‘সাবধানতা, সচেতনতা এবং আইন না মানার কারণেই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে’ বলেছেন ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সিনিয়র স্টাফ অফিসার  মো. শাহজাহান শিকদার। তিনি জানান, বিএম কনটেইনার ডিপোতে মালামাল রাখার প্যাসিভ আইন অনুযায়ী সেপারেশন করে কনটেইনার রাখা হয়নি। যে কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে ক্ষয়ক্ষতি বেড়েছে।

 

কারখানার কর্ম পরিবেশ নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা সেইফটি অ্যান্ড রাইটস এর সহকারি আইন কর্মকর্তা মো. ফারুক হোসেন জানান, ২০১২ সাল থেকে ২০২২ পর্যন্ত দেশে অগ্নি দুর্ঘটনায় ৬৯২ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২০১২ সালে সর্বাধিক ১৬৭ জনের প্রাণহানি ঘটে।

 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১০ সালেই দেশে বৃহৎ কয়েকটি আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। ফেব্রুয়ারি মাসে আশুলিয়ায় একটি গার্মেন্টস কারখানায় আগুনে নিহত হন ২১ শ্রমিক। একই বছরের ৩ জুন পুরান ঢাকার নিমতলীতে বিয়ে বাড়িতে রান্নার গ্যাসের চুলা থেকে ভবনের নিচতলায় রাখা অবৈধ রাসয়নিকের গুদামে আগুন লাগলে ভবনের ভেতরে আটকা পড়ে এবং পুড়ে নিহত হন ১১৭ জন। ডিসেম্বর মাসে আশুলিয়ায় আরেকটি গার্মেন্টস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে নিহত হন ৩০ শ্রমিক।

 

জানা গেছে, ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে তাজরীন ফ্যাশনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর কর্তৃপক্ষ কারখানার দরজা জোর করে বন্ধ রাখলে ভেতরে আটকা পড়ে পুড়ে নিহত হন ১১৯ শ্রমিক। এ ঘটনায় বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ২০১৬ সালের ১০ সেপ্টেম্বর টঙ্গীতে টাম্পাকো ফয়েলস নামে একটি প্যাকেজিং কারখানায় আগুন লেগে নিহত হন ৩৫ জন। ২০১৪ সালের ৩১ অক্টোবর কারওয়ান বাজারে বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশন ভবনে দুবার অগ্নিকাণ্ড ঘটে। ২০০৯ সালের ১৩ মার্চ এবং ২০১৬ সালের ২১ আগস্ট দু’দফা বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে অভিজাত বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে। তা ছাড়া নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুডসে অগ্নিকাণ্ডে ৫৩ জন শ্রমিক মৃত্যুবরণ করেন।

 

বর্তমানে রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানাগুলোর নিরাপত্তা কিছুটা বাড়লেও অন্যান্য শিল্প কারখানায় মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে শ্রমিকদের কাজ করতে হয় বলেই অভিযোগ উঠেছে। একই সঙ্গে এসব কারখানা নিয়মনীতি মানছে কিনা- সেটি সরকারি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মাধ্যমে নজরদারি কতটা হচ্ছে, সে প্রশ্নও উঠেছে।

 

সেইফটি অ্যান্ড রাইটস এর নির্বাহী পরিচালক মো. সেকান্দার আলী মিয়া মনে করেন, রাসায়নিক দ্রব্য সমূহের ক্ষেত্রে সংরক্ষণ, গুদামজাত এবং পরিবহনের ক্ষেত্রে সঠিক নিয়ম মানা হচ্ছে না। একইভাবে বিস্ফোরক আইনের যথাযথ প্রয়োগ নেই। নিয়মনীতি না মানার কারণেই দুর্ঘটনা হচ্ছে।

 

সেকান্দার আলী বলেন, রাসায়নিক দ্রব্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ড্রাম বা পাত্রের গায়ে ম্যাটেরিয়াল সেইফটি ডাটা(এমএসডিএস) সর্তকতা সিম্বল সহ লেখা থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবে তা থাকে না। সঠিক নিয়মে গুদামজাত করতে হবে। পাশাপাশি গুদামজাত ব্যবস্থাপনা নিয়মিত সুপারভিশন নিশ্চিত করতে হবে।

 

তিনি আরও বলেন, শিল্প কারখানাগুলোতে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা খুবই দুর্বল। আগুন লাগলে সর্তকতা হিসেবে কয়েকটি জরুরী থাকা আবশ্যক। ফায়ার এলার্ম, স্মোক ডিটেক্টর, হোজরিল, ফায়ার এক্সিট প্রভৃতি। তা ছাড়া পানি সংরক্ষণাগার, বালু, ফায়ার এস্টিংগুইশার থাকবে। কিন্তু বাস্তবে এসব ব্যবস্থাপনা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল।

 

রাসায়নিক বা দাহ্য পদার্থ সংরক্ষণ, গুদামজাত বা পরিবহণের জন্য তদারকির দায়িত্বে থাকা সরকারি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের গাফিলতিতেও এসব দুর্ঘটনা এবং প্রাণহানির জন্য দায়ী বলে তিনি মনে করেন।

 

অপরদিকে শাহজাহান শিকদার বলেন, অগ্নি দুর্ঘটনা রোধে সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তি এবং প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানাগুলোতে গত ২/৩ বছরে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাপনা অনেক উন্নতি হয়েছে। যে কারণে এর সুফলও পাওয়া যাচ্ছে। পাশাপাশি অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠানেও অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা উন্নতি করতে হবে।

 

তিনি বলেন, এক কথায় ফায়ার সার্টিফিকেট নেওয়ার পর কারখানা বা প্রতিষ্ঠানে সঠিক নিয়মে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।

 

শাহজাহান শিকদার বলেন, একটি প্রতিষ্ঠানে ১৮% কর্মকর্তা-কর্মচারি অগ্নিনির্বাপণে ট্রেইনড রাখার নিয়ম। সঙ্গে যদি প্রয়োজনীয় অগ্নিনির্বাপণ ইকুইপমেন্ট থাকে তাহলে আগুন লাগার প্রাথমিক স্টেজেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কারণ আগুন লাগার পর ফায়ার ফাইটার ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে যে সময় লাগে ততক্ষণে আগুন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। আর প্রাথমিক স্টেজে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে ফায়ার সার্ভিস দ্রুত আগুন নেভাতে সক্ষম হয়। তাই ব্যক্তি এবং প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে অগ্নিনির্বাপণে উন্নতি করা জরুরি বলে তিনি মনে করেন।

Spread the love

Follow us

আর্কাইভ

March 2024
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031