সিলেট ১লা এপ্রিল, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ই চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৫:০৮ অপরাহ্ণ, মার্চ ১২, ২০২০
লন্ডন বাংলা ডেস্কঃঃ
থানা-পুলিশের সঙ্গে কাজ করতে গেলে ঘুষ লাগবেই- এই ধারণা এখন সর্বত্র প্রতিষ্ঠিত বলা যায়। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের হয়রানির শেষ নেই। এবার দেখা গেল- খোদ পুলিশ কর্মকর্তাই থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার জন্য ঘুষের প্রস্তুতি নিয়ে পাঠিয়েছেন আরেকজনকে।
দিন ১৫ আগে সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক আনারুল ইসলামকে (৩০) মামলা দিয়েছিলেন ট্রাফিক সার্জেন্ট। জব্দ করা হয়েছিল রিকশার ব্লু-বুক। কিন্তু আনারুল যখন ট্রাফিক কার্যালয়ে জরিমানার টাকা জমা দিতে গেলেন, তখন সেখানে তার ব্লু-বুকটি খুঁজে পাওয়া গেল না।
তাই ট্রাফিক সার্জেন্ট তোহিদুল ইসলাম তাকে থানায় গিয়ে একটি হারানোর সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে পরামর্শ দিলেন।সেই সঙ্গে থানায় জিডি করার ‘খরচ’ হিসেবে দিলেন ২০০ টাকা। যাতায়াতের জন্য রিকশার ভাড়াও দিলেন ২০ টাকা। বুধবার দুপুর ১২টার দিকে রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) ট্রাফিক কার্যালয়ে এমন দৃশ্য দেখা যায়।
রিকশাচালক আনারুল ইসলামের বাড়ি নগরীর ছোটবনগ্রাম এলাকায়। রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) থেকে তার রিকশার দেয়া নিবন্ধন নম্বর- রাসিক-খ-৪৭৯৮।ট্রাফিক কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, একটি কক্ষে বসে মামলার জরিমানার টাকা নিয়ে জব্দ থাকা কাগজপত্র ফেরত দিচ্ছিলেন পুলিশ কনস্টেবল ওবায়দুল ইসলাম। জানালার এপার থেকে কাগজ বুঝে নিচ্ছিলেন চালকরা।
কিছুক্ষণ পর আনারুল ইসলাম জরিমানার টাকা দিলেন। চাইলেন নিজের ব্লু-বুক। কিন্তু অনেক খুঁজেও ওবায়দুল ইসলাম ব্লু-বুক খুঁজে পেলেন না। তাই ব্লু-বুক রাস্তায় হারিয়ে গেছে মর্মে তিনি থানায় একটি জিডি করার জন্য আনারুলকে পরামর্শ দিলেন। বললেন, জিডি করে তার কপি আবার ট্রাফিক কার্যালয়ে আনতে হবে। জিডির কপিতে ট্রাফিক পুলিশের ক্লিয়ারেন্স নিতে হবে। তারপর নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে সিটি করপোরেশনে আবেদন করলে নতুন ব্লু-বুক দেয়া হবে।
আনারুলের সঙ্গে ছিলেন তার বোন। এতসব প্রক্রিয়ার কথা শুনে তিনি বললেন, এসব করতে পারব না। রাস্তায় একটু ত্রুটি পেলেই মামলা দেন, এখন ব্লু-বুকও দিতে হবে। এ কথা শুনে কনস্টেবল ওবায়দুল সার্জেন্ট তোহিদুল ইসলামকে ডেকে আনলেন। তিনিই সড়কে মামলাটি দিয়েছিলেন। তোহিদুল এসেও একই পরামর্শ দিলেন। এবার আনারুলের বোন কিছু বলতে চাইলেই তাকে ধমক দেয়া হলো। এই নারী এবার বললেন, ধমক দিলেই হবে না। আমারও কিছু বলার অধিকার আছে। সার্জেন্ট এবার নমনীয় হলেন।
আনারুলের বোন বললেন, এখন থানায় জিডি করতে গেলেই তো পুলিশ ৫০০ টাকা চাইবে। নগর ভবনে পাঁচ দিন লাইনে দাঁড়িয়ে ব্লু-বুকটি তোলা হয়েছিল। এখন আবার এসব হয়রানি হতে হবে কেন? সার্জেন্ট বললেন, থানায় ফোন করে দিচ্ছি। জিডি করতে কোনো টাকা চাইবে না।
কিন্তু নাছোড়বান্দা আনারুলের বোন। বললেন, ফোন করে দিলে হবে না। তাহলে সঙ্গে গিয়ে জিডি করিয়ে দিতে হবে। সার্জেন্ট পকেটে হাত দিলেন। ২২০ টাকা বের করে দিয়ে ওই নারীকে বললেন, ২০০ টাকায় জিডি করবেন। আর ২০ টাকা রিকশাভাড়া। টাকা নিয়ে আনারুল ও তার বোন থানায় গেলেন।
কিছুক্ষণ পর নগরীর রাজপাড়া থানায় গিয়ে দেখা যায়, দুই ভাই-বোন বসে আছেন। শাহজাহান আলী নামে একজন কনস্টেবল জিডি লিখছেন। লেখা শেষ হলে একজন কর্তব্যরত অফিসার জিডি গ্রহণ করলেন। তখন অবশ্য দুই ভাই-বোনের কাছে টাকা চাওয়া হয়নি। টাকা ছাড়াই তারা জিডি করতে পেরেছেন। থানায় ডিউটি অফিসারের কক্ষে একটি ফেস্টুনে লেখা আছে ‘জিডি বা মামলা করতে কোনো টাকা লাগে না।
রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাদত হোসেন খান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমি যে থানায় থাকি সেখানে জিডি বা মামলা করার জন্য টাকা নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক এ ব্যাপারে খুব কড়াকড়ি করা হয়। জিডি বা মামলার জন্য কারও টাকা নেয়ার সাহস নেই।
জিডি করার পর থানা থেকে বের হওয়ার সময় আনারুলের বোন জানালেন, তিনি সিটি করপোরেশনেই চাকরি করেন। সেখানে রিকশা-অটোরিকশার জন্য ব্লু-বুক ও ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য চালকদের হয়রানি হয়, এটা তিনি দেখেছেন। আবার জিডির জন্য অতীতে তাকে টাকা দিতে হয়েছে।
তিনি বলেন, পান থেকে চুন খসলেই ট্রাফিক রাস্তায় মামলা দেয়। টাকাও আদায় করে। আবার তাদের হেফাজত থেকেই জব্দ করা কাগজপত্র হারিয়ে যাবে এটা মেনে নেয়া যায় না। সে জন্য ট্রাফিক কার্যালয়ে চেঁচামেচি করছিলেন। সার্জেন্ট তাকে জিডি করার জন্যই টাকা দিয়েছেন। তবে থানায় টাকা লাগেনি।
জানতে চাইলে সার্জেন্ট তোহিদুল ইসলাম ২২০ টাকা দেয়ার কথা স্বীকার করেছেন। থানায় জিডি করতে টাকা লাগে কি না জানতে চাইলে তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, আসলে টাকাটা ওইভাবে দেয়া হয়নি। এখানে-ওখানে যেতে খরচ হবে। সে জন্যই দেয়া হয়েছে। আর থানায় ফোন করে দিয়েছিলাম। টাকা নেয়ার তো কথা না।
M | T | W | T | F | S | S |
---|---|---|---|---|---|---|
1 | 2 | |||||
3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8 | 9 |
10 | 11 | 12 | 13 | 14 | 15 | 16 |
17 | 18 | 19 | 20 | 21 | 22 | 23 |
24 | 25 | 26 | 27 | 28 | 29 | 30 |