কমলগঞ্জে লাঘাটা নদী খননে ধীরগতি

প্রকাশিত: ৬:৩০ অপরাহ্ণ, মার্চ ১২, ২০২০

কমলগঞ্জে লাঘাটা নদী খননে ধীরগতি

 

প্রতিনিধি/কমলগঞ্জঃঃ

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ ও রাজনগর উপজেলার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত লাঘাটা নদীর খনন কাজ চলছে ধীরগতিতে। খনন কাজে নদীর পেটে যাচ্ছে কৃষকের ভোগদখলকৃত ও রেকর্ডীয় জমি। নদী খননে সেচ সমস্যায় শতাধিক কৃষক বোরো আবাদ বঞ্চিত হচ্ছেন। বর্ষার পূর্বে নদী খনন সম্পন্ন না হলে কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি গুণতে হবে বলে অভিযোগ উঠেছে। বুধবার সন্ধ্যায় লাঘাটা নদীর কেওলার হাওর এলাকা পরিদর্শনকালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুই প্রতিনিধির কাছে কৃষকরা এসব দাবি তুলে ধরেন।

 

মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গত বছরে লাঘাটা নদী খননের জন্য সার্ভে কাজ সম্পন্ন হয়। তবে নানা জটিলতায় খনন কাজ শুরু হতে কিছুটা বিলম্ব হলেও গত বছরের ১১ ডিসেম্বর নদী খনন কাজ শুরু হয়। দু’টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়ন থেকে কমলগঞ্জ উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের লাঘাটা নদীর উৎসস্থল পর্যন্ত ২৪ কি.মি. খনন কাজ চলছে।

 

দু’উপজেলায় খননের জন্য ১১ কোটি ৯৩ লাখ টাকা ব্যয় হচ্ছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মোহাম্মদ ইউনুস এন্ড ব্রাদার্স (প্রা:) লিমিটেড কমলগঞ্জ উপজেলা অংশে খনন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। কমলগঞ্জে অংশে নদী খননের প্রাক্কলিত মূল্য ৬ কোটি ৩৪ লাখ ৩ হাজার ৮০৭ টাকা। এই কাজ শেষ হওয়ার কথা চলতি বছরের ৩০ নভেম্বর।

 

তবে কাজের মান ও নানা সমস্যার বিষয়ে ওয়ার্কাস পার্টির নেতা সিকান্দর আলীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মুখলেসুর রহমান ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. গোলাম কিবরিয়া লাঘাটা নদীর কেওলার হাওর এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময়ে সিকান্দর আলীসহ প্রায় অর্ধশতাধিক কৃষক তাদের সমস্যার কথা তুলে ধরেন।

 

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বন্যা ও জলাবদ্ধতা নিরসনে লাঘাটা নদীর উপজেলার শমশেরনগর ও পতনঊষার ইউনিয়ন অংশে খনন কাজ চলছে। তবে নদী খননে কৃষকদের শতাধিক কিয়ার ভোগদখলকৃত এসএ রেকর্ডীয় জমি নদীর বাঁধের জন্য গিলে নিচ্ছে। তাছাড়া নদী খননের জন্য সেচ সুবিধার অভাবে এবছর কৃষকদের বৃহদ একটি অংশ বোরো আবাদ বঞ্চিত রয়েছেন। কৃষকরা একদিকে নদীর পেটে জমি হারাচ্ছেন, অন্যদিকে বোরো আবাদ বঞ্চিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে দাবি করছেন।

 

উপজেলার পতনঊষারের কৃষক মফিজ মিয়া, মসুদ মিয়া, ধূপাটিলা গ্রামের কৃষক আক্তার মিয়া, ফারুক মিয়া, শওকত মিয়া, কেছুলোটি গ্রামের আকলুছ মিয়া বলেন, লাঘাটা নদী খনন যেভাবে ধীর গতিতে চলছে তাতে বর্ষার আগে সম্পন্ন না হলে কেওলার হাওর এলাকায় বর্ষার পানিতে নদীর বাঁধ ধ্বসে আবার নদী ভরাট হয়ে পড়বে। দ্রুত গতিতে নদী খনন প্রয়োজন বলে তারা দাবি করেন।

 

তারা আরও বলেন, এবছর নদী খননের জন্য সেচ সমস্যার কারনে আমরা বোরো আবাদও করতে পারছি না। ফলে সবদিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হচ্ছে।

 

বাংলাদেশ ওয়ার্কাস পার্টির নেতা কমরেড সিকান্দর আলী, হাওর ও নদী রক্ষা আঞ্চলিক কমিটির সদস্য সচিব তোয়াবুর রহমান বলেন, নদী খনন আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। তাই সুষ্ঠুভাবে ও বর্ষার পূর্বে নদীর খনন কাজ সম্পন্ন করা প্রয়োজন। বিভিন্ন স্থানে কিছু ত্রুটি বিচ্যুতি ও নালা দিয়ে পানি নিস্কাশনের প্রয়োজনীয় পাইপ বসিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে বাঁধ ড্রেসিং সম্পন্ন করতে না পারলে আবারও ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে।

 

এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রনেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী বলেন, বর্তমানে নতুন ঠিকাদারের মাধ্যমে দ্রুত গতিতে কাজ চলছে। আগামী নভেম্বর পর্যন্ত কাজের সময় রয়েছে। তবে যথা সময়ের মধ্যেই সুষ্ঠভাবে কাজ সম্পন্ন হবে। তিনি আরও বলেন, নদী খনন করতে গেলে বাঁধের মাটি ফেলতে হবে। স্বাভাবিকভাবে সে মাটি পার্শ্ববর্তী জমিতে ফেলা হবে। বৃহত্তর স্বার্থে কৃষকদের সেটুকু ক্ষতি মেনে নেয়া উচিত। বাঁধের মাটি ড্রেসিং করে দেয়া হবে। তবে নদীতে পানি থাকার কারনে খননেও কিছুটা সমস্যা হয়েছে।

Spread the love