ওসমানীনগরে যুবতীকে গণধর্ষণ, গ্রেফতার ৩

প্রকাশিত: ১:২৯ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৬, ২০২২

ওসমানীনগরে যুবতীকে গণধর্ষণ, গ্রেফতার ৩
৩৩৩ Views

ওসমানীনগর/প্রতিনিধি::

সিলেটের ওসমানীনগরে গন ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১৯ বছরের এক যুবতী। ধর্ষণের ঘটানায় পুলিশ ইতিমধ্যে ৩ জন কে গ্রেফতার করেছে। বুধবার  উপজেলার সিকন্দরপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পরে এ ঘটনায় ধর্ষিতা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ৫ জনকে আসামী করে ওসমানীনগর থানায় শুক্রবার বিকালে মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-০৪।

 

মামলার এজাহারের ভিত্তিতে ৩ জন আসামী গ্রেফতার করে পুলিশ।গ্রেফতারকৃতরা হলেন, ওসমানীনগর উপজেলার উমরপুর ইউনিয়নের সিকন্দরপুর মাইজগাঁও গ্রামের আহাদ মিয়ার ছেলে মো: জাহাঙ্গীর (৩২), একই গ্রামের তছর মিয়া চৌধুরীর ছেলে সাইফুর রহমান চৌধুরী রানা (৩৮) ও গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের পূর্ব ব্রাহ্মনগ্রাম গ্রামের আকলু হোসেন লুদু মিয়ার ছেলে,মো: কামাল হোসেন (৩৪)। মামলার অভিযোগে বলা হয় ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার সরাইল থানার শাহবাজপুর গ্রামের ১৯ বছর বয়সের এক যুবতী বিগত ১ বছর পূর্বে আউশকান্দিতে তার আন্টির বাড়িতে বেড়ানো শেষে নিজ বাড়ীতে যাওয়ার পথে বাসে পরিচয় হয় ওসমানীনগর উপজেলার সাদিপুর ইউনিয়নের চাতলপাড় এলাকার রুবেল নামের এক যুবকের সাথে।তখন রুবেল যুবতীর মোবাইল নম্বর নেয়। এরপর থেকে প্রায় সময় রুবেল তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর সহ আরও বিভিন্ন নম্বর থেকে উক্ত যুবতীকে ফোন করে কথাবার্তা অব্যাহত রাখে।

 

এক পর্যায়ে রুবেলের সাথে যুবতীর প্রেমের সম্পর্ক হয়। রুবেল তাকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিভিন্ন সময়ে তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করার জন্য প্রস্তাব দিত। কিন্তু যুবতী বিয়ে না করা পর্যন্ত তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করতে রাজি হয়নি। বিগত ০৩/০৮/২০২২ তারিখে আসামী রুবেল তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর থেকে যুবতীর ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারে ফোন করে বিয়ে করবে বলে জানায় এবং তাকে ওসমানীনগর থানাধীন সিকন্দরপুর গ্রামে আসতে বলে। সিকন্দরপুর গ্রামে আসামী রুবেল এর বন্ধুর বাড়িতে কাজী ডেকে বিয়ে করবে বলে জানায়। রুবেল এর কথায় যুবতী তার বাবার ব্যবসার টাকা থেকে বাবাকে না বলে নগদ ৬,০০০/-টাকা নিয়ে রুবেলের কথা মত বাড়ি থেকে রওয়ানা করে।

 

গত ০৩/০৮/২০২২ তারিখে বিকাল অনুমান ০৩.০০ ঘটিকার সময় বাস ও আটোরিক্সা যোগে রুবেলের দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী সিকন্দরপুর গ্রামে যায়।সেখানে রুবেল তার বন্ধুর বাড়ি পরিচয়ে একটি ঘরে নিয়ে যায়। উক্ত ঘরে যাওয়ার পর আরো ০২জন পুরুষ লোক আসে। রুবেল উল্লিখিত ০২জন পুরুষ লোককে রানা এবং করিম নাম ধরে কথা বলে এবং সে আসামী রানা এবং করিমের সাথে চুপি চুপি কথা বলার পর রানা ও করিম ঘর থেকে বের হয়ে যায়। রানা এবং করিম বের হয়ে যাওয়ার পর রুবেল বিবাহ সংক্রান্তে কোন কথা না বলে তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করার জন্য বলে। প্রস্তাবে রাজি না হলে রুবেল বলে এখানে তোকে কেউ বাঁচাতে পারবে না। এটা আমার বন্ধু রানার ঘর। বাহিরে রানা এবং করিম আছে, অন্য কোন লোক আসতে পারবে না। যুবতী চিৎকার করার চেষ্টা করলে সাথে সাথে রানা এবং করিম ঘরে প্রবেশ করে।

 

আসামী রুবেলের সাথে মিলে রানা ও করিম একটি রশি দিয়ে যুবতীর দুই হাত এবং তার ব্যবহৃত উড়না দিয়ে মুখ বেঁধে আসামীরা পরস্পর সহযোগীতায় যুবতীর পরনের সকল কাপড়-চোপড় খুলে ফেলে এবং তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। আসামী রুবেল যুবতীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে পরপর দুই বার ধর্ষণ করে। রুবেল ধর্ষণ করার পর আসামী রানা ও করিম হাত ও মুখ বাঁধা অবস্থায় যুবতীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করে। হাত ও মুখ বাঁধা অবস্থায় ধ্বস্তা-ধ্বস্তি ও শোরচিৎকার করার চেষ্টা করলে এক পর্যায়ে আসামী রুবেল, রানা ও করিম তাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। প্রাণ রক্ষার্থে আসামীদের কথামত ঘরের মধ্যে সে চুপ করে থাকে। এরপর থেকে আসামী রুবেল, রানা ও করিম পালাক্রমে যুবতীকে একাধিক বার তাদের ইচ্ছামত ধর্ষণ করে। ঘরে দরজা জানালা বন্ধ থাকায় যুবতী দিন রাত সময় অনুভব করতে পারেনি ।

 

ফজরের আজানের পর আসামীরা তার বাঁধন খুলে দেয়। সে ক্লান্ত হয়ে দুর্বল হয়ে পড়লে আসামী রুবেল, রানা ও করিম বলাবলি করে যে, তাদের বন্ধু জাহাঙ্গীর এবং কামালকে ডেকে এনে তাদের মাধ্যমে যুবতীকে ঘটনাস্থল থেকে সরানোর একটি ব্যবস্থা করতে হবে। এরপর আসামী রুবেল, রানা ও করিম এর বন্ধু জাহাঙ্গীর এবং কামাল ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত হয়। আসামী রুবেল যুবতীর মোবাইলটি জাহাঙ্গীর ও কামালের হাতে তুলে দিয়ে ধর্ষিতাকে ঘটনাস্থল থেকে সরানোর ব্যবস্থা করতে বলে। উক্ত মোবাইলের কভারের ভিতরে ধর্ষিতার টাকাগুলো ছিল। আসামী কামাল এবং আসামী জাহাঙ্গীর ধর্ষিতাকে বলে তারা তাকে একটি গাড়িতে তুলে দিবে সে যেন সোজা বাড়ীতে চলে যায় এবং ঘটনার বিষয়ে কাউকে কিছু না বলে।

 

 

ধর্ষিতা তার ব্যবহৃত মোবাইল এবং টাকা চাইলে আসামী কামাল এবং আসামী জাহাঙ্গীর উত্তেজিত হয়ে ধর্ষিতাকে চড়-থাপ্পর মেরে তার ০২টি কানের দুল এবং সাথে নিয়ে আসা মোবাইলের কভারের ভিতরে থাকা টাকা হতে ৫,০০০/-টাকা রেখে দিয়ে অবশিষ্ট খুচরো টাকা দিয়ে ০৪/০৮/২০২২খ্রি. রাত অনুমান ০৮.০০ ঘটিকার সময় আসামী রানার বাড়ি থেকে বের করে দেয়। এরপর ধর্ষিতা রাস্তা দিয়ে কিছুদূর পায়ে হেঁটে আসার পর একটি টমটম গাড়ি পেয়ে উক্ত গাড়িতে করে উপজেলার গোয়ালাবাজার আসে। গোয়ালাবাজার থেকে অন্য একটি টমটম গাড়ীতে উঠে শেরপুর যাওয়ার জন্য রওয়ানা করলে টমটম গাড়ির ড্রাইভার ধর্ষিতা যুবতীকে বেগমপুর রাস্তার মুখে নামিয়ে দেয়।

 

ধর্ষিতা যুবতীকে বেগমপুরে অসহায় অবস্থায় কান্না করতে থাকলে পথচারী মো: আনোয়ার আলী (৩৩) এবং আব্দুর রহিম (৩০) তার পরিচয় এবং কান্না করার কারন জিজ্ঞাসা করলে ধর্ষিতা তাদেরকে ঘটনার বিস্তারিত বলে। ঘটনা শুনে মো: আনোয়ার আলী (৩৩) এবং আব্দুর রহিম (৩০)ধর্ষিতা যুবতীকে ওসমানীনগর থানায় আসেন। ওসমানীনগর থানার ওসি এসএম মাঈন উদ্দিন সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, নির্যাতিত তরুনীর পরিক্ষার জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে প্রেরণ করা হয়েছে। ৩ ধর্ষক গ্রেফতার হয়েছে বাকিরা পলাতক থাকলেও তাদেরকে আটকে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।

Spread the love

Follow us

আর্কাইভ

March 2024
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031