সিলেট ১১ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৫:৩১ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২, ২০২৩
লন্ডন বাংলা ডেস্কঃঃ
আগের বছরগুলোর মতো এবারও রোজায় জমে উঠেছে অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বাঙালি অধ্যুষিত ল্যাকেম্বার ইফতারির বাজার। প্রায় এক যুগ আগে শুরু হওয়া এই ইফতারির বাজার ঘিরে বাংলাদেশি তো বটেই, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশের মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ সারা মাসের উৎসবে মিলিত হন।
সিডনির ল্যাকেম্বায় বিকেল থেকেই ইফতারের এক অন্য রকম আয়োজন শুরু হয়। ভোজনরসিকদের বিভিন্ন দেশীয় খাবার চেখে দেখা চলে শেষ রাত পর্যন্ত। বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির দেশ অস্ট্রেলিয়ায় বিশেষ করে সিডনিতে নানা দেশের মানুষের বাস। ফলে এখানে বসে বিভিন্ন দেশের ইফতারির পসরা। পরিবার ও বন্ধুদের নিয়ে বাংলাদেশিরা জড়ো হন এই ইফতারে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় ল্যাকেম্বার হ্যালডন স্ট্রিট থেকে রেলওয়ে প্যারেড পর্যন্ত এলাকাজুড়ে সিডনির সবচেয়ে বড় আর বাহারি ইফতার আয়োজনের দেখা মিলল। এখানে একদিকে যেমন অনেক বেশি বাংলাদেশির বাস, অন্যদিকে সবচেয়ে বেশি মুসলিম ও বহুজাতিক প্রবাসীদেরও বসবাস। সব দিক মিলিয়ে সিডনির ল্যাকেম্বা ইফতারির বাজার সবচেয়ে জনপ্রিয়, প্রাণবন্ত ও সাংস্কৃতিকভাবে বৈচিত্র্যময়। সূর্যাস্তের পর থেকে প্রায় রাত তিনটা পর্যন্ত এখানে থাকে নানা রঙের মানুষের ভিড়।
ল্যাকেম্বার ফুটপাত থেকে শুরু করে নামীদামি রেস্তোরাঁগুলোয় থাকে ইফতারের আয়োজন।
জনশ্রুতি রয়েছে, প্রায় এক যুগ আগে মাত্র একটি দোকানে বারবিকিউ বিক্রির মাধ্যমে শুরু হয়েছিল ল্যাকেম্বার হ্যালডন স্ট্রিট আর রেলওয়ে প্যারেডের ইফতারির বাজার। তারপর তুর্কির সুস্বাদু ও ঐতিহ্যবাহী কুনাফির সঙ্গে উটের বার্গার জনপ্রিয় করে তোলে এই ইফতারির বাজার। এখন শতাধিক স্থানীয় ব্যবসায়ী নিজেদের ব্যবসাকে সন্ধ্যায় পরিবর্তন করেন ইফতারির বাজারে। আর বহু অস্ট্রেলীয়র মতে, দেশটিতে প্রাচীন ঐতিহ্য উদ্যাপনের সেরা জায়গা হলো এই ইফতারির বাজার।
বাংলাদেশের পাশাপাশি লেবানন, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার, সিরিয়া, পাকিস্তান, কোকো দ্বীপ, আরবসহ আরও অনেক দেশের খাবারের সমারোহ মিলে স্থানীয় এই ইফতারির বাজার একটি বৈশ্বিক রূপ ধারণ করেছে। আর ইফতারির বাজারের এখন এতই নামডাক যে মুসলমানদের পাশাপাশি অন্য ধর্মাবলম্বীরাও ইফতারির স্বাদ পেতে ভিড় করেন ল্যাকেম্বায়।
ইফতারির বাজারে বেশির ভাগ বাংলাদেশিই আসেন পরিবার আর আপনজনদের নিয়ে। প্রবাসী বাংলাদেশি ওয়েলি পার্কের বাসিন্দা এনাম আহমেদ বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে বাংলাদেশে আমাদের ঘরে মা-চাচিদের ইফতারি বানাতে দেখে বড় হয়েছি। যদিও এখন এই চিত্রটা পাল্টে গেছে। এখন ইফতারির বাজার আমাদের সংস্কৃতিতে আলাদা একটা জায়গা করে নিয়েছে।’ এনাম আহমেদ বলছিলেন, আপনি যদি বাংলাদেশে নিয়মিত ইফতারি কিনতে বাইরে গিয়ে থাকেন, তাহলে ল্যাকেম্বায় এসে আপনি ভুলেই যেতে পারেন আপনি বিদেশে আছেন। পরিবার নিয়ে পরিচিত খাবার খেয়ে একটু সময় পার করতে পারার একটা আনন্দও পাওয়া যায় এখানকার ইফতারির বাজারে। তবে পুরান ঢাকার মতোই এখানেও প্রচণ্ড ভিড়, এই কথা মাথায় রেখে আসা ভালো।
বাঙালি খাবারের মধ্যে অতি পরিচিত পেঁয়াজু, ছোলা, বেগুনি, গুঘনি, আলুর চপ, জালিকাবাব, হালিমসহ থাকে বিভিন্ন রকম বেসনে ভাজা খাবার, চিকেন ফ্রাই, জিলাপি, বিভিন্ন রকম মিষ্টিসহ রকমারি ইফতারির সমারোহ। অন্যান্য দেশের জনপ্রিয় খাবারের মধ্যে রয়েছে রুটির সঙ্গে ডাল ভুনা, মালয়েশিয়ার মুর্তাবাক আর হালিম, পাকিস্তানের ‘তরকারির রাজা’ চার পদের মাংসের তরকারি, উটের বার্গার, গাজরের জুস, মধ্যপ্রাচ্যের পনিরের মিষ্টান্ন আর তুর্কিদের ঐতিহ্যবাহী বাহারি খাবার আর এর বিচিত্র পরিবেশন।
সিডনির ল্যাকেম্বার সুপারমার্কেট আল্ডির ব্যবস্থাপক বোরহান খান বলছিলেন, ‘সিডনিতে আর কোথাও এত দেশের খাবার এক জায়গায় উপভোগ করার সুযোগ আছে বলে আমার জানা নেই। আর এই যে একটা আমেজ, একটা উৎসব উৎসব ব্যাপার, এটা বাংলাদেশ থেকে এসে প্রথম প্রথম মিস করতাম, ল্যাকেম্বায় এলে সেই অভাব অনেকটাই পূরণ হয়ে যায়।
ছোট দুই ছেলেকে বাংলাদেশি ইফতারির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে ল্যাকেম্বার ইফতারির বাজারে এসেছিলেন প্রবাসী বাংলাদেশি মাসুমা মৌ। বললেন, ‘আমার মা সব সময় আমাদের জন্য ইফতারি বানাতেন। সেই দুপুর পেরোলেই চলত ইফতারি তৈরির প্রস্তুতি। বিদেশের কর্মব্যস্ত সময়ের মধ্যে আমার সন্তানদের বাঙালি মায়ের মতো করে ইফতারি বানিয়ে দেওয়ার সুযোগ হয়ে ওঠে না সব সময়।
যেটুকু সময় পাই, খুব বেশি আয়োজন করা সম্ভব হয় না। তাই ছেলেদের নিয়ে ইফতারির বাজারে এসেছি ওদের খাওয়াতে ও দেখাতে যে কত ধরনের ইফতারির পদ হয়। এর মাধ্যমে আমাদের বাংলাদেশি ঐতিহ্যের সঙ্গে নতুন প্রজন্মরা পরিচিত হয়ে থাকল।
সূত্র/প্রথম আলো