ওসমানীনগরে রাস্তায় দেয়াল নির্মান, ২০ দিন ধরে গৃহবন্দি তিনটি পরিবার

প্রকাশিত: ৮:২০ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৭, ২০২২

ওসমানীনগরে রাস্তায় দেয়াল  নির্মান, ২০ দিন ধরে গৃহবন্দি তিনটি পরিবার

প্রতিনিধি/ওসমানীনগরঃঃ
সিলেটের ওসমানীনগরে শত বছরের পুরোনো বসতবাড়ির চলাচলের একমাত্র রাস্তায় প্রভাবশালী কর্তৃক পাকা দেয়াল নির্মান করায় গত ২০ দিন ধরে তিনটি পরিবারের সদস্যরা গৃহবন্দি থাকার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার দয়ামীর ইউনিয়নের শরিষপুর এলাকায় ঘটনাটি ঘটে।শরিষপুর গ্রামের প্রভাবশালী দুদু মিয়া ও লুৎফুর মিয়াসহ তাদের সহযোগিরা রাতের আধাঁরে রাস্তার উপর প্রায় ১০ ফুট উচুঁ পাকা দেয়াল নির্মাণ করে রাস্তাটি সম্পুর্নরূপে বন্ধ করে দেয়ায় তিনটি পরিবারের ৩০ জন মানুষের চলাচলে বিকল্প কোনো রাস্তা না থাকায় চরম দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন ভুক্তভোগীরা। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে গত ২ আগষ্ট ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নীলিমা রায়হানার নিকট একটি লিখিত আবেদন দেয়া হয়েছে।

 

জানা যায়, উপজেলার পারকূল মৌজার জে-এল,নং ৯৪/৯১ স্থিত শরিষপুর গ্রামস্থ বসত বাড়ীতে পূর্ব পুরুষ থেকে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন ভোক্তভোগী আব্দুল মতলিব, আব্দুল মালিক, মাওলানা আব্দুল গফুর।ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক সংলগ্ন সোয়ার গাওঁ-সরিষপুর-সৎপুর বাজার এলজিইডির রাস্তা থেকে ভোক্তভোগী পরিবারের বসতবাড়ির যানবাহনসহ চলাচলের একমাত্র রাস্তা বিদ্যমান। এলাকার বিশিষ্ট সালিশ ব্যাক্তিত্ব নূর উদ্দিন আহমদ নুনু ও আব্দুল হাই মশাহিদ দয়ামীর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান থাকালিন সময়ে সরকারী ভাবে বসতবাড়ির চলাচলের ওই রাস্তটির মাটি ভরাট ইটসলিং কাজ করানো হয়।

 

সম্প্রতি এলাকার চিহ্নিত প্রভাবশালীদেও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ইন্দনে তিনটি পরিবারের চলাচলের ওই রাস্তাটি বন্ধ করে দেয়ার পায়তারায় একের পর এক হামলা ও সাজানো মামলা ছাড়াও নানাভাবে পরিবারের সদস্যদের নাজেহাল করে আসছে প্রভাবশালী দুদু মিয়া ও লুৎফুর রহমানসহ তাদের সহযোগীরা। যার ধারাবাহিকতায় দুদু মিয়া ও তার সহযোগীরা গত ১৬ জুন রাতের আধাঁরে রাস্তার মধ্যস্থলে প্রায় ২৫ হাত জায়গার মাটি কেঠে পার্শ্ববর্তী তাদের পুকুরে ফেলে দিয়ে রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী করে তুলে। ভোক্তভোগীরা নিরিহ থাকায় দুদু ও তার সহযোগীদের এসব অত্যাচার নির্যাতন নিরবে মেনে নিয়ে কোনো রকম ওই কাটা রাস্তা দিয়ে চলাচল করে আসছিলেন।

 

 

গত ১৮ জুলাই প্রভাবশালী দুদু মিয়া ও লুৎফুর মিয়াসহ তাদের সহযোগিরা রাতের আধাঁরে ভোক্তভোগী পরিবারের বসতবাড়ি থেকে বের হওয়ার ওই রাস্তার উপর প্রায় ১০ ফুট উচুঁ পাকা দেয়াল নির্মাণ করে চলাচলের একমাত্র রাস্তাটি সম্পন্নরূপে বন্ধ করে দেয়। পরের দিন সকালে ভোক্তভোগীরা গৃহবন্দি করে রাখার কারন জানতে চাইলে দুদু মিয়াসহ তার সহযোগীরা সংঘবদ্ধ হয়ে দেশিয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে তাদের উপর হামলা চালিয়ে তিনভাইসহ পরিবারের সদস্যদের এলোপাতারি পিটিয়ে মারাত্বক ভাবে আহত করে রক্তাক্ত জখম করে।

 

 

স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য ওসমানী হাসপাতালে প্রেরন করেন। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ওসমানীনগর সার্কেল রফিকূল ইসলামের নিদের্শে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লুৎফুরসহ তার দুই সহযোগীদের আটক করে থানায় নিয়ে পরবর্তীতে রাস্তায় দেয়াল নির্মানের দোষ স্বীকার করে মুসলেকার মাধ্যমে দুইজন ও ধৃত লুৎফুর আদালতের মাধ্যমে জামিনে বেড়িয়ে ভোক্তভোগীদের শুধু গৃহবন্দি করে রাখা নয়, নিরিহ তিন ভাইকে মিথ্যা মামলায় জেল কাটাবে বলে হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছে।

 

অভিযোগকারী আব্দুল মুতলিবসহ ভোক্তভোগীরা জানান, চলাচলের কোনো রাস্তা না থাকায় আজ ২০ দিন যাবত আমরা গৃহবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছি। রাস্তা বন্ধ থাকায় বিশেষ করে আমাদের ছেলে-মেয়েরা স্কুল ও মাদ্রাসায় যেতে পারছে না। এবং পরিবারের অসুস্থ লোকজনকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে না। ছেলে-মেয়ে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হতে পারছি না। খুব বিপদে আছি আমরা দিন আনি দিন খাই। তারা প্রভাবশালী তাই তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে কেউ সাহস পায় না। আমাদেরকে গৃহবন্দির করে রাখার বিষয়ে গ্রামের একাধিক ব্যাক্তিবর্গ প্রভাবশালী মিজানুর, দুদু ও লুৎফুরদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা কোনো সদউত্তর না দিয়ে উল্টো আমাদেরকে প্রানে মারাসহ জানমালের ক্ষতি সাধনের হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছে। তাদের ভয়ে আমরা গৃহবন্দি হয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।

 

 

এমতাবস্থায় গৃহবন্দি মুক্ত হতে বসতবাড়ির চলাচলের একমাত্র রাস্তায় প্রভাবশালীর জোরপূর্বক নির্মিত দেয়ালটি অপসারন করে চলাচলের রাস্তা সুগম করতে প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানচ্ছি।থানা পুলিশের কাছে দোষ স্বীকার করে মুছলেখা প্রদান করলেও সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত দুদু মিয়া বলেন, আমি কারো রাস্তায় দেয়াল নির্মাণ করিনি। প্রতিপক্ষ অযথা আমাদেরকে হয়রানি করছে।দয়ামীর ইউপি চেয়ারম্যান তাজ মো: ফখর উদ্দিন বলেন, ইউএনও সাহেবের মাধ্যমে বিষয়টি আমি জেনেছি। দু-পক্ষকে ডেকে ইউএনও সাহেব বিষয়টির মিমাংসার চেষ্টা করছেন।

 

ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নীলিমা রায়হানা বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি বিষয়টি তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ওসমানীনগর (সার্কেল) মো: রফিকূল ইসলাম বলেন, রাস্তায় পাকা দেয়াল নির্মাণ করে তিনটি পরিবারকে গৃহবন্দি করে রাখার ঘঠনার খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে জড়িত তিনজনকে আটক করে থানায় নিয়ে এসেছে। আটককৃতরা দোষ স্বীকার করে ভবিষ্যৎতে এমন ঘটনা করবে না বলে পুলিশের কাছে মুছলেকা দিয়েছে। এর পরও যদি ওরা রাস্তার দেয়াল অপসারন না করে তাহলে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Spread the love